

হেফাজতের লংমার্চ সমর্থক একজন বুয়েট ছাত্র [শিবিরকর্মীও হতে পারে] “ইসলামের উপর আঘাত” করায় আরেক ছাত্রকে কুপিয়ে রক্তাক্ত করলো এপ্রিলের ৯ তারিখে। বিষয়টা নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে তখনও কেউ বেশি বাড়ে নি, হয়তো ছেলেটা মরেনি বলে। তিন মাস লাইফ সাপোর্টে ছিল সে। সোমবার (১লা জুলাই) ভোরে মারা গেলো।
সবাই এবার নড়ে-চড়ে বসলো। প্রতিবাদী তরুনেরা নতুন করে আন্দোলন জোরালো করার একটা মওকা পেল; সংবাদ মাধ্যমগুলো পেলো প্রথম পাতার জন্য বড় একটা খবর, কেউ কেউ ছবি ছাপাবে কাল সকালে; টিভিগুলো চেষ্টা করবে এবার কিছুটা অন্তত “অনুসন্ধানী” প্রতিবেদন করা যায় কিনা। বেশ!
একটা মামলা হয়েছিল ঘটনার পরপর, দীপের ভাই সেটা করেছিলেন। ১৭ই এপ্রিল এখন পর্যন্ত চিহ্নিত একমাত্র আসামী “মেজবাহ”কে গ্রেপ্তার করলো পুলিশ। পরদিন তাকে সাংবাদিক সম্মেলনে হাজির করলো পুলিশ, সেখানে সে স্বীকার করলো কোপানোর কথা। সেদিনই সে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিলো।
কিন্তু বিধিবাম! যেহেতু ছেলেটা মরেনি, তাই পুলিশ বা শাহবাগের সম্মুখভাগের নেতারা বা সরকারি কোন পদস্থ কর্মকর্তা এই বিষয়ে আর রা করলেন না। মামলার কাজও এগুলো না।
আজ মরেছে সে। সাক্ষ্যপ্রমান সব হাতে, জবানবন্দীও তৈরি। তাহলে কাল কি কোন তড়িৎ ব্যবস্থা দেখতে পাবো আমরা?
এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি থামাতে দ্রুত বিচারের কোন বিকল্প দেখি না। মনে পড়ে জামায়াত-শিবির-রাজাকারবিরোধী গন-আন্দোলন শুরু হবার পর থেকে কিভাবে এইসব জানোয়ারের দল ঝাপিয়ে পড়েছে যুদ্ধাপরাধের বিচার থামাতে — পুলিশের উপর নৃশংস আক্রমন, রেললাইন উপড়ে ফেলা, জামায়াত-শিবিরবিরোধীদের বাড়িঘর ও দোকানে হামলা, খুন-ধর্ষন-লুট-অগ্নিসংযোগ চলছে বিরামহীনভাবে।
আন্দোলনকারীদের উপর “নাস্তিক”তার লেবাস লাগিয়ে মুসলমানদের মধ্যে উগ্রতা সৃষ্টি করে হায়েনার মত আচরন করছে এসব মৌলবাদী-উছৃংখল-জঙ্গী সংগঠন। বিরোধী সকল রাজনৈতিক দলসহ জাতীয় পার্টি আর তথাকথিত বুদ্ধিজীবী ফরহাদ মজহার-পিয়াস করিমের নমনীয়তার জোরে হেফাজত ভালোই কাভারেজ পেলো কয়েকমাস। সবাই এদের ১৩দফা নিয়ে আলোচনা করা শুরু করলো, যেন নাহলে আর রক্ষা থাকবেনা। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে নানান মন্ত্রী [পরিবেশমন্ত্রী হাসান মাহমুদসহ], এমপি ভাব নিলেন এসব ঘেঁটে দেখা হবে।
এমন একটা ধারনা তৈরি করা হলো যে, “নাস্তিক”দের খুন করলে বিচার নাই। যেমনটা ঘটেছিল ব্লগার-স্থপতি রাজীবের খুনের পর। শিবিরের সাইট-ব্লগগুলো থেকে বলা হচ্ছিল, রাজীব একজন “নাস্তিক,” সুতরাং…
কিন্তু হেফাজতের উগ্রতার বিচারের দায়ভার নিতে চাইলেন না কেউ। কারন তাদের আচরন যাই হোক, এরা তো “ইসলাম রক্ষার আন্দোলনে” নেমেছে! ভাগ্যিস, ৫ই মে’র সমাবেশের পর সাধারন মুসলিমরাও বুঝলেন যে হেফাজত কোন অরাজনৈতিক সংগঠন নয়। ১৮-দলের মধ্যে থাকা উগ্রপন্থী ধর্মভিত্তিক দলগুলোর নেতারা সবাই হেফাজতের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় কমিটিগুলো দখল করে য়াছে। এদের লক্ষ্য ও কর্মপন্থা যে স্বাভাবিক হবে না, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
যাই হোক, কেন এরা এত উগ্র সেটা বুঝতে কোরান শরীফ পড়ার দরকার নাই। মোটা দাগে বলা যায়, রাজনীতিবিদদের মধ্যে নারকীয়তা-নৃশংসতা খুবই সাধারন একটা বিষয়! সেটা আওয়ামীলীগ-বিএনপি-জাতীয় পার্টি-জামায়াতে ইসলামী যেটাই হোক। আর যারা ধর্মভিত্তিক দলের দোকান খুলে বসেছেন তাদের ধান্ধা যে কোন জায়গায় তা আর খুলে বলতে চাই না।
আপাততঃ দীপ হত্যার ঘটনায় দ্রুত বিচারের আশায় আছি।
১৮ই এপ্রিলের সাংবাদিক সম্মেলনে মেজবাহ বলেছিলঃ “হেফাজতে ইসলামীর লংমার্চের দিন খাবার দিয়ে সাহায্য করায় ক্যাম্পাসের এক ঈমামকে লাঞ্ছিত করে দীপ। তাই তাকে মারা আমার ঈমানি দায়িত্ব ছিল। “আমি ফরিদাবাদের হুজুর মুফতি মাওলানা আবু সাঈদের অনুসারী। দুই-তিন বছর আগে তিনি বলেছিলেন, ইসলামের ওপর আঘাত হেনে কেউ কথা বলছে তার প্রতিবাদ করা মুসলমানদের ঈমানি দায়িত্ব।”
তথাকথিত আস্তিক হেফাজতের শুরু, আর এখন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগইন করতে হবে।