এতদিন অস্বীকার করলেও জামায়াত তার গঠনতন্ত্র সংশোধন করলো, মানে কাগজে-কলমে তারা মেনে নিল নির্বাচন কমিশনের সব আদেশ।
সেটাও শুধুমাত্র দেখানোপনাই মনে হয়। কেননা জামায়াত পাকিস্তানপন্থী দল, জামায়াত বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সংগে এদেশের মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। এদেরকে বিশ্বাস নেই। এরা মুখে ধর্মের কথা বললেও যা বলে ও করে তা ধর্মপ্রাণ মুসলিমের চরিত্র হতে পারে না।
এদের গঠনতন্ত্র বড়ই অদ্ভুত একটি জিনিস। যদিও এটি দলের মূলমন্ত্র তথাপি এতে মোট ৪৯বার সংশোধন আনা হয়েছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে দেশের সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক ৮টি ধারায় সংশোধনের জন্য জামায়াতকে বলা হয়, তখন তড়িঘড়ি করে সেই ধারাগুলো লালকালি দিয়ে কেটে দেয়। কোন এক সময় তারা দলের ওয়েবসাইটে মুক্তিযুদ্ধকে স্বীকৃতি দিয়েছে পর্যন্ত।
তারপর ২০০৯ সাল থেকে গতমাস পর্যন্ত মোট ৪বার তাদের তাগাদা দেয়া হয় এবং জামায়াত শেষবারের আগ পর্যন্ত সেইসব ধারাগুলো সাংঘর্ষিক নয় বলে জানিয়েছিল।
নিষিদ্ধ হওয়া থেকে আপাতত রক্ষা পেল জামায়াত। কিন্তু ৭১-এ যারা দলীয়ভাবে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে তাদের কি দল করার অধিকার থাকতে পারে?
পাকিস্তানপ্রেমী জামায়াতী নেতাদের বিচারের শেষমুহুর্তে এসে দলটির নেতারা যেভাবে আক্রমনের দামামা বাজাচ্ছে তাতে করে মনে হচ্ছে হামলায় অংশ নেয়া ও পরিকল্পনার জন্য দলটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহীতার মামলা না করা হলে অদূর ভবিষ্যতে এদের হামলার ধরন বদলাবে বা কঠোরতর বা নির্মম হবে।
তখন এইসব পাগলাকুত্তাকে কে সামলাবে?
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দলটির ৮-১০জন নেতৃস্থানীয়দের বিরুদ্ধে এমন রাষ্ট্রদ্রোহীতার মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। কিন্তু কেন এত দেরি হচ্ছে তা জানা সম্ভব হচ্ছে না।
জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের নাম-ঠিকানার একটা তালিকা করে এদের দ্রুত জেলে ঢুকাতে হবে।
কোনমতেই এই দলটিকে আর বাংলাদেশের মাটিতে রাজনীতি করতে দেয়া যাবেনা।
“যারা বাংলাদেশ চায় নাই, তারা কেন বাংলাদেশে থাকবে? রাজনীতি করবে? এমপি-মন্ত্রী হবে? ব্যবসা করবে? মিডিয়া চালাবে? স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বানাবে? হাসপাতাল বানাবে? প্রকাশ্যে বক্তৃতা দিবে?
তাইলে আমিও যা খুশি তাই করার আইনগত অধিকার চাই। যখন-তখন জামাতীগো পাইলে গদাম দিতে চাই, অগোরে ধইরা পুষ্কুনিতে খাড়া করায়া রাখতে চাই না মরা পর্যন্ত, গনহারে জবাই/বলি দিতে চাই, ডজন ডজন কইরা আফ্রিকান মাগুরের পুষ্কুনিতে ফালাইতে চাই, বড়রাস্তার মোড়ে বাইন্ধ্যা রাখতে চাই যেন সবাই লাত্থি-গুতা-জুতার বাড়ি দিতে পারে এবং আরো অনেক কিসু করতে চাই অগো লগে।”
আপডেট ডিসেম্বর ৫, ২০১২: ফাঁক-ফোকড় সহকারে জামায়াত ইসলামী নিবন্ধন বাতিলের দাবিতে স্বাধীনতা স্বপক্ষের সকল রাজনৈতিক দলের সোচ্চারের মুখে “গণতান্ত্রিক পদ্ধতি” অনুসরণে গঠনতন্ত্রে ব্যাপক সংশোধন আনে। নতুন সংশোধনীর মাধ্যমে দলটি গঠনতন্ত্র থেকে আল্লাহ প্রদত্ত এবং রসুল প্রদর্শিত ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থার কথা বাদ দিয়ে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার কথা বলেছে। এছাড়া “আল্লাহ ব্যতীত কাহাকেও সয়ংসম্পুর্ণ বিধানদাতা ও আইন প্রণেতা মানিয়া লইবে না এবং আল্লাহ্র আনুগত্য ও তাঁহার দেওয়া আাইন পালনের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত নয় এমন সকল আনুগত্য মানিয়া লইতে অস্বীকার করিবে” এ নীতিও বাদ দিয়েছে দলটি। কিন্তু এ ধারার গুরুত্বপূর্ণ অংশ “আল্লাহ ব্যতিত অন্য কাহাকেও বাদশাহ, রাজাধিরাজ ও সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক মানিয়া লইবে না, কাহাকেও নিজস্বভাবে আদেশ ও নিষেধ করিবার অধিকারী মনে করিবে না, কাহাকেও স্বয়সম্পূর্ণ বিধানদাতা ও আইনপ্রণেতা মানিয়া লইবে না” কথা রেখেই ইসিতে গঠনতন্ত্র জমা দেয় দলটি।
নির্দেশিত যেসব ধারায় সংশোধনী আনা হয়নি, পরিবর্তন হয়নি এবং আংশিক পরিবর্তন হয়েছে তা পুরোপুরি সংশোধনের জন্য দলটিকে আবারো চিঠি দেবে নির্বাচন কমিশন।
রোববার বিকেলে দলটির আইন বিষয়ক সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট জসীম উদ্দিন সরকার সংশোধিত এ গঠনতন্ত্রের মুদ্রিত কপি কমিশনে জমা দেন। এতে ২০১২ সালের নভেম্বরে ৪৯ তম মুদ্রণ কথাটি উল্লেখ রয়েছে। প্রকাশক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডাঃ শফিকুর রহমানের নাম।
নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া গঠনতন্ত্রের প্রতিটি পাতায় অ্যাডভোকেট জসীম উদ্দিন সরকারের নামের সিল ও স্বাক্ষর রয়েছে।
উল্লেখ্য, প্রতিকুল রাজনৈতিক পরিবেশের কথা উল্লেখ করে নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে দুই মাসের সময় চায় জামায়াত। তবে তাদেরকে সে সময় দেওয়া হবে কিনা সে সিদ্ধান্ত হওয়ার আগেই দলটি গঠনতন্ত্র সংশোধন করে তার মুদ্রিত কপি কমিশনে জমা দিল।
এর আগে নির্বাচন কমিশন জামায়াতে ইসলামীর গঠনতন্ত্রের ২ ধারার ৫ উপধারা, ধারা ৩, ৫ ধারার ৩ উপধারা, ৬ ধারার ৪ উপধারা, ৭ ধারার ১ থেকে ৪ উপধারা, ১১ ধারার ২ উপধারা ও ১৮ ধারার ৪ (চ) উপধারা সংশোধনের তাগিদ দেয়। দলটির নিবন্ধনের সময়ও এসব ধারা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে এবং অ্যাডভোকেট জসীম উদ্দিন সরকার তখন তাদের গঠনতন্ত্র থেকে কয়েকটি ধারা লাল কালি দিয়ে কেটে দিয়ে তা গঠনতন্ত্রের অংশ নয় মর্মে স্বাক্ষর করেন। কিন্তু পরে জামায়াতের সংশোধিত গঠনতন্ত্রে ওই বাদ দেওয়া বিষয়গুলো থেকেই যায়।
৩ ধারায় দলের লক্ষ্য উদ্দেশ্য সম্পর্কে ভূমিকাসহ ৪ টি উপধারাতে আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসূল (সাঃ) প্রদর্শিত পথ থেকে দ্বীন (ইসলামী জীবন বিধান) কায়েমের প্রচেষ্টার কথা বলা ছিল। সেগুলো বাদ দিয়ে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ন্যায় ও ইনসাফভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা এবং মহান আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন’ বাক্যটি সংযোজন করা হয়েছে।
৫ ধারা ৩ উপধারায় বলা ছিল, ‘সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে বাংলাদেশে ইসলামের সুবিচারপূর্ণ শাসন কায়েম করিয়া সমাজ হইতে সকল প্রকার জুলুম, শোষণ, দুর্নীতি ও অবিচারের অবসান ঘটাইবার আহ্বান জানাইবে।’ এ অংশ থেকে ‘ইসলামের’ শব্দটি বাদ দিয়ে তার পরিবর্তে ‘গণতান্ত্রিক পদ্ধতি’ কথাটি সংযোজন করা হয়েছে।
৬ ধারার ৪ উপধারায় বলা ছিল, ‘ইসলামের পূর্ণাঙ্গ প্রতিষ্ঠাকল্পে গোটা রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় বাঞ্ছিত সংশোধন আনায়নের উদ্দেশ্যে নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় সরকার পরিবর্তন এবং সমাজের সর্বস্তরে সৎ ও খোদাভীরু নেতৃত্ব কায়েমের চেষ্টা করা।’ এ কথাগুলো থেকে ‘খোদাভীরু’ শব্দটি বাদ দিয়ে ‘চরিত্রবান’ শব্দটি যোগ করা হয়েছে।
৭ ধারার ১ থেকে ৪ উপধারায় জামায়াতের সদস্য হতে হলে ইসলামে বিশ্বাস ও শরীয়তের নির্ধারিত ফরজ ও ওয়াজিব আদায়ের শর্ত দেওয়া ছিল। এগুলো বিলুপ্ত করা হয়েছে।
১১ ধারার ২ উপ ধারায় যে কোনো অমুসলিম নাগরিক কয়েকটি শর্ত পূরণের মাধ্যমে জামায়াতের সদস্য হতে পারবে বলা ছিল। এ উপধারাটি দলের গঠনতন্ত্রের মূল উদ্দেশ্যের সাথে সাংঘর্ষিক ও স্ব-বিরোধী বলে জানায় নির্বাচন কমিশন। জামায়াত এ উপধারাটি বিলুপ্ত করেছে।
জামায়াতের গঠনতন্ত্রের ১৮ ধারার ৪ (চ) উপধারায় বলা ছিল ‘আমীরে জামায়াত কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সহিত পরামর্শ করিয়া প্রযোজনীয় সংখ্যক সদস্যকে ( রুকনকে) কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরার সদস্য মনোনীত করিতে পারিবেন।’ এটি আরপিও পরিপন্থি মর্মে উল্লেখ করে নির্বাচন কমিশন। সংশোধিত গঠনতন্ত্রে এ উপধারাটিও বিলুপ্ত করা হয়েছে।
জামায়াতকে তাদের গঠনতন্ত্রের ৬৪ পৃষ্ঠার বিশেষ নোটের দফা ৩-এ সংশোধনী আনারও তাগিদ দিয়েছিল ইসি। এতে দলের সব কমিটিতে আরপিও অনুসারে ২০২০ সালের মধ্যে ৩৩ শতাংশ মহিলা সদস্যের স্থলে অধিকাংশ কমিটিতে ২৫ শতাংশ মহিলা সম্পৃক্ত করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছিল। সংশোধিত গঠনতন্ত্রে ৩৩ শতাংশ মহিলা সম্পৃক্ত করে ৬৯ ধারায় সন্নিবেশ করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, কোনো দলের গঠনতন্ত্র দেশের সংবিধান ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)-এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক হলে সে দলের নিবন্ধন বাতিল হতে পারে। আরপিও’র ৯০ এর সি ধারায় বলা হয়েছে- একটি রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের অযোগ্য হবে, যদি ওই দলের (ক) গঠনতন্ত্রের উদ্যেশ্যসমূহ সংবিধান পরিপন্থি হয়, (খ) গঠনতন্ত্র ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, ভাষা ও লিঙ্গভেদে কোনো বৈষম্য প্রতীয়মান হয়, (গ) নাম, পতাকা, চিহ্ন বা অন্য কোনো কর্মকা- দ্বারা সাম্প্রদায়িক ঐক্য বিনষ্ট হওয়ার কিংবা দেশকে বিচ্ছিন্নতার দিকে নিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
আর সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদে এই মর্মে বলা হয়েছে যে, নাগরিকদের মধ্যে ধর্মীয়, সামাজিক এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনিষ্ট করার উদ্দ্যেশে এবং ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষ, জš§স্থান বা ভাষার ক্ষেত্রে বৈষম্য সৃষ্টির জন্য কোনো সমিতি বা সংঘ গঠন বা ওই ধরণের কোন সমিতি বা সংঘের সদস্য হওয়ার অধিকার কোন নাগরিকের থাকবে না।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগইন করতে হবে।