রবিবার সারাদিন দেশের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ছিল শাহবাগ এলাকায় এবতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষক ও শিক্ষিকাদের উপর পুলিশ কর্তৃক অমানবিক লাঠিচার্জ, জলকামান ও টিয়ারগ্যাস। এত নির্যাতনের পরেও মাদ্রাসা শিক্ষকরা শাহবাগে তাদের অবস্থান জারি রাখেন। সোমবার ভোর ৪টায় তারা সেখানে ছিলেন বলে দেখা যায়।
সন্ধ্যায় নতুন একটি ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়: ৭ কলেজের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, যা মূলত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি মামুন আহমেদ ক্ষমা চাওয়া নিয়ে শুরু হয়। তিনি কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদের সাথে মারমুখী আচরণ করেছিলেন এবং অপমানসূচক কথা বলেন।

এরপর সরকারপন্থী ছাত্র সমন্বয়করা সারা ক্যাম্পাসে তাদের সদস্যদের জড়ো করে পুলিশকে সাথে নিয়ে সায়েন্স ল্যাব, ঢাকা কলেজ ও নীলক্ষেতে অবস্থান নেয়া কলেজ শিক্ষার্থীদের উপর লাঠিচার্জ, ইট-পাথর নিক্ষেপ, সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারগ্যাস নিয়ে হামলে পড়ে। এক পর্যায়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে বিক্ষোভকারীদের উপর হামলা করে পুলিশ।
এ সময় অন্তত ২০ জন কলেজ শিক্ষার্থী আহত হন এবং এদের মধ্যে রাকিব নামের একজনের অবস্থা আশংকাজনক বলে সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে।
তবে সংঘর্ষের ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে ফেসবুকে অনেক গুজব ছড়িয়ে পড়ে। যেমন ৫/১০/১৫/১৭ জনের মৃত্যু, ইডেনের নারী শিক্ষার্থীদের ধর্ষণ ইত্যাদি।
অন্যদিকে কলেজ শিক্ষার্থীদের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে দেখা যায় তারা দুজনের মৃত্যু ও ৩০০ জন আহতের কথা উল্লেখ করেছেন।

বিভিন্ন টিভি চ্যানেল ও পত্রিকার সাংবাদিকরা ফেসবুক ও ইউটিউবে লাইভ করতে গেলে সমন্বয়ক ও পুলিশের হামলায় আহত হন অন্তত ৬ জন।
এদের মধ্যে লাইভে ছিলেন কালের কন্ঠের সাংবাদিক খন্দকার আসিফুজ্জামান। তিনি তার মোবাইল ক্যামেরায় পুলিশী একশন দেখাচ্ছিলেন। হঠাৎ করে সমন্বয়ক মহিউদ্দিন রনি তার দলবলসহ সেখানে উপস্থিত হয়ে সাংবাদিককে “আওয়ামী দোসর, কালপ্রিট” বলে তার লাইভ বন্ধ করে দেয় এবং তাকে মারধর করে।
এই রনিকে দেখা যায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার এক পর্যায়ে বিজিবিকে বলছে কলেজ ছাত্রদের গুলি করার জন্য!
আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায় জুলাই অভ্যুত্থান ও সচিবালয়ে নাশকতাকারী সমন্বয়ক হাসিব আল ইসলাম ও আব্দুল হান্নান মাসুদকে।

অন্যদিকে আরেক ছাত্র সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ঘটনাস্থলে এসে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সাথে আলাপ করতে চাইলে বিক্ষোভকারীরা তাকে “ভুয়া ভুয়া” বলে তাড়িয়ে দেয়। কেউ কেউ তাকে চড়, লাথি দিলে তিনি স্থানত্যাগ করেন। পরে অন্য একটি স্পটে পুলিশের মারা টিয়ারগ্যাসে তার চোখ জ্বলা শুরু হলে তিনি তার দলসহ এলাকা ত্যাগ করেন।
ফিরে যাওয়ার সময় তার সাথে থাকা ছাত্রদের তিনি বলেন, “পালাতে হচ্ছে, ছাত্রলীগ এটা থেকে সুবিধা নিবে।” তখন একজন বলল, “ছাত্রলীগের চেয়ে ছাত্রদল বেশি নিবে।”
সংঘর্ষের খবরে মাঝরাতের পর ইডেন কলেজের কয়েকশো নারী শিক্ষার্থী গেট খুলে বাইরে চলে আসেন এবং সমন্বয়কারী ও ঢাবি প্রো-ভিসির বিরুদ্ধে শ্লোগান দেন। তাদের বিখ্যাত একটি শ্লোগান ছিল, “আবার ডাকলে রাজুতে, জুতা মারব মুখেতে”।
অবশেষে পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার পর ৭ কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিরা সংবাদ মাধ্যমের সাথে কথা বলে সোমবার থেকে ঢাকার ৭টি পয়েন্টে অনির্দিষ্টকালের জন্য ব্লকেড কর্মসূচি ঘোষণা দেন।
এছাড়া তারা শিক্ষা উপদেষ্টা, ঢাবির জামাতপন্থী ভিসি, প্রো-ভিসি ও প্রক্টর, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, ডিএমপি কমিশনার ও নিউ মার্কেট থানার ওসির পদত্যাগসহ ৫টি দাবী তুলে ধরেন।
তারা বলেন সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
অন্যদিকে গভীর রাতে এক সিদ্ধান্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ৭ কলেজের সোমবারের পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করে।

রাত আরও গভীর হলে ঢাবি শিক্ষার্থীদের নিজেদের মধ্যে আলোচনার কিছু স্ক্রিনশট ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে দেখা যায় তারা বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্র জোগাড় করে কলেজ শিক্ষার্থীদের উচিত শিক্ষা দেয়ার পরিকল্পনা করছিল। সেই গ্রুপের শিক্ষার্থীদের যাদের নাম পাওয়া গেছে তারা হলো হাসান, তপু, রেজা, ইফতি ও আশিক।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগইন করতে হবে।