ব্লেম গেমঃ ‘পরিবর্তন’ কই?

দেশের প্রধান দুই দলের দুই রহস্যময় কান্ডারী; উনারাই আশা-ভরসা। ছবিঃ বিডিনিউজ২৪ডটকম

আজ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের বর্তমান সব সমস্যার জন্য বিগত চার দলীয় জোট সরকারকে দায়ী করে বললেন, “জানি বর্তমানে অনেক সমস্যা রয়েছে। তবে, এর একটিও আমাদের সৃষ্টি করা নয়, আমরা উত্তরাধিকারসূত্রে এগুলো পেয়েছি। তারপরও আমরা সব সমস্যা সমাধানে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা বসে নেই।”

আর কিছুদিন আগে বিএনপি এই টাইপের কথা বলেছে হাসিনার সরকার নিয়ে। কিছুদিন পরে অন্য এক সরকার এসে বলবে আগেরজন কিছুই করেনি।

আসলে কাজ করছে কে তাহলে?

আজকে কি হাসিনা এইভাবে খোঁচা না মারলে রাতে ঘুমাতে পারতেন না? খুব কি লস হয়ে যেত তার!

কালই খালেদা খেপে গিয়ে একটা কিছু বলবে, অথবা ফখরুল বা সিনিঅর কেউ কড়া জবাব দেবে। চলছে, চলবে।

দিনের পর দিন দুই নেত্রী যেভাবে একে অপরকে ব্লেম দিয়ে যাচ্ছে, উন্নয়নের চেয়ে ধংসই বেশি হচ্ছে।

মাঝখানে চিপায় পড়ে সাধারন মানুষের সমস্যা তো মিটছেই না, বরং বাড়ছে। ক্ষমতাবানদের আবার এইসব হালকা ঝামেলা গায়ে লাগেনা। তো, চলছেই।

এতে করে বাড়ছে দুরত্ব–সরকার ও সাধারন মানুষের মধ্যে, যারা ক্ষমতার রাজনীতি করেনা, কিন্তু রাজনীতিবিদদের দিকে তাকিয়ে থাকে পরিবর্তন দেখার আশায়। সে আশায় প্রতিনিয়ত বালি দিচ্ছেন আমাদের মহিয়সী দুই নেত্রী।

কে থামাবে তাদের, প্রথমত প্রধানমন্ত্রীকে, যিনি রাষ্ট্রের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী?

থামতে তাদের হবেই, কেননা পাবলিকের ভোটে নির্বাচিত হয়ে, তাদের চিন্তায় যাদের মগ্ন থাকার কথা, সে কাজ বাদ দিয়ে তারা কিনা একান্ত ব্যক্তিগত কারনে অনেক সময় এবং শ্রম দেন।

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে উনি এখানে সেখানে যা বলেন সেসব বাকিরা মুখস্থ বুলির মত আওড়ে যান সবখানে। তাদের চিন্তাভাবনা, কাজকর্মেও তার বিরূপ প্রভাব ফেলে। তাতে কি এই উন্নয়নশীল্ল দেশের ঝামেলা কমে, নাকি বাড়ে?

রাজনীতিকদের মধ্যে ক্ষমতা খাটানোর প্রবনতাটা বাড়িয়েই চলে অসহিষ্ণুতা, যার একটা বড় প্রভাব পড়ে সাধারনের জীবনে।

পরিবর্তনের আশা দিয়ে (আরো একজনের ডায়লগের সাথে মিল আছে) দুই-তৃতীয়াংশ ভোট পেয়ে ক্ষমতায় এসে কতটা আশা পূরণ করেছেন তিনি?

পরিবর্তনের প্রথম যেই ধাপ, রাজনৈতিক সহিষ্ণুতা, এটা আমাদের রাজনীতিকদের চরিত্রের মধ্যে একদমই অনুপস্থিত (মনে হয় তারা ভাবেন মাথা ঠান্ডা করলে প্রেস্টিজ কমে যাবে, নিজেকে পাবলিকের মত মুরগি মনে হতে পারে)।

কিন্তু আমার মনে হয় আমাদের দেশপ্রেমিক প্রধানমন্ত্রীর জন্য সেটা খুব কঠিন কিছু নয়। দেশের প্রতি তার অগাধ ভালোবাসা, পিতার আদর্শের অনুসারি, উচ্চকাংখাহীন, আরো কতো কি গুনের অধিকারী এই নেতা কেন এখনো একটা বড় পরিবর্তন দেখাতে পারলেন না? কেন তিনি বিএনপি-কে কোন শর্ত ছাড়া ডাকেন না জাতীয় ঐক্যের জন্যে? কেন তিনি তার মহাজোটের নেতাদের কথা ধুলায় তুচ্ছ করেন?

কেন তিনি নেতা-মন্ত্রীদের কথা কম বলতে বলে নিজেই প্যাঁচাল পারেন?

নিজের সমালোচনা সহ্য করতে না পেরে সমালোচককে কেন তিনি প্রত্যাঘাত করেন? তাহলে উনার বিশেষত্ব কি?

কেন তিনি এখনো তার ও তার সরকারের বিরুদ্ধে উঠা দেশ-বিদেশের সব অভিযোগ এক বাক্যে খারিজ করে দেন?

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, দুই বছর নয় মাস কেটেছে, খুব কম দিন নয়। আপনি সেদিনও সংসদে দাঁড়িয়ে আরো কিছু সময় চাইলেন।

কিন্তু তারপরেও সরকারের প্রধান স্তম্ভের যদি সব সমস্যার দায়ভার এড়াতে দোষারোপ করেই দিন দিন পার করতে হয় তবে তা দুঃখজনক।

প্রত্যেক সরকার এসে নতুন করে নতুন বাংলাদেশ গড়তে চাইলে তো ভাই প্রবলেম…এতো অল্প সময়ে মনে হয় আপনাদের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনাগুলো কার্যকরী না।


Posted

in

by

Comments

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

bn_BDবাংলা
Powered by TranslatePress