ধান্দাবাজ ব্যবসায়িরা যে দেশেই থাকুক তাদের কাজ হইলো গিয়া যেকোন উপায়ে তাদের উদ্দেশ্য হাসিল করা, আর সেই কাজে তাদের যারা সাহায্য করে তারা হইলো সরকারি কমিশন এজেন্টরা (দালাল)।
যেমন ধরেন ভারত/বাংলাদেশের সরকারের কোন এক পর্যায় থাইকা বুদ্ধি আসলো একটা বড় সাইজের বিদ্যুৎ কেন্দ্র বানাইতে হবে যাতে ছোট-ছোট অনেকগুলা বানাইতে না হয়। ভালো কথা। শেখ হাসিনা যখন ২০১০ সালের জানুয়ারিতে দিল্লী গেলেন, তখন কোন এক পক্ষ এই প্রস্তাবটা দিছিল যে ১টা ১৩০০ মেগাওয়াট কেন্দ্র বানাইতে হইবো, আমদানী করা কয়লা দিয়া, যেহেতু আমাগো মাটির নিচে গ্যাসের অভাব। তাও ভালো কথা।
মাগার যখন জায়গার কথা মাথায় আইলো, আমাগো কুশিক্ষিত সরকারি গা(আ)মলারা বুদ্ধি দিল বাগেরহাটে বানানো দরকার, মংলা বন্দরের আশেপাশে, যাতে করে কয়লা আনতে ট্যাকা কম খরচ হয়।
সমস্যাটা হইলো গিয়া, এই কেন্দ্রটা হইতেছে সুন্দরবনের এক্কেরে কাছে, মানে ১৫ কিলোমিটারের মধ্যে, আর পশুর নদীর পাড়ে। আর কয়লা পোড়াইলে যে পরিমানে গুড়া বাতাসে উড়বে আর বায়ু ও পানি দূষনের পরিমাণ এত বেশি হবে যে, দীর্ঘমেয়াদে সুন্দরবনের গাছপালা, ঘাস, নদীর পানি, মাছ নিশ্চিতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর এলাকার মানুষগুলারে যে তাদের জায়গা বেইচা ছাইড়া যাইতে হবে সেটার কথা আর কি বলবো?
এইসব ক্ষতির কোন ভাগ ভারত সরকার নিবেনা, কিন্তু ওরা কয়লা আমদানী করবে যা আমাদের বড়পুকুরিয়ার কয়লার চেয়ে নিম্নমানের, কেন্দ্রটি স্থাপন করবে আবার চালাবেও তারা।
এদিকে যখন বাগেরহাটের রামপাল এলাকার মানুষেরা ও শিক্ষিত-সচেতন কিছু মানুষ এর প্রতিবাদ করছে, সারা দেশের বাকি মানুষগুলো যারা সুন্দরবনেরে সপ্তাশ্চর্যের একটা বানাইতে লাফাইসে বছরখানেক তারা মুখে কুলুপ দিসে। কেননা তারা সরকারি লোকদের কথা বেশি বিশ্বাস করে। সরকার বলসে তারা এমন প্রযুক্তি ব্যবহার করবে যে, সুন্দরবনের কিছু হবে না!!!
আমি কই কি, আমরা এইরকম মফিজ ক্যান? আগে শুনতাম দেশের গরীব-অশিক্ষিত মানুষগুলাই খালি বোকাচোদা। কিন্তু যত দিন যাইতেছে দেখাতাছি যে বিশ্ববিদ্যালয় পাশ করা, বড় চাকরী করা পাবলিকও কত বড় গাধা হইতে পারে। এরা নিজের শরীরের ও হাতে গোনা দুই-তিনটা লোকের কিছু বিষয় ছাড়া আর কিছু নিয়া চিন্তিত না। কেননা তারা মনে করে এইটা সরানো সম্ভব না, কারন সরকার মানে রাজা স্বয়ং এই প্রকল্পে ইচ্ছা প্রকাশ করছে, অথবা তারা জানেই না এই প্রকল্প আসলে ক্যামনে আমাগো সুন্দরবনের বারোটা বাজাইতে যাইতেছে।
নইলে এত কথা হচ্ছে, এত লেখা লিখতেছে পরিবেশবাদীরা, এত সমালোচনা হচ্ছে, কই দেখিনা তো সেইগুলা পইড়া, বুইঝা নিজেরা আলাপ করা বা নিজেরাও অন্তত লেখার মাধ্যমে প্রতিবাদ করতে!
আবার দ্যাখেন, সরকার হাই কোর্টরে মুরগী বানাইয়া রাখসে। এই কেন্দ্রের ব্যাপারে গত বছর কোর্ট একটা আদেশ দিছিল, কাজ-কাম বন্ধ রাখার লাইগা। কিন্তু সরকারের প্রধান আইন কর্মকর্তা সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে হাইকোর্টের সেই আদেশ আপাতত উঠায়ে নিয়ে কইলো এবং করলো একটা কোম্পানী করার লাইগা যারা এই প্রকল্পটা করবে (যেখানেই হোক)।
কিন্তু এই ফাঁকে পিডিবি’র লোকজন জমি অধিগ্রহন করা শুরু কইরা দিলো, যেইডা বেআইনী। সেইডা পারতেছে কারন এলাকাটা একজন সরকারি এমপি’র ও তার জামাই খুলনার মেয়র, একজন প্রাক্তন আওয়ামী লীগের এমপি। তাইলে আর লাগে কি!
এদিকে সরকারও জমি নেওয়ার লাইগা ট্যাকা বরাদ্দ দিছে! বাহ!! কি ফুর্তি!!!
এইবার বলেন এর পেছনে কি আছে? এই প্রকল্পে কত মধু আছে? পাবলিকের লাইগা কতটুকু, আর পরিবেশের লাইগা কতটুকু আর সরকারি দালালগো লাইগা কতটুকু?
শেখ হাসিনা ও তার পরিবেশ মন্ত্রী যখন জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদি ইত্যাদি নিয়া বড় বড় ডায়লগ মাইরা বেড়াইতেছেন, আরেকদিকে “বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য দায়ি” একটা দেশের লগে হাত মিলাইয়া পরিবেশের বারোটা বাজাইতে যাইতেছে। তাও আবার সুন্দরবনের মত একটা প্রাকৃতিক সম্পদ নষ্ট কইরা!
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগইন করতে হবে।