রাস্তাঘাটে নারীরা যৌন হয়রানির শিকার করলে কি করা উচিত – এ ভেবে অনেকেই কূল পাননা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হয়তো দেখা যায় নির্যাতিতরা মাথা নিচু করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এক্ষেত্রে বড় একটা নিয়ামক হলো নির্যাতনকারী অপরিচিত ও ঘটনা অপরিচিত কোন এলাকায় ঘটলে নারী ও মেয়েশিশুরা সাধারণত প্রতিবাদ করতে ভয় পান। আবার অন্যদিকে অনেক সময় কেউ কেউ প্রতিবাদ করেন কিন্তু সাথে সাথে নির্যাতনকারী ও তাদের সহযোগীদের দ্বারা আরো বেশি নির্যাতিত হন, কখনো কখনো এসিড ছুঁড়ে বা ধর্ষন করে জান্তব আনন্দ পায় অমানুষরা।
নির্যাতনের ঘটনা পরিচিত এলাকায় বা রাস্তায় ঘটলে নারীদের জন্য প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়া অনেক সহজ। কয়েকজন নারী এক হয়ে বা নিজেদের আত্মীয় ও শুকাংখীদের একত্র করে চিহ্নিত নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে সফলভাবে ব্যবস্থা নেয়া যায় যেন তারা বা সেই এলাকার অন্য কেউ আর কখনো কোন নারী বা মেয়েশিশুকে যৌন নির্যাতন করার সাহস না পায় এবং দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের মাধ্যমে তাদের সাথে সহাবস্থানমূলক ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করে।
দীর্ঘস্থায়ী নিরাময় ব্যবস্থা হিসেবে নির্যাতনকারীদের চিহ্নিত করে তাদের নাম-পারিবারিক পরিচয় ও ছবি কর্মকান্ডের বিবরণসহ প্রকাশ করে ছড়িয়ে দিতে হবে। জনসমক্ষে প্রতিবাদ করে অপমানিত করতে হবে এবং সম্ভব হলে জুতাপেটা করে, মুখে চুনকালি মেখে পুলিশে দিতে হবে। পাশাপাশি পুলিশ যেন মামলা নেয় ও আসামীকে গ্রেপ্তার করে যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে আইনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে সে বিষয় নিয়মিত খেয়াল রাখতে হবে।
নির্যাতিতা, তার পরিবার বা শুকাংখীরা যদি যথাযথ ব্যবস্থা নিতে না পারে তবে সাংবাদিক ও সরকারি-বেসরকারী আইন সহায়তাদানকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। যেসব পুরুষ যৌন কামনা-বাসনা নিয়ন্ত্রন করতে পারেনা এবং যৌন নির্যাতনের মত ঘৃণ্য কাজ করে তাদের জন্য কোন সহমর্মিতা নয় কোন যুক্তিতেই।
কয়েকটি ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছিঃ

১. “পটিয়া পৌর সদরের ছবুর রোড এলাকায় স্কুলগামী ছাত্রীদের কটুক্তি করার দায়ে গুরু সম্পদ দাশ (৩৫) নামের এক যুবককে ছাত্রীরা দলবদ্ধ হয়ে জুতা পেটা করে থানায় সোপর্দ করে। গত রবিবার সকাল ১০ টায় এ ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ তাকে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করতে পটিয়া সহকারী কমিশনারের (ভুমি) কাছে নিয়ে গেলে তিনি যুবককে এক মাসের জেল দেন। অভিযোগমতে, পটিয়া খলিলুর রহমান ও আবদুর রহমান সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০-১২ জন ছাত্রী কোচিং করে স্কুলে যাওয়ার পথে পৌর সদরের ছবুর রোড এলাকায় আসলে গুরু সম্পদ নামের যুবকটি তাদের কটুক্তি করে। এসময় ছাত্রীরা দলবদ্ধ হয়ে তাকে ধরে জুতা পেটা করে তাকে থানায় সোপর্দ করে।”
খবরটি চোখে পড়ে সোমবার। আমার এক বন্ধু ফেসবুকে একটি ছবিসহ খবরটি শেয়ার দেন। দেখে আমার কাছে এতই ভালো লেগেছে যে আমি সাথে সাথেই শেয়ার দেই এবং আমার “WeMen for WoMen” পেইজেও শেয়ার দেই। ছবিতে দেখা যায় ঘটনার সময় আশেপাশে উৎসুক পুরুষদের ভিড় জমে যায়। ঘটোনাটি ঢাকার রাস্তায় হলেও হয়তো তাই হতো। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নারী বা শিশুরা রাস্তাঘাটে যৌন হয়রানির শিকার হলে অপিরিচিত পুর্যষ বা নারীরা গা করেন না, সাহায্যের হাত বাড়ান না। আমার মতে এই ছাত্রীরা সবচাইতে কার্যকর ব্যবস্থা নিয়েছেন। তবে দুঃখজনক হলো এই অনেকের জন্য উদাহরণস্বরূপ ঘটনা জাতীয় দৈনিকে স্থান পায়নি!
২. ফটিকছড়িতে জাফতনগর ইউনিয়নের হাফেজুল উলুম মাদ্রাসার ৯ বছরের ছাত্রীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে মাওলানা একরাম উল্লাহর (২৪) বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ওই ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে নারী শিশু নির্যাতন আইনে ফটিকছড়ি থানায় মামলাটি দায়ের করেন এ বছরের ২৯শে মার্চ। হাতে গোনা দুয়েকটি পত্রিকায় খবরটি ছাপা হয়। ছাত্রীটিকে প্রতিদিন যৌন নির্যাতন করতো একরাম। এজন্য তার অভিভাবকের কাছে এ বিষয়ে কয়েকবার অভিযোগ করা হয়েছে। ঘটনার দিনও ছাত্রীটি মাওলানার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করলে ছাত্রীর অভিভাবক ও স্থানীয় জনতা মাদ্রাসায় গিয়ে ওই মাওলানাকে গণধোলাই দেয়। এক পর্যায়ে জাফতনগর ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল হালিম ও ফটিকছড়ি থানার উপ–পরিদর্শক শফিকুর রহমান ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে জনতার গণধোলাই থেকে তাকে উদ্ধার করে।
উল্লেখ্য মাওলানা একরাম উগ্রপন্থী ইসলামী সংগঠন হেফাজতে ইসলামের নেতা। এই রাজনৈতিক ও ধর্মব্যবসায়ি দল মনে করে নারীদের পর্দা করা উচিত নইলে তারা রাস্তাঘাটে বা অন্যান্য স্থানে যৌন হয়রানির শিকার হতে পারে, কারন পুরুষরা নারীদের দ্বারা আকৃষ্ট হয়। আমি দেড় বছরের শিশুর ধর্ষিত হবার খবরও অনেক দেখেছি। ঐসব শিশুরা কিভাবে পুরুষদের যৌনতার উদ্রেগ করে তা আমার জানতে খুব মন চায়।
৩. এই ঘটনাটি আমার খুব কাছের এক বন্ধু বলেছিল, খুব গর্ব করে বলেছিল। আমার মনটা খুশিতে ভরে গিয়েছিল। আমি এই গল্পটি অনেককেই বলেছি, সাহস দিতে।
লোকাল বাসে করে অফিসে যাবার সময় পেছনের সিটের কেউ আমার বন্ধুর গায়ে হাত দিচ্ছিলো, সিটের পাশের অল্প ফাঁক জায়গা দিয়ে! দুই-তিনবারের মাথায় ওৎ পেতে থাকা আমার বন্ধুটা সেই অমানুষটার হাত খামচে ধরে ফেলে, সাথে সাথেই চিৎকার করে উঠে। টেনে হিঁচড়ে লোকটাকে বাসের মাঝখানে টেনে আনে সে, তারপর চড়, ঘুষি, লাত্থি চালাতে থাকে। রাগে মাথায় রক্ত উঠে গিয়েছিল আমার বন্ধুটার, চিৎকার করে গালিগালাজ করছিল সে। শেষমেষ লাত্থি দিয়ে বাসের দরজা দিয়ে ইসলামিক টুপি পড়া লোকটাকে ফেলে দিলো আমার বন্ধুটা।
রাগে গজগজ করে আমাকে যখন বলছিলো ঘটনাটা আমি ওকে বারবার বাহবা দিচ্ছিলাম, এখনো দিচ্ছি।
এরকম নারী-মেয়েশিশু চাই এইদেশে। খুব বেশি না হলেও এখনো অনেক মানুষ আছে তোমাদের পাশে দাঁড়াতে।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগইন করতে হবে।