সাধারণ স্কুল শিক্ষার্থীদের মুখ বন্ধ করতে চাচ্ছে ফ্যাসিবাদবিরোধী সুশীল সরকার!

ফ্যাসিবাদবিরোধী গণঅভ্যুত্থানের সাড়ে ৫ মাস পার হওয়ার পর জুলাই-আগস্টের অগ্রণী ও অকুতোভয় সৈনিক তথা স্কুলের শিক্ষার্থীদের উপর খড়গহস্ত হলো তাদেরই প্রতিষ্ঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

১৫ই জানুয়ারি প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন দপ্তর-সংস্থার মাসিক সমন্বয় সভায় বর্তমান সরকার এবং রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যেকোনো ধরনের অপপ্রচার, প্রোপাগান্ডা, গুজবে উদ্বুদ্ধ হয়ে শিক্ষার্থীরা যাতে কোনো উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত না হয়, সে বিষয়ে মাঠপর্যায়ের সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক ও তৎপর থাকতে বলা হয়েছে।

এসব বিষয়ে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা কোনো শিক্ষার্থী সংশ্লিষ্ট থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে।

গত ২ জানুয়ারি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন উইং থেকে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়।

উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড বলতে সরকার কি বুঝাচ্ছে সেটি পরিষ্কার না হলেও ধারণা করা যায় যে, শিক্ষার্থীরা যেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, স্কুল প্রাঙ্গন ও রাস্তাঘাটে সরকারের বিরুদ্ধাচারণ না করে।

অর্থ্যাৎ, এই মুহুর্তে অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার মনে করছে তাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার, প্রোপাগান্ডা ও গুজব চালু আছে, যা স্কুলের শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করতে পারে। ফলে অদূর ভবিষ্যতে এরা সরকারের জন্য বড় একটি হুমকি হয়ে উঠতে পারে।

বিজ্ঞপ্তিটির বিষয়বস্তু সতর্কতামূলক হলেও এর অন্তর্নিহিত অর্থ খুবই আশংকাজনক।

ফলে স্বাভাবিকভাবেই এই বিজ্ঞপ্তি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। এর প্রেক্ষিতে বুধবার (২২ জানুয়ারি) দুপুরে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে এক সভায় শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন নির্দেশনটি প্রত্যাহার করা হবে।

হাস্যকর হলেও সত্য যে, এই অদক্ষ, অযোগ্য ও বেহায়া উপদেষ্টা জানান, এ ধরনের কোনো বিজ্ঞপ্তি জারির বিষয়ে তিনি অবগত ছিলেন না। এটি কীভাবে ঘটলো, সে বিষয়ে নাকি খতিয়ে দেখা হবে।

উল্লেখ্য, গত সাড়ে ৫ মাসে এই উপদেষ্টা আরও অনেকবার এরকম ব্লান্ডার করেছেন। কিন্তু এই বয়োবৃদ্ধ প্রগতিশীল অর্থনীতিবিদের কোন লজ্জাশরম নাই। অতীতের রাজনৈতিক সরকারের আমলে তিনি গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসন নিয়ে সবক দিলেও এখন নিজেই এক নব্য ফ্যাসিস্টের দোসর হয়ে উঠেছেন। জানিনা তিনি কোথায় থামবেন।

গত কয়েকমাস ধরে অদক্ষতা, অযোগ্যতা, খামখেয়ালিপনা, নিয়োগ-পদোন্নতিতে পক্ষপাতসহ মুক্তিযুদ্ধ-আওয়ামী লীগ-বিএনপি, ভারত ও হিন্দুদের বিরুদ্ধে ঘৃণাবিদ্বেষ ছড়ানো, মিথ্যা অভিযোগ ফলাও করে প্রচার করা ও সহিংসতার মদদ দেয়া এবং বিচার বিভাগকে ব্যপকভাবে অপব্যবহারের কারনে জাতিসংঘ থেকে শুরু করে বাংলাদেশের নিরপেক্ষ সিনিয়র সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষকদের কাছে সরকারের গ্রহণযোগ্যতা অনেক কমে গেছে।

এর বাইরে সরকারের নিয়োগকর্তা হিসেবে পরিচয় দানকারী প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও তাদের অছাত্রদের দল জাতীয় নাগরিক কমিটির স্বৈরাচারী ও সহিংস আচরণের কারনে দেশবাসীর কাছে এটি স্পষ্ট যে, জামায়াত-শিবির ও তাদের সমমনা দলগুলোর নেতা-কর্মীরা আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করতে পরিকল্পিতভাবে আগে কোটাবিরোধী আন্দোলন শুরু করে এবং নিজেদের রাজনৈতিক পরিচয় লুকিয়ে প্রগতিশীল ও মুক্তিযুদ্ধপন্থী বিষয়বস্তুকে সামনে এনে জনগণকে সম্পৃক্ত করেছিল।

অন্যদিকে আন্দোলনে আহত-নিহতদের নির্ভুল তালিকা তৈরি করতে না পারা এবং সবার কাছে আর্থিক সহায়তা পৌঁছাতে না পারার ব্যর্থতাকে অনেকেই দৃষ্টিকটু বলছে।

এখন তাদের আসল পরিচয় সামনে আসায় অনেক রাজনৈতিক ও পেশাজীবি সংগঠন এবং সাধারণ মানুষ এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও এর ছাত্র-যুব শাখাগুলোর প্রতি সমর্থন প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। অনেকেই তাদেরকে গণশত্রু হিসেবে আখ্যা দিচ্ছে। বিশেষ করে সরকারের উপর জামায়াতে ইসলামীর প্রভাব বেশি হওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়েছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো।

২৩শে জানুয়ারি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমি এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বলেছি, অন্তর্বর্তী সরকার যদি নিরপেক্ষ না থাকে, তাহলে নির্বাচনের সময় একটি নিরপেক্ষ সরকার দরকার আছে। আমি এই কথাটা বলেছি, কারণ আমরা দেখছি কিছু বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে পারছে না। আমরা আশা করি অন্তর্বর্তী সরকার নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করবে।

নির্বাচন থেকে আমরা প্রায় ১৫ বছর বঞ্চিত মন্তব্য করে তিনি বলেন, “নির্বাচনটা দ্রুত হওয়া দরকার। নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করার সুযোগ পাবে। জোর করে যদি সেই বিষয়টাকে বিতর্কিত করে ফেলা হয়, জনগণ তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে।”

“তৃতীয় মাত্রা” টকশোর সঞ্চালক এবং ইউনূস সমর্থক এনজিও ব্যবসায়ী জিল্লুর রহমান সম্প্রতি এক ভিডিও মেসেজে বলেন, ৫ই আগস্টের পর বাংলাদেশ নতুনভাবে যাত্রা শুরু করেছে। কিন্তু ৫ মাস না যেতেই আমাদেরকে এখন সরকারের ভুল নিয়ে আলোচনা করতে হচ্ছে। এই ভুলের পরিমাণ এক জায়গায় রেখে কেউ যদি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হন, তাহলে বলতে হবে যে সরকার পারফর্ম করতে পারছে না, ফাংশন করতে পারছে না।

তিনি আরও বলেন, অর্থনীতি ঠিক নেই, আইনশৃংখলা পরিস্থিতি ভালো নেই, প্রশাসন কাজ করছে কিনা যথেষ্ট সন্দেহ আছে। আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শক্তিগুলো এই সরকারকে কিভাবে নিচ্ছে বুঝা যাচ্ছে না। এরকম একটা সংকটের মধ্যে বাংলাদেশ আছে।

অন্যদিকে, সরকার ও সমর্থক ছাত্র-যুবকদের কর্মকান্ডে বিরক্ত হয়ে সাংবাদিক মাসুদ কামাল ২২শে জানুয়ারি বলেন, “আমরা যাদেরকে যা ভেবেছিলাম, তারা বুঝি তা নয়!”

২৩শে জানুয়ারি বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেছেন, এই সরকারের ওপর খুব বেশি আশা করে লাভ নেই। রাজনৈতিক দলগুলো যদি পরিপূর্ণভাবে সহযোগিতা না করে, তাহলে সরকারের পক্ষে একা তেমন কিছুটা করা সম্ভব হবে না। সরকার কিছুটা ভিত্তি তৈরি করতে পারে। কিন্তু বাকিগুলো রাজনৈতিক দলগুলোকে করতে হবে। দূরবর্তী চিন্তা করেই তাদের এগোতে হবে।

এর আগে ১৮ই জানুয়ারি সাইফুল হক বলেন, পাঁচ মাস পার হলেও অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক দল ও জনগণের নজিরবিহীন বিপুল সমর্থনকে উপযুক্তভাবে কাজে লাগাতে পারছে না। জনগণের বিরাট আস্থার মর্যাদা রাখতে পারছে না। কাজের অগ্রাধিকারও ঠিক করতে পারছে না।

তিনি বলেন, বাজার পরিস্থিতি এখনও অনেকটা বেসামাল। সরকার কোনোভাবেই বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। জীবন-জীবিকা নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা অব্যাহত রয়েছে। অস্বাভাবিকভাবে শতাধিক পণ্যের ওপর ভ্যাট ও কর আরোপের সিদ্ধান্ত বাজারের আগুনে পুড়তে থাকা মানুষের ওপর বিপদ চাপিয়ে দেওয়ার সামিল।

Comments

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

bn_BDবাংলা
Powered by TranslatePress