বৈষম্যবিরোধী ও সংস্কারবাদী সুশীলদের আমলেও মামলা প্রত্যাহারের হিড়িক

৫ই আগস্ট ক্ষমতার পালাবদলের পর ইতিমধ্যে হাজার হাজার রাজনৈতিক নেতাকর্মী, শীর্ষ তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ও ভয়ংকর জঙ্গীদের নির্বাহী আদেশে কারামুক্ত করেছে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত ছাত্র, জনতা ও সুশীলদের সরকার। এছাড়া সুপ্রিম কোর্ট থেকে শুরু করে বিচার বিভাগের সর্বত্র দলীয়করণের পর নিয়মিতভাবে দন্ডপ্রাপ্ত আসামীদের বিরুদ্ধে দেয়া রায় আদালতের মাধ্যমে বাতিল করে তাদের কারাগার থেকে মুক্তি দেয়া হচ্ছে।

এরই ধারাবাহিকতায় ২১শে জানুয়ারি আইন উপদেষ্টা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ২৫টি জেলায় গত ১৭ বছরে দায়ের করা ২,৫০০ রাজনোৈতিক হয়রানিমূলক মামলা আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে প্রত্যাহার করা হবে। বাকি মামলাগুলো চিহ্নিত করে ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে প্রত্যাহার করা হবে।

তবে বিএনপি বলছে, ২০০৯-২৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৫০ লক্ষ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ১,৪১,৬৩৩টি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। এরপর ১৫ই নভেম্বর থেকে ১৯শে জানুয়ারির মধ্যে দায়ের করা ৫১৩টি মামিলায় ১৩,৫৩০ জনকে আসামী করা হয়।

আইন উপদেষ্টা বলেন, “গায়েবি মামলা চিহ্নিত করতে আমরা চারটি ভাগে ভাগ করেছি। প্রথমত, মামলাগুলো পুলিশ করেছে কিনা। দ্বিতীয়ত, এসব মামলার বেশির ভাগই ছিল বিস্ফোরক ও অস্ত্র আইনে, পুলিশের ওপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়া। তৃতীয়ত, এসব মামলায় অনেক বেশি আসামি অর্থাৎ অজ্ঞাতনামা হাজার হাজার আসামি থাকে। চতুর্থত, বিরোধী দলগুলোর বড় কোনও সমাবেশের আগে বা পরে এবং ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়ে তিনটি ভুয়া জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরে করা মামলাগুলো আমলে নেওয়া হয়েছে।”

এর আগে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর ৭,২৪৯টি মামলা প্রত্যাহারের জন্য সুপারিশ করে। অন্যদিকে ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে জামাত-বিএনপি-হেফাজত সরকার ৫,৮৮৮টি মামলা প্রত্যাহার করে।

উল্লেখ্য, ৮ই আগস্ট অধ্যাপক ইউনূসের সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের সব বিচারককে পদত্যাগ করতে বাধ্য করে সরকারের বি-টিম হিসেবে পরিচিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। এছাড়া আদালত প্রাঙ্গনে নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতিতে আসামীদের উপর হামলা, আইনজীবী নিয়োগে বাধা, বারবার রিমান্ডে নেয়া, উদ্ভট গায়েবি মামলা দায়ের এবং গণগ্রেপ্তারের ফলে আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার নিয়ে উদ্বেগ ক্রমশঃ বাড়ছে।

এই সরকার সংবিধান মোতাবেক শপথ নিলেও প্রধান উপদেষ্টা থেকে শুরু করে সরকারের ছাত্র সমন্বয়করা প্রতিনিয়ত সেটি অবজ্ঞা করছে এবং বিপ্লবী সরকারের মতো আচরণ করছে। তারা ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় মব রুল ব্যবস্থা চালু করেছে এবং ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে বেসরকারি সশস্ত্র দল গঠন করছে।

সংবিধান বিশেষজ্ঞ শাহদীন মালিক মনে করেন এভাবে মামলা প্রত্যাহার স্পষ্টতঃই আইনের শাসনের পরিপন্থী। এতে বুঝা যায় ক্ষমতাসীন দলগুলি ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার ব্যাপক অপব্যবহার করছে।

২০১৪ সালে তিনি একটি পত্রিকাকে বলেন, এটি শীঘ্রই বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা কম কারণ আমাদের রাজনৈতিক দলগুলি আইন অনুসারে শাসন করে না এবং করতে পারে না। তারা ক্ষমতার অপব্যবহার এবং অপব্যবহারের মাধ্যমে শাসন করে এবং সম্ভবত তা চালিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

Comments

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

bn_BDবাংলা
Powered by TranslatePress