হেফাজতের নতুন ভেল্কি

হেফাজত মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনাগরী
হেফাজত মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনাগরী

শনিবারের ঢাকা ট্রিবিউনে দেখলাম হেফাজতের প্রধান কমিটি ও ঢাকাসহ সব জেলা ও তৃনমূল পর্যায়ের সব কমিটি স্থগিত করে নতুন করে ঢেলে সাজাবে; লক্ষ্যটা হলো ১৮দলীয় জোটের নেতাদের বাদ দেয়া। লংমার্চ ও অবরোধে রাজনৈতিক দলের সাথে হেফাজতের নেতাদের হাতমেলানোটা সাধারন মানুষ সহজভাবে নেয়নি। হেফাজতকে কেউ ‘অরাজনৈতিক সংগঠন’ মনে করেনা, বরং কট্টরপন্থী মৌলবাদী দল বলেই দেখতে পাচ্ছে। এর নেতা-কর্মীদের গগনবিদারী চিৎকার দেখলে ও শুনলে মনে হয় দেশটা রসাতলে গেছে! এদের হুমকি-ধামকী দেয়ার ধরন দেখে মনে হয় এরা জমি দখলে নেমেছে, খোদার খেদমত করার কথা বলে সাধারন মুসলমানদের ডেকে নিয়ে আদতে ব্যবসা করছে হেফাজত।

এখন হঠাৎ কমিটি বদলে অর্থায়নকারী মানুষগুলোকে পেছনে নিয়ে গেলেই কি শুদ্ধতা আসবে? ফেব্রুয়ারীর মাঝামাঝি থেকে যেসব ঔদ্ধত্বপূর্ণ কথা তারা বলেছে এবং যেসব অমানবিক-অনৈতিক কাজ তারা করেছে তার বিচার হোক আগে।

হেফাজতের প্রধানই গত সপ্তাহে কমিটি বদলানোর ঘোষনা দেন। এর আগে তার ডেপুটি বাবুনাগরী আদালতে ১৬৪ধারায়  জবানবন্দী দিয়ে সর্বশেষ ৫ই মে’র সহিংসতার জন্য জামায়াতসহ ১৮দলীয় জোটকে দায়ী করেন, হেফাজতের নেতারা টাকা ও অন্যান্য সাহায্য নিয়েছে তাও বলেন। দাবী করেন সন্ধ্যার পর মতিঝিলের সমাবেশের উপর আর নিয়ন্ত্রন ছিল না। এসব করা হয়েছিল সরকারকে উৎখাত করার জন্য।

৭ই মে বাবুনাগরী গ্রেপ্তার হবার পর ২২দিনের রিমান্ডে থাকাকালীন পুলিশের কাছে তিনি যা বলেন তা পুলিশের মাধ্যমে সংবাদমাধ্যমে এসেছে। এমনকি জবানবন্দীর বিষয়টিও। তাই কেউ কেউ এসব বিশ্বাস করছেন না।

৬ই এপ্রিলের পর হেফাজতের মঞ্চে বিরোধী জোটের নেতারা রাজাকারবিরোধী শাহবাগের আন্দোলনকারী, তথাকথিত নাস্তিক ব্লগার, সরকার, সংবিধান, নারী ও শিক্ষা নীতি, নারীর অবাধ চলাচল, কাদীয়ানীদের কাফের ঘোষনা করা ইত্যাদি ১৩টি দাবীতে যে ধরনের ভাষন ও সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে তা কি করে অরাজনৈতিক ও ইসলামিক হয় সেটা আমার প্রশ্ন। ৫ই মে’র আগে এসব দাবী পূরণ না করলে সরকার পতনের একদফা আন্দোলনে নামবে বলেও ঘোষনা দেয় তারা, বংগভবন দখল, সংবিধান রদ করে কোরান দিয়ে ৬তারিখ থেকে হেফাজত প্রধানই দেশ চালাবেন বলে প্রকাশ্যে ঘোষনা দেয় এর নেতারা… সমাবেশে কোনপ্রকার বাধা আসলে তা মোকাবেলায় ১০,০০০-এরও বেশী প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত ছিল যাদের মধ্যে আবার ৩১৩জনের ছোট ছোট দল ছিল যারা হেফাজতের দাবী পূরনে জীবন দিতেও প্রস্তুত ছিল।

কিন্তু সব হিসাব-নিকাশ ভেস্তে গেলো ৫ই মে মাঝরাতের অপারেশনে, খালেদা জিয়ার ডাকে যেহেতু কয়েক লাখ বিএনপি কর্মী ও সাধারন মানুষ রাস্তায় নেমে আসেনি সেইরাতে, অচল করে দিতে যেহেতু পারেনি রাজধানী শহরটাকে, তখন অপপ্রচার আর মিথ্যাচার আর সরকারকে দোষারোপ করেই পার পেতে চাচ্ছে হেফাজতে ইসলাম-বিএনপি-জামায়াত।

সাংবিধানিকভাবে সবকটা জানোয়ারের শাস্তি বিধান করা হোক। অন্যায় করে পার পেয়ে যাবার সংস্কৃতি থেকে আমাদের দেশকে মুক্ত করতে হবে, বিশেষ করে, বিষয়টা যখন ‘ধর্ম’!

Comments

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

bn_BDবাংলা
Powered by TranslatePress