ফৌজদারি কার্যবিধি অনুসারে সকল নাগরিক তার আত্মরক্ষার জন্য ব্যবস্থা নিতে পারেন। সেই আইনের আওতায় অনেকেই বন্দুক/পিস্তল লাইসেন্স করে সাথে রাখেন বা দেহরক্ষী রাখেন।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে নারী ও শিশু ধর্ষনের ঘটনা, এসিড সন্ত্রাস, রাস্তাঘাটে-গনপরিবহনে-পড়াশুনা ও পেশাস্থলে যেভাবে যৌন নিপীড়ন বাড়ছে তাতে করে আক্রমনকারীদের উপর আক্রমনাত্মক হয়ে উঠা ছাড়া আমি কোন উপায় দেখিনা।
পুলিশ এসে ব্যবস্থা নেবার আগের সময়টাতে আক্রমনকারীদের রুখে দিতে আমাদের মা-বোন-বান্ধবী সবার সাথে একটা চাকু বা রড অথবা মরিচের গুড়া/বিষাক্ত রাসায়নিক (কীটনাশক) স্প্রে ইত্যাদি রাখতে পারেন। এতে করে নির্যাতনের মুখোমুখি হওয়ার সাথে সাথে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সাহস পাবেন নারীরা। আক্রমনকারীকে আঘাত করার সাথে সাথে চিৎকার করে আশেপাশের মানুষকে জড়ো করতে হবে যেন জানোয়ারগুলো পালাতে না পারে।
ধর্ষন-যৌন নির্যাতন নিত্যনৈমত্তিক ব্যাপার হলেও আইনের ফাক-ফোকড় থাকার কারনে আর পুলিশের অবৈধ ও অনৈতিক আচরনের জন্য অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি হয়না। আবার আত্মসম্মানের কথা ভেবে অনেক নির্যাতিতের পরিবার মামলা করতে বা সাক্ষ্য উপস্থাপনে সহায়তা করতে চায়না। আদালতে মামলার দীর্ঘসূত্রিতা এধরনের স্পর্শকাতর বিষয়ে ন্যায়বিচার না পাওয়ার আরেকটি অন্যতম কারন।
আমাদের দেশে গত ৩০ বছর ধরে প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের প্রধানরা নারী হওয়া সত্বেও, তারা প্রায় ২১ বছর দেশের শাসন ক্ষমতায় থাকার পরেও, কোটিকোটি টাকা আয় ও খরচ করা সত্বেও, সমাজের নানাক্ষেত্রে নারীদের উপর নির্যাতন-নিপীড়ন-বৈষম্য থামাতে (কমাতে) কোন উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এটা খুবই লজ্জার।
যৌন নির্যাতনের মাত্রা এতই বাড়ছে যে শিশুদের গনধর্ষনের মত নৃশংস ঘটনাও ঘটে চলেছে। তার মানে দূর্বলতা থাকায় আইনের প্রতি বুড়ো আঙ্গুল দেখানোর মত সাহস পাচ্ছে এসব জানোয়ার, যাদের মধ্যে অনেকেই বিত্তবান বা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী। এদিকে আবার তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করা নিয়ে পুলিশের ঘুষ বানিজ্য তো আছেই। তাছাড়া হাসপাতালের মর্গেও চলে দুর্নীতি। আবার নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনার বিচার দ্রুত বিচার আইনের আওতায় না হওয়ায় মামলার দীর্ঘসূত্রিতা একটা স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে বিকৃত মস্তিষ্কের এসব জানোয়ারদের মধ্যে অপরাধ করেও পার পেয়ে যাবার একটা সুযোগ থেকে যায়।
সাম্প্রতিককালে দিল্লীর বাসে গনধর্ষনের ঘটনায় পুলিশ গাফিলতি করায় ফুঁসে উঠে ভারতসহ নানা দেশ। এমতাবস্থায় এদেশে প্রতিনিয়ত ভেতরের পাতায় ছাপা হওয়া ধর্ষন ও নানা যৌন নির্যাতনের খবরগুলো প্রথম পাতায় আসতে শুরু করে। রাস্তায়-রাস্তায় বিক্ষোভ শুরু হয় সারা দেশ জুড়ে, যা আজও চলছে, কালও হবে কোথাও। এতকিছুর মধ্যেও গতকাল মানিকগঞ্জের এক বাসের মধ্যে দিনের বেলায় ড্রাইভার আর হেলপারের দ্বারা ধর্ষিত হলেন এক গরীব গার্মেন্টস কর্মী!!!
কিন্তু দেশের নারী-প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বা তার কোন নারী মন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বা পুলিশের প্রধান এখনও পর্যন্ত “চোখে পড়ার মত” কোন ব্যবস্থা নেননি যাতে করে এখনও যেসব নারী ও শিশু আক্রমনের শিকার হয়নি তারা নিশ্চিন্ত হতে পারে।
এমন হতাশার সময়ে আমার বোন-মা-বান্ধবীর সুরক্ষার জন্য আমি তাদের ছুড়ি-চাকু-বিষাক্ত স্প্রে সাথে রাখতে বলবো, আমি নিজেও একটা চাকু সবসময় সাথে রাখি।
[নোট ১: আত্মরক্ষার নামে কোন নারী সাথে রাখা চাকু ও স্প্রের অপব্যবহার করতে পারেন বলে নিন্দুক/ছিদ্রান্বেষীরা প্রশ্ন তুলতে পারে। সেই সম্ভাবনা খুবই কম বলে আমার ধারনা।
নোট ২: চাকু বা বিষাক্ত স্প্রে সাথে রাখলে আপনি “ছিনতাইকারীদের” খুব সহজে রুখে দিতে পারবেন।
নোট ৩: এই নোটে ধর্ষন ও নির্যাতনের বিস্তারিত ধরন বা এসবের পেছনে অন্তর্নিহিত কারন নিয়ে অহেতুক ঘাঁটা হয়নি।
নোট ৪: খুন, যৌতুক-জমি ইত্যাদি নানা ইস্যুতে এসিড ছোঁড়া, পারিবারিক নির্যাতন, অসিফে-রাস্তায় হয়রানি বাদে ২০১২ সালে শুধুমাত্র ধর্ষিতই হয়েছেন ৮০৫জন যার মধ্যে ৪৭৩জন শিশু!]
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগইন করতে হবে।