
সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গনে একজন বিরোধীজোট-সমর্থক নারী উকিলকে মাটিতে ফেলে জঘন্যভাবে নির্যাতন করলো কতগুলা জানোয়ার; আরেকটু দূরে আরেকজন নারীকে ফুটপাতে ফেলে দুইটা নরপশু রাগ ঝাড়লো খালেদা জিয়ার উপর যিনি ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন বানচাল করতে জোটের নেতাকর্মীদের আহ্বান জানিয়েছেন। সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিরোধীরা যারা যুদ্ধে গেছে তাদের ঠেকাতে আগেরদিন আওয়ামীলীগ তার বাহিনীকে রাস্তায় থাকতে বলেছে লাঠি হাতে।
আরে, নেতা যদি লাঠি নিয়া নামতে বলে তাহলে তো কমপক্ষে ৯এমএম নিয়া নামা উচিত ছিল। হয়তো রিজার্ভে ছিল, মাঠে নামায় নাই ক্যাডাররা, খালি বাঁশের লাঠি আর ক্রিকেট স্টাম্প দিয়াই কাজ সাড়ছে। আর একশন সিনেমার নায়কদের মতো লাত্থি আর ঘুষির একটা মহড়া করে নিলো, নেক্সট ৬মাসের মধ্যে এফডিসির ছবিতে ডাক পাবে এরা, হয় ভিলেন বা তার সহযোগী হিসেবে।
সারাদেশে তেমন কিছু হয়নি, কিন্তু ওই স্পর্শকাতর সুপ্রীম কোর্ট এলাকায় যা হলো তা তো প্রধানমন্ত্রীর কানে যাবার কথা। বড় নেতারা মনিটরিং করেছেন কর্মীদের, আর শেখ হাসিনা তদারকি করেছেন বড়দের। শুনেছি ওবায়দুল কাদের সাহেব নাকি মূল ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি নিশ্চয়ই হাসিনাকে বলেছেন!
রাতে মিটিং-এ তিনি যেহেতু নেতা-কর্মীদের মাঠে নামার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন এবং নির্বাচন পর্যন্ত রাস্তায় থাকতে বলেছেন; পাশাপাশি তিনি সভয় দিয়েছেন “সরকারও কঠোর অবস্থান নিবে।”
তারমানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিজেরাতো বিরোধীদের ধড়-পাকড় করবেই, সাথে আবার সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা যখন মারামারি করবে তখন তাদের ব্যাকআপ ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে।
তার মানে তিনি যদি সুপ্রীম কোর্ট এলাকার ঘটনাদুটির কথা জেনে থাকেন বা টিভিতে দেখে থাকেন তাহলে খুশি হয়েছেন; উনাদের রাজনীতি তো এমনই “ঝিকে মেরে বৌকে শেখানো।”
আর নয়তো তাকে এই বিষয়টি থেকে পুরোপুরি অন্ধকারে রাখা হয়েছে, যা প্রায় অসম্ভব।
ওই নির্যাতিত মহিলা দুজন নারী না হয়ে পুরুষ হলেও উনার কষ্ট হতো না। কেননা এরা তো সিল-খাওয়া বিরোধীজোট সমর্থক, চনতে ভুল হয়নি। বিরোধীদের শিক্ষা দিতে আমার দেশের রাজনীতিতে সবচেয়ে জনপ্রিয় কর্মকান্ড হলো প্রকাশ্যে মারামারি — পথচারী এমনকি ক্যামেরার সামনে। এটা এক ধরনের সিনেমাটিক একটা বিষয় যার বিস্তৃতি ঘটেছে এরশাদ পতনের পর। কেননা মাঠে তখন দুইদল। ধীরে ধীরে অন্যান্য দল শক্তিশালী হয়ে উঠলেও তারা এককভাবে এই দুইদলের বাইরে গিয়ে মেরুদন্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারেনি কখনো। ফলে গত ২৩বছর ধরেই চলছে এই অমানবিকতা গনতান্ত্রিক রাজনীতি।
বিরোধীদল এর আগে তিনবার ক্ষমতায় থাকলেও কোনদিন সংবিধান বা অন্যান্য আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখায়নি কেননা তাদের কেউ বাধ্য করতে পারেনি। এখন তার জোট প্রতিদিন অজস্র অঘটনের জন্ম দিচ্ছে, সরকারদলীয় ও অরাজনৈতিক জনগনের উপর তার সমস্ত রাগ দেখাচ্ছে। ক্ষমতার যাওয়ার নেশায় দানবের মত ছুটছে।
জনগনের ভোটে নির্বাচিত হয়েও এই দুই দলের নেতারা কেউ জনগনের ভালমন্দ দেখে না, আবার সংবিধানে লেখা দায়িত্ব-কর্তব্যও ঠিকমত পালন করেনা। চুরি-চামারি আর ফাঁকিবাজি করার পর ন্যুনতম যতটুকু রুটিন কাজ করে সেটা নিয়েও বাহাদুড়ি করে এরা। তারাই আবার আইন বানায়, কাঁটাছিড়া করে, নিজেদের বুক-পিঠ রক্ষা করে আর বিরোধীদল ও শান্তিপ্রিয় অরাজনৈতিক জনগনের উপর খড়গ চালায়।
পাঁচ বছরের রাজনৈতিক ঠিকাদারদের টাকাপয়সা ও সুযোগ-সুবিধার বিনিময়ে সরকারে বসিয়ে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ক্রমশ বিকল করার কাজে সফলভাবে এগিয়ে যাচ্ছে কিছু “সরকারি কর্মকর্তা” যারা আবার নির্লজ্জ ও নির্মমভাবে বিরোধীদল ও শান্তিপ্রিয় অরাজনৈতিক জনগনের গলায় ছুড়ি ধরছে। এরাও সংবিধান ও চাকুরিবিধির ধার ধারে না। হয়তো এদের সংখ্যা বেশি না, কিন্তু এরা বেশি ক্ষমতাশালী।
রাষ্ট্রব্যবস্থা ও রাজনীতি যখন কলুষিত হয়, সমাজে তখন অব্যবস্থাপনার চূড়ান্তরূপ দেখা মেলে। ধর্ম, শিক্ষা, বিনোদন সবকিছুতেই বিষ ছড়িয়ে পড়ে। তার উপর আবার দেশের অর্ধেকের বেশি মানুষ অল্প শিক্ষিত বা অশিক্ষিত, আর শিক্ষিতদের মধ্যে আবার কুশিক্ষিতের হার বেশি। সেই সময় ঘি ঢালে আরেকটা শ্রেনী — ব্যবসায়িরা। এরাও এখন রাজনীতিবিদদের মতো প্রতিটা মানুষের মস্তিষ্কে স্কুল খুলে বসেছে।
আমি জানিনা সেই দিন কত দূরে যখন সব অরাজনৈতিক জনগনকে ভয় করবে দলীয় সরকার ও সমর্থকরা, কারন অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে হবে। না করলে খবর আছে। আর যারা রাজনীতির সাথে নিজের দূরত্ব তৈরি করতে পারেন না তারা অবশ্যই সেদিন রাজনীতিতে যোগ দিবেন রাষ্ট্র ও সমাজকে সরল পথে আনতে। যেসব জনগন শান্তি চান তারা যদি সৎ ও যোগ্য না হন, তাহলে মূর্খ কিংবা চালাক ও ভয়ংকর রাজনীতিবিদেরা কাউকেই ভয় পাবেনা।
“দানবীয় রাজনীতি ও বহুরূপী ব্যবসা” বিষয়ে অন্তত দুইবার বেশি ভাবতে হবে। শিখতে হবে শান্তি চাইলে কি কি চিন্তা ও কাজ করা বারন।
[রাজনীতি সমর্থক জনগনের জন্য আমার কোন দয়ামায়া নাই, আমি দুঃস্থের পক্ষে]
“শান্তি” নিয়ে অনেকক্ষণ কথা বলে মনে হলো বেয়াদবি করে ফেললাম না তো? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রণীত “জনগনের ক্ষমতায়ন” শীর্ষক একটি শান্তি মডেল সম্প্রতি জাতিসংঘে গৃহীত হয়েছে যেখানে কিনা রাষ্ট্রকে গিলে খাবার মত ক্ষমতাশালী জীবানু “দুর্নীতি” থামানো নিয়ে একটা সূত্রও নাই! :@
মায়া-মমতা/মানবতা চাই না, আইন মেনে চলেন প্লিজ!
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগইন করতে হবে।