অমর একুশে উদযাপনঃ সরকারি বেহাল চেহারা

একুশের প্রথম প্রহরে খুব বাজে অভিজ্ঞতা হল এইবার। রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রী ১২টা ২মিনিটে ফুল দেবার পর বিশৃংখলা শুরু হয়। শেখ হাসিনা দলের সিনিয়র নেতাদের ও মন্ত্রীবর্গকে নিয়ে ফুল দিতে গেলে দেখা যায় অনেক নেতা-মন্ত্রী বাদ পড়েন প্রতিযোগিতায়।

প্রধানমন্ত্রী ১২টা ১২’র দিকে চলে যাবার পর অপেক্ষমান বিভিন্ন ভিআইপি ও অন্যান্যরা দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছিল বলে বিরক্ত হলেন বিরোধীদলীয় নেত্রীর উপর। কিন্তু এরই মধ্যে সংসদের পক্ষে ডেপুটি স্পীকার ৭/৮ জন সম্ভবত সংরক্ষিত মহিলা এমপি নিয়ে ফুল দেন।

১২টা ২০ মিনিটে খালেদা জিয়া আসলেন, কিন্তু শান্তিমত বেদী পর্যন্ত যেতে পারলেন না, হুড়োহুড়ি করে দলীয় সকল সিনিয়র নেতাদের নিয়ে ৩টি পুষ্পার্ঘ্য দিলেন। ১ মিনিট নীরবতা পালন করেন (বার বার তাকাচ্ছিলেন মিনারের পেছনে দাঁড়ানো টিভি ক্যামেরার দিকে)।

রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রী অবশ্য ১মিনিট না অল্প সময় দাঁড়িয়েছিলেন, মনে হচ্ছিল কিসের পর কি করতে হবে সে বিষয়টা উনারা একটু গোলমাল করে ফেলেন।

যাই হোক, খালেদা যখন দাঁড়ালেন তখন পেছন থেকে রাজ্যের মানুষ সামনের দিকে ধাক্কা দিতে থাকে। উনার ঠিক পেছনের সারির নেতারা তাকে আগলে রাখলেও নিজেদের বাঁচাতে পারেননি।

কয়েক’শ সেনা, হাজারখানেক পুলিশ আর স্কাউটও ততক্ষনে হাপিঁয়ে উঠেছিলেন শৃংখলা রক্ষা করতে গিয়ে। কেননা ছাত্রলীগ, সাংবাদিক সমিতি আর গন সংহতি আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের দেখা যায় নির্দিষ্ট পথে না গিয়ে স্কাউটের কর্মীদের ধাক্কা দিয়ে লাইন ভেঙ্গে এগিয়ে যেতে।

খালেদার পর ৩ বাহিনীর প্রধানেরা, পুলিশ, স্কাউট, সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সদস্যরা ফুল দেন। গ্যঞ্জামটা বাড়ে তারপর থেকে। ছাত্রলীগের গ্রুপটির নেতৃত্বে যারা তেড়ে এল শহীদ মিনারের দিকে। আবার ফুল দেবার সময় ও দেবার পর মিনারের পেছনে টিভি ক্যামেরা দেখে কয়েকমিনিট দাঁড়িয়ে থাকলো মনে হল।

কিন্তু সেই দলের চলে যাবার সময় পেছনের দিকে যারা ছিল (ব্যানার ছাড়া) তারা বেদী থেকে ফুল হাতে নিয়ে আবার সেখানে দিচ্ছিল, কেউ কেউ আবার বেদী থেকে বেছে বেছে নিজের জন্য কিছু নিয়ে যাচ্ছিল।

আর ধাক্কাধাক্কির কথা কি বলবো? যতগুলো গ্রুপ দেখেছি সবগুলাতেই “মেয়েরা” যৌন নির্ধাযাতনের কবলে পড়েছিল। অল্প জায়গার কারনে রাস্তায় ভিড় হয়ে যাচ্ছিল একটু পরপর। আর যেসব তথাকথিত গুরুত্বপূর্ণ লোকেরা ফুল দেবার আগে শহীদ মিনার এলাকায় দাঁড়িয়েছিলেন তারা আসলে টিভিতে ও এখানে আগত সবাইকে নিজেদের চেহারাটাই দেখাতে চাইছিলেন। আর ফুল দেবার সময় বেদীর সামনে দাঁড়িয়ে পোজ দিচ্ছিলেন।

৪৪ মিনিট ধরে বিটিভি-তে এই সম্প্রচার দেখেছি। একটা মানুষকেও দেখলাম না “শ্রদ্ধাবনত মস্তকে” ফুল দিতে। লোকদেখানো এই সংস্কৃতি (কু-মনোবৃত্তি) থেকে আমাদের বের হওয়াটা খুব জরুরি।

Comments

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

en_USEnglish
Powered by TranslatePress