সোমবার চাঁদপুরের হাজিগঞ্জের কাপাইকাপ ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসার ৫৫বছর বয়সী এক শিক্ষককে ১১বছরের এক শিশুকে ধর্ষনের দায়ে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। মাদ্রাসার আরবী শিক্ষক শিশুটির উপর পাশবিক নির্যাতন চালায় ২০১০ সালের ৩রা আগস্ট। পরে এই ঘটনা জানাজানি হলে মাদ্রাসার শিক্ষকেরা দুজনের বিয়ে দেয়। কিন্তু মেয়ের বাবা তা মেনে নিতে না পেরে অভিযুক্ত অমানুষটার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেন। পরের বছর জুনে ছোট্ট মেয়েটি একটি কন্যা শিশুর জন্ম দেয়। এরা দুজন এখন ঢাকার মহিলা আইনজীবী সমিতির আগারগাঁও কার্যালয়ে নিরাপদ আছে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্র পত্রিকা মারফত যেসব খবর পায় সেগুলো থেকে হিসেব করে দেখেছে যে, এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৫২৯জন নারী ও শিশু ধর্ষনের শিকার হয়েছেন। এসবের মধ্যে ২-১০বছর বয়সী শিশুদের ধর্ষিত হবার বেশ কয়েকটি ঘটনাও আছে।
কিছু ধর্ষকামী পুরুষ আবার এসব নির্যাতনের জন্য মেয়েদের চরিত্র-জামাকাপড় নিয়ে প্রশ্ন তোলে। ধর্ষনের কারন যে নারীরা নয় শিশু ধর্ষনের ঘটনাই তার প্রমান। এটা আসলে লিংগসর্বস্ব পুরুষদের সমস্যা।
গতবছর সারাদেশে কমপক্ষে ১০০৮জন নারী ও শিশু ধর্ষনের শিকার হয়েছেন; এদের মধ্যে ৯৮জনকে হত্যা করা হয়, আর আত্মহত্যা করেছেন ১৪জন নারী। তাছাড়া ধর্ষনের চেষ্টা চালানো হয়েছে ২৪১জনের উপর।
এর মধ্যে পরিবারে ও সমাজে শিশুদের প্রতিনিয়ত যৌন হয়রানির শিকার হওয়ার কোন হিসাব নেই। তার উপর আছে স্কুল-কলেজ পড়ুয়াদের উপর বখাটেদের হয়রানির ঘটনা যার কারনে অনেক মেয়েই আত্মহত্যা করে বা এসিড সন্ত্রাসের শিকার হয়। এসব ঘটনার প্রতিবাদ করতে গিয়ে নারীদের সাহায্যে এগিয়ে যাওয়া পুরুষদের খুন হবার নজির আছে অনেক। সালিশ ও ফতোয়া এখনো দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রকাশ্যেই দেয়া হয়, যৌতুক এখনও কেড়ে নিচ্ছে প্রাণ আর শারীরিক নির্যাতনের তো কোন শেষ নেই। আর শহুরে সংসারে গৃহকর্তী ও পরিচারিকাদের উপর অকথ্য নির্যাতন চাপা পড়ে থাকে ভদ্রতার আবরনের নীচে।
কবে আমাদের প্রচার-মাধ্যমগুলো ধর্ষন ও যৌন হয়রানির দায়ে “শাস্তির খবর” জোরালোভাবে প্রচার করবে? এই অনাচার বন্ধ করতে গ্রেপ্তার, অতঃপর ফাঁসি বা যাবজ্জীবনের ভয় দেখানো ছাড়া আর কোন দ্রুত ও কার্যকরী পদ্ধতি আছে কিনা আমার জানা নাই।
তবে সেক্ষেত্রে অপরাধীদের জামিন দেয়া যাবে না এবং অসৎ পুলিশ বা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীদের কুপ্রভাব থেকে মামলাকে মুক্ত রাখতে হবে। আর মামলার রায় হতে হবে “ফাঁসি”, আর কিছু নয়।
সব পত্রিকা-টিভি যদি ধর্ষন ও যৌন নির্যাতনের ঘটনাকে নিয়মিতভাবে তিরস্কার করা এবং গ্রেপ্তার থেকে শুরু করে তদন্ত-মামলা ও শাস্তি পর্যন্ত ঘটনাগুলোকে প্রচার করে তবে বর্তমান পরিস্থিতি দ্রুত বদলে যেতে বাধ্য।
সেই কাজটা আরো সহজে সম্ভব সরকার-বিরোধীদলের প্রধানরা যদি সরব হন। গত ২২ বছর যে তারা নির্বিকার থেকেছেন সেটা আমার কাছে সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, এবং ক্ষোভের কারন।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগইন করতে হবে।