আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কিনা, দলের প্রধান নেতাদের বিচার নির্বাচনের আগে শেষ হবে কিনা, দলের সভাপতি শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফিরিয়ে আনা যাবে কিনা, ছাত্রলীগের মতো আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হবে কিনা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা সমালোচনার মাঝে মঙ্গলবার হঠাৎ রাজনৈতিক কর্মসূচি দিলো দলটি।
১লা ফেব্রুয়ারি শুরু হবে ৯ দিনের এই কর্মসূচি। দলটি জানায়, দেশের মানুষের রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের এ সকল কর্মসূচিতে কোনো প্রকার বাধা প্রদান করা হলে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
সরকার ফ্যাসিবাদী হয়ে উঠেছে, পারফর্ম করতে পারছে না
সবচেয়ে বড় চমক দেখালো সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে সে লিখেছে, মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে যাঁরা যাবেন, তাঁরা সামনেও পরাজিত হতে বাধ্য। ‘যেমন, শেখ মুজিবের ফ্যাসিস্ট হয়ে ওঠা নিয়ে আমরা বলব। উনি ফ্যাসিস্ট ছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশের জন্মে অনেক জাতীয় নেতৃত্বের মতো ওনার অবদান অনস্বীকার্য। তাই আমরা ’৭২–পূর্ব শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রাপ্য গুরুত্ব দেব। মুক্তিযোদ্ধাদের একাংশ ফ্যাসিস্ট হতে পারেন, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ ছিল আপামর জনগণের লড়াই। মুক্তিযোদ্ধাদের একাংশের ফ্যাসিস্ট, ইসলামফোবিক ও খুনি হয়ে ওঠার কারণে আপনি খোদ মুক্তিযুদ্ধ বা সকল মুক্তিযোদ্ধাকে অস্বীকার কিংবা প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারেন না। এটা রাষ্ট্রের ভিত্তির সাথে গাদ্দারি!’

অবশ্য দুই দিন আগে লক্ষ্মীপুরে এক জনসভায় সে উল্টো বক্তব্য দিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছিল। সে বলেছিল, যারা বাংলাদেশপন্থী, তাদের মধ্যে নির্বাচন হবে। বাংলাদেশ বিরোধী, আওয়ামী লীগ ফ্যাসিবাদীদের কোনোভাবেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হবে না।
এর আগে ২৩শে জানুয়ারি সরকার ও জামায়াত-শিবির সমর্থিত জাতীয় নাগরিক কমিটি বলেছে, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে নতুন রাজনৈতিক দলের ঘোষণা আসবে।
সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেছেন, ইতিমধ্যে জাতীয় নাগরিক কমিটি ২০০ থানা কমিটি করেছে। জানুয়ারি মাসের মধ্যে ৪ শতাধিক থানা কমিটি হয়ে যাবে। জাতীয় নাগরিক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সারা দেশে কাজ করছে। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে দল ঘোষণা করা হবে।

তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে অনেকেই আওয়ামী লীগকে নিয়ে আসবার একটা পাঁয়তারা করছে। এটা স্পস্টত যে দিল্লির সঙ্গে সম্পর্ক থাকায় এ ধরনের কথা বলা সম্ভব। দিল্লির মদদেই হয় তো এ ধরনের কথাগুলো বলা হচ্ছে যে আওয়ামী লীগকে নিয়ে আসতে হবে। আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশে রাজনীতি করতে দেওয়া হবে না। যাঁরাই আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে আনার চেষ্টা করবে তাঁদের বিরুদ্ধেই দেশের জনগণ সর্বশক্তি দিয়ে রুখে দাঁড়াবে।
এদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মঙ্গলবার বলেছেন, জনগণের বিপক্ষে কাজ করলে ৫ই আগস্টের মতো পরিণতি হবে।
একই দিন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে জামায়াতিকরণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আজ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিশেষ একটি দল দখল করে নিয়েছে। সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে জামায়াতিকরণ করা হয়েছে। বড় বড় বিশ্ব বিদ্যালয়ের দায়িত্বে বসানো হয়েছে জামায়াতি চেতনার লোকজনকে। আমাদের সমর্থিত লোকজন যেমনভাবে আওয়ামী লীগের আমলে বঞ্চিত হয়েছে, তেমনইভাবে এখনও বঞ্চিত হচ্ছে।

অন্যদিকে, ২৭শে জানুয়ারি চরমোনাই পীরের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বৈঠকে নেওয়া যৌথ সিদ্ধান্তগুলো হলো:
১. আধিপত্যবাদ, সম্প্রসারণবাদ ও সাম্রাজ্যবাদমুক্ত স্বাধীন সার্বভৌম টেকসই গণতান্ত্রিক কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা।
২. দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী, খুনি ও টাকা পাচারকারীদের দ্রুত বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা।
৩. ভোটাধিকারসহ সব মানবাধিকার রক্ষায় জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলা।
৪. ন্যূনতম প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করা।
৫. দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ এবং সব অধিকার বঞ্চিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করা এবং আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক করে নিয়ে আসা।
৬. আওয়ামী ফ্যাসিবাদবিরোধী সব শক্তি দেশ পুনর্গঠনে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা।
৭. ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলো একে অপরের বিরুদ্ধে আঘাত করে কথা না বলা।
৮. আগামীতে যাতে আওয়ামী লীগের মতো কোনও ফ্যাসিবাদী শক্তি ক্ষমতায় আসতে না পারে, সে ব্যাপারে রাজনৈতিকভাবে ঐক্যবদ্ধ থাকা।
৯. ইসলামি শরিয়াহবিরোধী কোনও সিদ্ধান্ত না নেওয়া এবং ইসলামবিরোধী কোনও কথা না বলা।
১০. প্রশাসনে বিদ্যমান আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসরদের দ্রুত অপসারণ করা।
আওয়ামী লীগের কর্মসূচি
২৮শে জানুয়ারি মঙ্গলবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অবৈধ ও অসংবিধানিক সরকারের অপশাসন-নির্যাতন-নিপীড়নের প্রতিবাদ, দেশের জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও দখলদার ফ্যাসিস্ট ইউনূসের পদত্যাগের দাবীতে এসব কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১৯৭১ সালে আমাদের সুমহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী বাংলাদেশ আজ ক্ষত-বিক্ষত, রক্তাক্ত জনপদ। অবৈধ ও অসাংবিধানিক জোরপূর্বক ক্ষমতা দখলদার, ইতিহাসের জঘন্যতম রক্তপিপাসু ফ্যাসিস্ট ইউনূস ও তার দোসরদের সীমাহীন ধ্বংসযজ্ঞ ও তাণ্ডবে ত্রিশ লক্ষ শহিদের আত্মত্যাগ এবং ২ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে অর্জিত প্রাণপ্রিয় মাতৃভূমি আজ প্রতিহিংসার দাবানলে দাউ দাউ করে জ্বলছে। উগ্র-জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষক ও তার দোসরদের হঠাও ও বাংলাদেশ বাঁচাও। দেশের গণতন্ত্র আজ নির্বাসিত। মানবাধিকার আজ ভূ-লুণ্ঠিত, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা লুপ্ত। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধ বিসর্জিত। আইনের শাসন অস্তমিত। এমতাবস্থায় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কন্যা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্য দুর্বার গণ-আন্দোলন গড়ে তুলুন।
- বেআইনি ও অবৈধ আইসিটি ট্রাইব্যুনালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে মিথ্যা হত্যা মামলাসহ অন্যান্য মামলা প্রত্যাহার এবং প্রহসনমূলক বিচার বন্ধের দাবিতে
- হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানসহ ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও আদিবাসী জাতি গোষ্ঠীর উপর হামলা ও হত্যাযজ্ঞ এবং বিভিন্ন ধর্মীয় উপসনালয়ে হামলা ও ভাঙচুরের প্রতিবাদে
- মেটিক্যুলাস ডিজাইনের মাধ্যমে শিশু, ছাত্র-জনতা,পুলিশ বাহিনীর ৩ হাজারের বেশি সদস্য এবং আনসার বাহিনীর সদস্যদের হত্যাসহ সকল হত্যার বিচারের দাবিতে
- আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও দেশব্যাপী খুন-ধর্ষণ-চাঁদাবাজি-ডাকাতি-রাহাজানির প্রতিবাদে এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তার দাবিতে
- সারা দেশে হাজার হাজার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ব্যক্তিদের গুম, খুন ও হত্যার প্রতিবাদে
- দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে
- ফ্যাসিস্ট ইউনূসের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও কর ফাঁকির মামলা প্রত্যাহার, গ্রামীণ ব্যাংককে ৫ বছরের কর অব্যাহতি প্রদান এবং ভ্যাট-ট্যাক্স বৃদ্ধি করে জনগণের উপর বোঝা চাপানোর প্রতিবাদে
- সরকারের প্রতিটি সেক্টরে লাগামহীন দুর্নীতি ও বিদেশে টাকা পাচারের প্রতিবাদে
- শেয়ারবাজারে অর্থ কেলেঙ্কারি, ব্যাংকগুলো ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ ধ্বংসের প্রতিবাদে
- সুফিসাধক, বাউল সঙ্গীত শিল্পী, শিল্পী,সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, আইনজীবী, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বের উপর আক্রমণ ও শত শত বছর পুরনো মাজারে হামলা ও ভাঙচুরের প্রতিবাদে
- গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শিল্প-কারখানা বন্ধের ফলে নারী শ্রমিকসহ লক্ষ লক্ষ শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়ার প্রতিবাদে
- গণমামলা, নির্বিচারে গণগ্রেফতারের প্রতিবাদে ও রাজবন্দীদের মুক্তির দাবিতে
- সর্বোপরি অবৈধ ও অসাংবিধানিক দখলদার খুনি-ফ্যাসিস্ট ইউনূস সরকারের পদত্যাগের দাবিতে
ফেব্রুয়ারি ২০২৫-এ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের গৃহীত কর্মসূচিসমূহ:
১ ফেব্রুয়ারি, শনিবার থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি,বুধবার: লিফলেট বা প্রচারপত্র বিলি।
৬ ফেব্রুয়ারি, বৃহস্পতিবার : প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ
১০ ফেব্রুয়ারি, সোমবার : বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ
১৬ ফেব্রুয়ারি, রবিবার: অবরোধ কর্মসূচি
১৮ ফেব্রুয়ারি, মঙ্গলবার: দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা সর্বাত্মক কঠোর হরতাল।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগইন করতে হবে।