খালেদা জিয়া সাতক্ষীরার জামায়াতপ্রবন কালীগঞ্জ এলাকায় যাচ্ছেন পুলিশের সাথে সংঘর্ষ করতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দলীয় নেতা-কর্মীদের দেখতে আর নিহতদের পরিবারকে সমবেদনা জানাতে। বেশ, উনি বেছে বেছে সুবিধাজনক জায়গাগুলোতেই ঘুরছেন আর নিজ দলের নেতা-কর্মীদের সাহস যুগাচ্ছেন আরো বেশী করে সরকারবিরোধী আন্দোলন (সন্ত্রাস) করতে।
২৮শে ফেব্রুয়ারি রাতে এই সাতক্ষীরার কদমতলা, সিটি কলেজ মোড় ও আদাবের হাট এলাকার শতাধিক হিন্দু বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা করে জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মী-সমর্থকরা।
কামড়া-কামড়ি আমাদের রাজনীতির একটা অনন্য বৈশিষ্ট্য। কিন্তু অমুসলিমদের কেন ক্রসফায়ার করা হয়! এরা দুর্বল বলে? সংখ্যায় কম আর মারামারিতে অজ্ঞ বইলা অমুসলিমদের উপর নির্যাতন-বঞ্চনা বন্ধ করো। কোন ধর্মই আগ্রাসনের পক্ষপাতি না, কেননা সেটা “জান্তব আচরন”, মানুষের না।
অবশ্য খালেদা জিয়ার দাবী এদের উপর হামলা করেছে সরকারী দলের লোকজন, জামায়াত-শিবির ও বিএনপি না!!!
আরো মনে পড়ে গেলো স্থানীয় একটি পত্রিকায় ‘উস্কানিমূলক’ খবর প্রকাশের পর গতবছরের ৩১ মার্চ এবং ১লা এপ্রিল এই সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ এলাকার দুইটি গ্রামের কমপক্ষে ১২টি হিন্দু বাড়ি ভাংচুর-লুট করে পুড়িয়ে দেয় জামায়াত-শিবির ও সমমনা মুসলমানরা। লুট করা হয় আরো ২৫টি বাড়ি।
সেই ঘটনার সময় পুলিশ ও প্রশাসন নীরব দর্শকের ভূমিকা নিয়েছিল, এমনকি আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীরাও সাহায্যে এগিয়ে যায়নি। সে এলাকার এমপি আবার বিএনপি’র।
সেই ঘটনার এখনো কোন বিচার হয়েছে বলে শুনিনি। কিভাবে হবে? ৪তারিখে শাহবাগে এই ঘটনার সুবিচার চেয়ে রাস্তা অবরোধ না করলে দেশের অন্য এলাকার মানুষগুলো হয়তো জানতোই না এমন কিছু ঘটেছে।
এসবের বিচার কি এত সহজ! ঠিক আগের মাসে, অর্থ্যাৎ ফেব্রুয়ারির শুরুতে বিএনপি-জামায়াত প্রধান হাটহাজারি এলাকার হিন্দুদের ১৫টি মন্দির, ১৫টি বাড়ি, ১২টি দোকানে ভাংচুর-অগ্নিসংযোগ আর লুটের ঘটনা ঘটে। হাইকোর্ট আদেশ দিয়েছিল বলে দিন-পনেরো পরে সরকার কিছু ব্যবস্থা নিয়েছিল; কিন্তু তার আগে পর্যন্ত আওয়ামীলীগ-বিএনপি সবাই মুখে কুলুপ এঁটে ছিল।
রামু’র ভয়াবহতারও কোন কূলকিনারা হয়নি। আর পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের তো গনিমতের মাল মনে করে সেখানে থাকা বাঙ্গালী সেটলার আর যেকোন দলের সরকারি লোকেরা।
অমুসলিমদের উপর হামলা-নির্যাতন-ধর্ষন-খুন এসবের বিষয়ে সব দলের মুসলমানরা কিভাবে যেন এক হয়ে যায়! দারুন ঐক্য!!!
আমার এক বন্ধু ফেসবুকে লিখেছেনঃ “তা হিন্দুদের মন্দিরকে কি আপনাদের মুদির দোকান মনে হয়? হিন্দুদের বাড়ি-ঘর কে কে ফুটবল আর তারা বাতি মনে হয়? আর হিন্দু নারীদের কে কি আপনাদের নিজের বিবি মনে হয়?”
কিছু হিসাবঃ ১৭ই মার্চ বাংলাদেশ পুজা উদযাপন পরিষদ জানায় ২৮শে ফেব্রুয়ারি থেকে সেদিন পর্যন্ত ৩৭টি জেলায় কমপক্ষে ৫জন হিন্দু খুন, এবং ৪৭টি মন্দির ও ১৫০০ হিন্দু বাড়ি ভাংচুর ও আগুন দেয়া হয়।
আর একই দিন হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের মতে, এই সময়ের মধ্যে ৯৯টি মন্দিরে হামলা হয় যার মধ্যে ৪৮টিতে লুট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে এবং কমপক্ষে ২০০০ বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগইন করতে হবে।