বাংলাদেশের বিচারিক ব্যবস্থা নিয়ে আইন কমিশনের একটি স্পর্শকাতর তদন্ত প্রতিবেদন ২০১৪ সালের আগস্টে ঢাকা ট্রিবিউন পত্রিকার প্রথম পাতায় ছাপা হলেও অন্য কোথাও তা দেখা যায়নি। অথচ এটা নিয়ে টানা কয়েক সপ্তাহ মাতামাতি হবার কথা!
আইনের শাসন, সাংবিধানিক বিধিনিষেধকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে নিম্ন আদালতের বিচারক থেকে শুরু করে বেঞ্চ সহকারী, হাইকোর্টের কর্মচারী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিভাবে বছরের পর বছর পার পেয়ে যাচ্ছে তার করুণ বিবরণ ছিল সেই প্রতিবেদনে।
পরিস্থিতির সংস্কার জরুরি মনে করে কমিশনের চেয়ারম্যান এবিএম খায়রুল হক, যিনি একজন প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি, ১৬-দফা সুপারিশমালা দিয়েছিলেন। যার কোনটি বাস্তবায়ন হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়না।
তদন্তটি করা হয় নব্বই-এর দশকে এডফ্লেম ফার্মা’র বিষাক্ত প্যারাসিটামল সিরাপ খেয়ে কমপক্ষে ৭৬জন শিশু মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলাটির “দীর্ঘসূত্রীতার কারণ নির্ধারণ” করতে গিয়ে। ১৯৯২ সালের ডিসেম্বরের ২২ তারিখে এই মামলাটি করা হলেও রায় হয় ২০১৪ সালের ২৩শে জুলাই – অর্থ্যাৎ প্রায় ২১ বছর ৭ মাস লাগে।
রায়ে আসামীদের ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয় যা কিনা এই আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি!!!
“এই ঘটনা আমাদের বিচার ব্যবস্থার সংগে সংশ্লিষ্টদের চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় বহন করে। বহুল প্রচলিত প্রবাদ বাক্য Justice Delayed Justice Denied এর জ্বলন্ত প্রমাণ…
“মামলাটি কেবল বিচারিক আদালতে রায়ের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়েছে। এরপর হাইকোর্ট বিভাগে আপীল হতে পারে, এমনকি আপীল বিভাগেও যেতে পারে। মামলার কার্যক্রম সম্পন্ন হতে যে সময় লেগেছে তাতে এই মামলা চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হতে আরও কত বছর লাগতে পারে তা অনিশ্চিত। এটা নগ্ন সত্য।
“এই বিচার ব্যবস্থা নিয়ে বাংলাদেশের মালিক জনগণের নিকট লজ্জায় মুখ লুকানো ছাড়া আমাদের আর গত্যন্তর নাই।
“এই ধরণের অসহনীয় বিচারিক পরিস্থিতির পরিবর্তন দেশের ও জাতির স্বার্থে একান্ত প্রয়োজন। যদিও এ ধরণের সংস্কার তাৎক্ষনিকভাবে করা সম্ভব নয়, কিন্তু এখনই এর সূচনা করা আবশ্যক।”
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগইন করতে হবে।