শান্তি চাইলে ন্যায়বিচারের বিকল্প নেই

যদিও আমি শিওর না আমার বিচার-বুদ্ধি বা আস্পর্ধা হয়েছে কিনা এরকম একটি বিষয়ে কিছু বলার, তথাপি বেয়াদপিটা করলাম।

দেখছি আমাদের দেশে কাগুজে আইন-কানুন ও সংবিধান না মেনে চলাটা একটা রেওয়াজ। ১৯৭১ থেকে ২০১২: আইনের শাসন, সামাজিক ন্যায়বিচার ও মতামত প্রদানের অধিকার কি সর্বক্ষেত্রে প্রতিষ্টিত হয়েছে?

নাহ। তবে, হচ্ছে, প্রক্রিয়া চলছে। ধীরে, ধীরে। হবে কোন একদিন। ধীরে, ধীরে।

সার্বজনীন “ষড়রিপু” ও কিছু বিশেষ প্রকারের “একান্তই দেশীয় অনুঘটকে”র কারনে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারি থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী, ছোট-বড় ব্যবসায়ি, সেবাখাতে (শিক্ষা-স্বাস্থ্য ও অন্যান্য) পেশাজীবী, কর্পোরেট চাকুরিজীবী, সিনেমা-টিভি-রেডিও-পত্রিকা-বিজ্ঞাপনে জড়িতরা, খন্ডকালীন চাকুরিজীবী, নিম্ন-আয়ের মানুষ, বেকার ও শিক্ষার্থীদের অনেকেই সবসময়, কেউ কেউ আবার মাঝে মাঝে, নানানভাবে নানা উদ্দেশ্যসাধনের কারনে দায়িত্ব ও আইন-কানুন পালন করছে না। এদের মধ্যে একটা বড় অংশ আবার নিছক মুদ্রাদোষের কারনেও এ কাজ করছে।

ফলে বর্তমান সময়ের রাষ্ট্র-ব্যবস্থায় ও সমাজে অস্থিরতা, অব্যবস্থাপনা, অনৈতিক ও অমানবিক কর্মকান্ড বেড়েই চলেছে এবং তা জনগন এবং খোদ রাষ্ট্রীয় উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদেরও শান্তি দিচ্ছেনা। ক্রোধে উন্মত্ত ও পাশাপাশি হতাশ মানুষের সংখ্যা বাড়ছে।

প্রশ্ন হলো, ক্ষমতাবান, প্রভাবশালী ও দরকারি মানুষগুলো কি তাদের যার যার দায়িত্ব পালন করছে? আমার দৃষ্টিতে বেশিরভাগই করছেনা; আর এ কারনেই সমস্যা বাড়ছে, বাড়ছে অস্থিরতা।

চোখেপড়ার মতো বিষয়গুলোর উদাহরন হিসেবে বলা যায়ঃ খুন-ধর্ষন-অত্যাচার, হিংসা-প্রতারণা-মিথ্যা বলা-অকৃতজ্ঞ আচরন-ঠকানো-বৈষম্য, দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি-ঘুষবানিজ্য, অনৈতিকভাবে মুনাফাভোগ, টেন্ডারবাজি-চাঁদাবাজি-সন্ত্রাস-ছিনতাই; আর আরেকটি ভয়ংকর বিষয় হলো আমরা যেই পৃথিবীতে বাস করি তার দূষন ও জীববৈচিত্র ধ্বংস করা।

নিয়মনীতি-থানা-পুলিশ-জেলখানা ইত্যাদি আমাদের ভালো লাগেনা। তাই শাস্তি বিষয়টা ধীরে ধীরে আপেক্ষিক হয়ে যাচ্ছে। ফলে অসাংবিধানিক, অমানবিক ও আকার্যকর কিছু সামাজিকভাবে জনপ্রিয় “জোর যার মুল্লুক তার” সূত্রের মাধ্যমে শাস্তিপ্রদান কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে। মানে পুলিশ বা সন্ত্রাসী দিয়ে ঠ্যাঙ্গানো, ভয়-ভীতি দেখানো, সতর্কবার্তা বা উকিল নোটিশ পাঠানো, সাময়িক বরখাস্ত করা, ধর্মীয় সালিশ ও পারিবারিক নির্যাতন।

তাই দেখা যাচ্ছে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক আইন বেশী কার্যকর হচ্ছে সরকারের বিরোধীপক্ষ ও সমালোচক এবং যারা রাজনীতির সাথে যুক্ত নয় অর্থাৎ অপেক্ষাকৃত দূর্বল জনগনের উপর।

আর সেসবের আওতার বাইরে থাকছে যারা আইন প্রনয়ন, রক্ষা ও প্রয়োগ করে এবং তাদের আশেপাশের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও গোষ্ঠীরা।

কিন্তু, এদিকে উন্নত বৈশ্বিক যোগাযোগের কারনে আমাদের দেশে কি হচ্ছে কেন হচ্ছে ইত্যাদি যেহেতু অনেকেই জেনে যাচ্ছে তাই তড়িঘরি করে আই-ওয়াশ হিসেবে কিছু আইন করা বা পুরানোগুলোকে “শক্তিশালী” করা এবং কিছু লোকের বিচার করে শাস্তি দিয়ে দেখানো হচ্ছে যে এদের আইনের শাসন আছে এবং মানুষ ন্যায়বিচার পাচ্ছে। নইলে তো জাত থাকবে না।

চিন্তার বিষয় কেন?

অভাব, হতাশা, ভয় ও লোভে পড়ে দেখা যাচ্ছে দিনদিন রাষ্ট্রে ও সমাজে শাসক ও শোষকশ্রেনীর দলে ভিড়ছে অনেকেই। আর আরেকদিকে শোষিত-বঞ্চিত-নির্যাতিত-অবহেলিত-প্রতারিত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো দূর্বলদের দল কিন্তু সংখ্যায় অনেক ভারী হওয়া স্বত্তেও সবলদের আর্থিক, রাজনৈতিক ও পেশীশক্তি বেশী হওয়ায় পরাজিত হচ্ছে।

কেউ কেউ এই পরাজয় মেনে নিয়ে মাথানত করে জীবনযাপন করছে, কেউ পদস্খলনের কারনে ক্ষমতাবানদের দলে যোগ দিচ্ছে, কেউ আবার সইতে না পেরে ক্ষনে ক্ষনে প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠছে, একা কিংবা অনেককে সাথে নিয়ে।

দেশে আইনের শাসন থাকলে বিশাল এই জনগোষ্ঠীর মধ্যে কোন আশংকা, ভয়, দূর্বলতা, অভাব-অভিযোগ থাকতো না, কেননা তাতে করে দিনদিন স্বৈরাচার, অদক্ষ ও লোভী শাসকগোষ্ঠী ও সমমনাগোষ্ঠী, দুর্নীতিবাজ, খুনী-সন্ত্রাসী, মিথ্যাবাদি-প্রতারক-প্রতিহিংসাপরায়ন মানুষের সংখ্যা কমে আসবে, আর তখন এরা জনগনকে ভয় পেতে শুরু করবে এবং এদের সংখ্যা আরো কমবে।

এই অবস্থায় জরুরি হলো ঘরে-বাইরে, কর্মক্ষেত্রে, নিজের সমাজে, এবং দেশে প্রতিনিয়ত ঘটে যাওয়া ক্ষতিকর-অশান্তি সৃষ্টিকারি-অপরিনামদর্শী কর্মকান্ড দ্রুত কমাতে ও সম্ভব হলে থামাতে “কার্যকর পদক্ষেপ” নেয়া।

বর্তমানই যেহেতু ভবিষ্যত তৈরি করে, সেহেতু এই মুহুর্তটাকে সুন্দর করতে পারলে পরের সময়টিও সুন্দরই হবে তাতে কোন অনিশ্চয়তা নেই।

আমাদের পূর্বপ্রস্তুতি নেই, অনেক ব্যাপারেই!

কিছু শব্দ “থাকবে না”

Comments

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

bn_BDবাংলা
Powered by TranslatePress