ইউনূস ছোটবেলা থেকেই মিথ্যেবাদী, সুবিধাবাদী

১৯৪৭ সালের ১৩ই আগস্ট। চট্টগ্রাম নগরীর বক্সিরহাট এলাকার রাস্তাঘাট ও সব বাড়িঘরে পাকিস্তানের চাঁদ-তারকাখচিত পতাকা ও সাদা-সবুজ ফেস্টুন উড়ছে; রাজনৈতিক বক্তব্য ও হাজার হাজার এলাকাবাসীর ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ শ্লোগানে মুখরিত ছিল পুরো এলাকা।

মধ্যরাতের আগেই ২০ নং বক্সিরহাটের (সোনাপট্টি) দোতলা বাড়ির ছাদ থেকে আতশবাজি পোড়ানো হয়। বড়ির কর্তা দুলা মিয়া সওদাগর ছিলেন মুসলিম লীগ ন্যাশনাল গার্ডের সদস্য। পাকিস্তান সৃষ্টির আনন্দে গর্বভরে সেই বাহিনীর উর্দি পরে নিলেন। এরপর জিন্নাহ টুপিটা পরে তার ছোট ছেলেমেয়েদের নিয়ে রাস্তায় নামেন।

ঠিক ১২টায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং পরক্ষণেই বিদ্যুৎ আসে নতুন এক দেশে। ভারতবর্ষ ভাগ হয়ে পাকিস্তানের অংশ হয়ে যায় চট্টগ্রাম। ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ শ্লোগানে মুখরিত হয় পুরো শহর। মুহুর্মুহু আতশবাজিতে উজ্জ্বল হয় রাতের আকাশ।

স্বর্ণের কারিগর এবং পাকিস্তান মুভমেন্টের অন্যতম সমর্থক দুলা মিয়ার ছেলেরা ভারত বিভাগ ও পাকিস্তান সৃষ্টির পক্ষে গভীরভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল। সাত বছর বয়সী মুহাম্মদ ইউনূসের জন্য এটি ছিল গর্বের একটি মুহুর্ত যা সে শিরায় শিরায় অনুভব করছিল। তার স্বপ্ন ও আশা সেদিন পূরণ হয়।

ইউনূস ছাড়াও সেই রাতে দুলা মিয়া তার ১০ বছর বয়সী বড় ছেলে সালাম, দুই বছরের ইব্রাহীম ও কোলের শিশু টুনুকে নিয়ে রাস্তায় নেমেছিল।

সালাম ছিল ইউনূসের খেলার সাথী, বই পড়ার সঙ্গী ও রাজনৈতিক বিষয়ের তথ্যদাতা। সালাম যখন তার বন্ধুদের সাথে পতাকা নিয়ে ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ শ্লোগান দিত, ইউনূসের তখন হিংসা হতো।

দুই বছরের ইব্রাহীম তখন মাত্র কথা বলা শিখছে। সেও নাকি সাদা চিনিকে ‘জিন্নাহ চিনি’ এবং লাল চিনিকে ‘গান্ধী চিনি’ বলতো।

তাদের মা সুফিয়া খাতুন বাচ্চাদেরকে প্রতিদিন সন্ধ্যায় জিন্নাহ, গান্ধী ও লর্ড মাউন্টব্যাটেন সম্পর্কে গল্প বলতেন। এভাবেই বাচ্চারা সবাই পাকিস্তানকে মনেপ্রাণে ধারণ করা শুরু করে। প্রতিবছর মহররম আসলে মায়ের কাছেই কারবালা প্রান্তরের রক্তাক্ত ইতিহাস শুনতো ছোট্ট ইউনূস।

১৯৯৮ সালে প্রকাশিত ‘ব্যাংকার টু দ্যা পুওর’ বইয়ে ইউনূস লেখেন তার বাবা দুলা মিয়ার কিছু হিন্দু বন্ধু ও সহকর্মী ছিল; যেমন ডাক্তার বণিক, নিশি আংকেল, নিবারণ আংকেল ও প্রফুল্ল আংকেল। কিন্তু শিশু ইউনূস জানতো ভারতের সংখ্যালঘু মুসলমানদের হিন্দুদের প্রতি অনেক অভিযোগ এবং অবিশ্বাস ছিল। সে পত্রিকায় পড়েছিল ও রেডিওতে শুনেছিল যে, ভারতে হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে সহিংসতা হতো। তবে চট্টগ্রামে তার প্রভাব খুব সামান্যই দেখা যেতো।

দুলা মিয়া আজীবন একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান ছিলেন এবং তিনবার মক্কায় হজ্ব করতে গিয়েছিলেন। তিনি সবসময় সাদা পাজামা, পাঞ্জাবি, টুপি ও স্যান্ডেল পরতেন। চারকোণা ফ্রেমের চশমা ও সাদা দাড়িতে তাকে একজন বুদ্ধিজীবীর মতো দেখাতো। কিন্তু তিনি কখনই বইয়ের পোকা ছিলেন না, কারন তিনি স্কুল পাশ করতে পারেননি। ব্যবসার দিকেই তার বেশি ঝোঁক ছিল। তার আর দুটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া ও পরিবারের দিকে সময় দেয়া।

তিনি সন্তানদের পড়াশোনার খোঁজ নিতেন কিন্তু খুব কড়া শাস্তি দিতেন না; দেখতেন তারা বই নিয়ে বসেছে কিনা। শব্দ করে পড়লে তিনি খুশি হতেন এবং বাহবা দিতেন।

ছোটবেলায় পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে বাবার স্বর্ণের ব্যবসায় সময় দিতেন বড় ছেলে দুলা মিয়া। সে সময় হিন্দুরাই মূলত স্বর্ণকারের ব্যবসা করতো, তবে দুলা মিয়া অল্প সময়েই এই ব্যবসায় সফল হন এবং এলাকার সব মুসলমানদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেন। দোকান চালানোর পাশাপাশি তিনি চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে স্বর্ণ কেনাবেচা ও সুদে টাকা ধার দেওয়ার ব্যবসাও করতেন।

সোনাপট্টির সেই দোতলা বাড়িতে এই দম্পতি ও তাদের নয় সন্তান বসবাস করতো। অপর পাঁচজন সন্তান অল্প বয়সেই মারা যায়। বড় মেয়ে মুমতাজের পর জন্ম হয় সালাম, ইউনূস, ইব্রাহীম, টুনু, আইয়ুব, আযম, জাহাঙ্গীর ও মঈনুর।

নীচতলায় ছিল স্বর্ণের দোকান। আর দোতলায় ছিল চারটি রুম ও রান্নাঘর। এর মধ্যে তিনটি ঘরের নাম ছিল মায়ের ঘর, রেডিও ঘর ও বড় ঘর। আরেকটি ঘরে তিনবেলা সবাই একসাথে খাবার খেতো। আর বড় ঘরে বাচ্চারা ঘুমাতো। তারা খেলাধুলা করতো ছাদে।

ইউনূসের মা সুফিয়া খাতুন তার স্বামীর দোকানের কাজেও সাহায্য করতেন। স্বর্ণের কানের দুল ও গলার হারের সাথে ভেলভেট, উল ও রিবন দিয়ে কাজ করতেন। এই কাজ করে তিনি যা আয় করতেন সেটা দিয়ে তিনি আত্মীয় ও প্রতিবেশীদের সাহায্য করতেন।

ইউনূসের বয়স যখন নয়, তখন তার মায়ের মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। তিনি অস্বাভাবিক আচরণ করেন; অসংলগ্ন কথা বলা, সন্তান ও প্রতিবেশীদের সাথে চিৎকার-চেঁচামেচি ও গালিগালাজ করতেন। এমনকি তিনি মৃত ব্যক্তি ও কল্পিত শত্রুদেরকেও তিরস্কার করতেন এবং সহিংস আচরণ করতেন। তাকে শান্ত করতেন দুলা মিয়া ও ইউনূস, যেন ছোট ভাই-বোনদেরকে তিনি শারীরিকভাবে আহত না করেন।

তার চিকিৎসার জন্য দুলা মিয়া ডাক্তার দেখান ও পরীক্ষানিরীক্ষা করান। কিন্তু কেউ রোগটি ধরতে পারেনি। সুফিয়া খাতুনের মা ও দুই বোনের একই ধরণের মানসিক সমস্যা ছিল, তবে তার সন্তানদের কারও সেরকম সমস্যা হয়নি বলে নিজের বইয়ে উল্লেখ করেন ইউনূস।

হতাশা হয়ে এক পর্যায়ে দুলা মিয়া তন্ত্রমন্ত্র, তাবিজ-কবজ, নানা কুসংস্কার এমনকি সম্মোহনের দিকেও ঝুঁকলেন। তবে তাতে কাজ হয়নি। এক পর্যায়ে একজন ডাক্তার তাকে ঘুমের ঔষধ দেন এবং তিনি ধীরে ধীরে আফিমে আসক্ত হয়ে পড়েন। বিয়ের ৫২ বছরের মাথায় অসুস্থ অবস্থাতেই ১৯৮২ সালে তিনি মারা যান।

ইউনূসের পড়াশোনায় হাতেখড়ি হয় লামার বাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় যেখানে সোনাপট্টির সব ছেলেরা পড়তো। সেখানে ছাত্র-শিক্ষক সবাই চট্টগ্রামের ভাষায় কথা বলতো। এমনকি তার হাইস্কুলেও ছেমেয়েদের সহশিক্ষা ছিল না। তবে স্কুলে নৈতিক শিক্ষার পাশাপাশি ধর্মীয় শিক্ষা এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলামের গান ও কবিতা পড়ানো হত।

তিন বছরের বড় ভাই সালাম ছিল ইউনূসের সেরা সঙ্গী। তারা একসাথে ঘুড়ি উড়াতো, গোয়েন্দা থ্রিলার বই সংগ্রহ করে পড়তো, এবং প্রতিবেশী ডাক্তার বণিকের বাসায় গিয়ে পত্রিকা ও ম্যাগাজিন পড়তো। বার বছর বয়সে প্রথম রহস্যগল্প লিখে ফেলে ইউনূস।

বই পড়ার নেশার কারনে সালাম ও ইউনূস কখনও বই কিনতো বা ধার করতো, এমনকি চুরি করতো। যেমন কলকাতা থেকে প্রকাশিত শুকতারা ম্যাগাজিন তাদের খুব প্রিয় ছিল। একবার একটি প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের বিনামূল্যে সেই ম্যাগাজিন দেয়া হলো। সেখানে উল্লেখিত বিজয়ীদের মধ্য থেকে একটি নাম বাছাই করে সম্পাদককে চিঠি লেখে ছোট্ট ইউনূস।

নিজেকে সেই বিজয়ী দাবী করে সে লেখে, তার বাসার ঠিকানা পরিবর্তন হয়েছে। পরবর্তী সৌজন্য সংখ্যা যেন বক্সিরহাটের ঠিকানায় পাঠানো হয়। বাবার চোখ ফাঁকি দিতে নিজের বাসার ঠিকানা না দিয়ে পাশের বাসার নাম্বার লিখেছিল সে। এরপর প্রতি মাসে সেই সৌজন্য সংখ্যার জন্য সে অপেক্ষা করতো।

হাইস্কুলে পড়ার সময় মাসিক বৃত্তি পেয়েছিল ইউনূস। তবে সে টাকা দিয়ে তার হাতখরচ উঠতো না। ফলে ব্যস্ততার সময় দুলা মিয়া কখনও তাকে দোকানে বসতে বললে বাবার সরল বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে ইউনূস ক্যাশবাক্স থেকে টাকাপয়সা সরিয়ে ফেলতো। তার বাবা কোনদিন সেই চুরি ধরতে পারেননি।

চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে পড়ার সময় ইউনূস ও তার এক বন্ধু একজন শিল্পীর কাছে ছবি আঁকা শিখেছিল। তবে বাসায় ছবি আঁকার সব জিনিস লুকিয়ে রাখতে হতো কেননা তার বাবা ইসলামিক নিয়মানুসারে মানুষের অবয়ব আঁকা সমর্থন করতেন না। তবে তার ছবি আঁকার প্রশংসা করে কয়েকজন আত্মীয় তাকে অনুপ্রেরণা যোগাতেন। এছাড়া সালাম ও ইউনূস ডাকটিকেট সংগ্রহ করতো। সে সময় স্কাউটে যোগ দিয়ে ১৯৫৩ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম জাতীয় বয়স্কাউট জাম্বুরিতে অংশ নিতে ট্রেনে করে পাকিস্তান যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল ১৩ বছর বয়সী ইউনূস; এরপর ১৯৫৫ সালে কানাডা এবং ১৯৫৯ সালে জাপান ও ফিলিপাইন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর শেষ করে ১৯৬২-৬৫ পর্যন্ত চট্টগ্রাম কলেজে শিক্ষকতা করার সময় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে প্রিন্টিং ও প্যাকেজিং ব্যবসায় যুক্ত হন। ১৯৬৯ সালে ফুলব্রাইট স্কলারশিপ নিয়ে পিএইচডি করতে আমেরিকায় যান।

মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ৩১ বছর বয়সী ইউনূস আমেরিকার অন্যান্য বাঙালিদের সাথে স্বাধীন বাংলাদেশের স্বীকৃতি ও শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির জন্য পূর্ব পাকিস্তানের সাবেক দূতাবাস কর্মকর্তা, শিক্ষক ও ছাত্র সবাই ক্যাম্পেইন করেছিল। তাদের মধ্যে ড. এফ আর খান, এনায়েত করিম, এস এ করিম, এ এম এ মুহিত, জিল্লুর রহমান খান, ড. মহসিন র সিদ্দিক, ড. খন্দকার মোহাম্মদ আলমগীর, ড. শামসুল বারি ও ড. হাসান চৌধুরী অন্যতম। তারা বেশ কয়েকটি সংগঠন তৈরি করে, র‍্যালি ও কনসার্ট আয়োজন করে এবং “বাংলাদেশ নিউজলেটার” নামের পত্রিকা প্রকাশ করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠন করে।

১৯৭২ সালে স্বাধীন দেশে ফিরে পরিকল্পনা কমিশনে উপ-পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করলেও কয়েক মাস পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। সদ্যস্বাধীন দেশ পুনর্গঠন ও দারিদ্র দূরীকরণে নানা ফর্মূলা নিয়ে কাজ করেন। তবে তার কোন কাজে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের তৎকালীন সরকারের সাথে অংশ নেননি। ১৫ই আগস্টের নির্মম হত্যাকান্ডের পর খুনি সেনা অফিসারদের সরকারকে সর্বতোভাবে সহযোগিতা করেছিল ইউনূস। ফলে দ্রুতই সেনাশাসক জেনারেল জিয়ার আস্থাভাজন হয়ে উঠেন তিনি। ১৯৭৮ সালে তার নবযুগ তেভাগা খামার প্রকল্পের জন্য প্রেসিডেন্টস এওয়ার্ড পান এবং ১৯৮১ সালে সরকারের জনসংখ্যা নীতি সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন।

জেনারেল এরশাদের আমলে এ এম এ মুহিত মন্ত্রী হলে তার সহযোগিতায় ক্ষুদ্রঋণ দানকারী  গ্রামীণ ব্যাংক প্রকল্পকে (শুরু ১৯৭৬ সালে) আলাদা ব্যাংক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন ১৯৮৩ সালে। এই আমলেও ইউনূসকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার কমিটিতে (ভূমি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ব্যাংক) চেয়ারম্যান ও সদস্য হিসেবে যুক্ত করে সেনাশাসক এরশাদ।

এসবের ফলে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইউনূস ১৯৮৪ সালে র‍্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার, ১৯৮৫ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পুরস্কার, ১৯৮৭ সালে স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার এবং ১৯৮৯ সালে আগা খান পুরস্কার পান। তখন তিনি বিভিন্ন বিদেশী প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত হন এবং বিদেশে গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যক্রম বাড়াতে কাজ করেন। এছাড়া সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিভিন্ন ব্যবসা চালু করেন।

১৯৯৬ সালের প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন এবং ২০০৭-০৮ সালের সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পেছনে আমেরিকার এজেন্ট হিসেবে মূলত তিনিই কলকাঠি নাড়েন। এই কাজে তাকে যোগ্য করে গড়ে তোলার জন্য আমেরিকার সুপারিশে ২০০৬ সালে ইউনুসকে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়। এসবের কারনে অনিয়মের মাধ্যমে ব্যাংকের তহবিল তছরুপ করতে তাকে বাধা দেয়নি কেউ। আওয়ামী লীগকে দুর্বল করা ও রাজাকার-জিহাদিদের পুনর্বাসনের নামে দেশ ধ্বংসের পায়তারা করেছিল ইউনূস। কিন্তু জনরোষের কারনে নির্বাচন দিয়ে সরে যেতে বাধ্য হয় আমেরিকার সেই পাপেটরা।

২০১১ সালে গ্রামীণ ব্যাংকের অপকর্ম অনিয়ম প্রকাশিত হওয়া শুরু হলে ইউনূস হিলারির সাহায্য চায় এবং একটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করে। ২০১৩-১৪ সালে ফাঁস হওয়া অডিও ক্লিপে জানা যায় তিনি কিভাবে বিএনপি ও অন্যান্য আওয়ামী-বিরোধী দলগুলোর সাথে সরাসরি যুক্ত থেকে শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে কাজ করেছেন। ১৩ বছর পর সফল হয় হিলারি-ইউনূসের সেই মেটিকুলাস ডিজাইন। মুক্তিযুদ্ধ, আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু, হিন্দুসহ অমুসলিম নাগরিক ও ভারতের প্রতি তার ঘৃণা, রাগ ও অশ্রদ্ধার বহিঃপ্রকাশ ঘটছে জুলাই আন্দোলন চলাকালীন সময় থেকেই।

৫ই আগস্ট সরকার পতনের জন্য রাজাকার ও জিহাদিদের উপর সরকারের নির্ভরতা থাকায় আস্তে আস্তে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের আসল চেহারা প্রকাশিত হচ্ছে। রিসেট বাটন পুশ করার মানেটা সে এক এক করে সামনে আনছে৷ আন্দোলনকারীদের দায়মুক্তির অধ্যাদেশ জারি করা ছাড়াও ১০ই ডিসেম্বর জয় বাংলা শ্লোগান বাতিল, ২১শে আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলায় সব আসামীকে খালাস দেয়া, এবং ৭ই মার্চ, জাতীয় শোক দিবস ও সংবিধান দিবস বাতিলের জন্য বিচার বিভাগকে নগ্নভাবে ব্যবহার করছে। এ সবই তার পাকিস্তানপ্রীতির অনন্য নিদর্শন।

সম্প্রতি জানা যায়, ইউনূসের বাবা দুলা মিয়া সওদাগর ও দাদা নজু মিয়া সদওদাগর মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে চট্টগ্রাম, সাতকানিয়া ও হাটহাজারী এলাকায় পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে। ইউনূসের ভাই ইব্রাহীম ছাড়া বাকি সব ভাইয়েরা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল। ইউটিউবে এক সাক্ষাৎকারে সময় স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও লেখক সিরু বাঙালি এই তথ্যটি দেন।

Comments

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

bn_BDবাংলা
Powered by TranslatePress