বাহ! কি সুন্দর (আজব) কথাবার্তা! বিএসএফ প্রধান ইউ কে বানসাল অবসরে যাবার আগ মুহুর্তে প্রকাশ্যে একটা বোমা ফাটালেন।
বৃহষ্পতিবার দিল্লীতে এক সংবাদ সম্মেলনে বললেনঃ গরুর মাংসের যেহেতু বাংলাদেশে অনেক চাহিদা, তাহলে ভারত থেকে আর চোরাচালান করে আনার দরকার কি! বিষয়টাকে একটা “আইনি তকমা” দিয়ে “বৈধ” করে নিলেই হয়। তাহলে সীমান্তে গরীব গরু ব্যবসায়িদের খুন বন্ধে একটা উল্লেখযোগ্য সমাধান হবে।
এই কথার আইনি ভিত্তি বা কূটনৈতিক শিষ্টাচারের প্রগাড়তা নিয়ে কথা বলা আমার কাজ না। তবে গরু চোরাচালানের বাস্তবতা, সীমান্তে হত্যার রেকর্ড ও টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনটি পড়ে মনে হলো “খুবই ভালো বুদ্ধি” এইটা।
এখন মানা না মানা দুই দেশের সরকারের হাতে। খুব সম্ভবত নীতিনির্ধারকেরা রাজী হয়ে যাবেন।
বিশেষ করে শেখ হাসিনা গত মঙ্গলবার সংসদে সীমান্তে বিএসএফ-এর হত্যাযজ্ঞ নিয়ে সাদামাটাভাবে “কাজ হচ্ছে, প্রতিশ্রুতি পেয়েছি, হত্যা কমছে” ইত্যাদি বলতে গিয়ে এক পর্যায়ে নিজেই লজ্জা পেলেন, বললেনঃ “সীমান্তে হত্যার পেছনে অনেক ঘটনা আছে। এগুলো বললে তা আমাদের ঘাড়েই এসে পড়বে।”
হ্যাঁ, ঠিক তাই। সীমান্তে হত্যার পেছনে গরু চোরাচালান একটা বড় একটা কারন (সম্ভবত এসব খুচরা চোরাকারবারিরা বিএসএফ-কে ঘুষ দেয়না বলেই গুলি খায়)।
তাছাড়া নারী ও শিশু পাচার, মাদকের কারখানা ও পাচার, কাপড়-সার-ইলিশ-জ্বালানী তেল ইত্যাদি পাচার, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় এলাকার বিদ্রোহী নানা গোষ্ঠীর নেতা-কর্মীদের আনাগোনাসহ আরো অজানা অনেককিছু প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে দুই দেশের প্রায় ৪,০০০ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকায়।
সীমান্তে হত্যা বিষয়ে বাংলাদেশে জনগন ও নানা মানবাধিকার সংস্থার প্রতিবাদ-বিক্ষোভ, পশ্চিমবঙ্গের মানবাধিকার সংস্থা “মাসুম” ও জাতিসংঘের হস্তক্ষেপের কারনে ভারতীয় সরকার ২০১০ সালের পর থেকে চেষ্টা করছে রাবার বুলেট ব্যবহার করতে, কিন্তু সেকাজে সফলতা এখন পর্যন্ত ১০ ভাগের বেশি নয়।
এদিকে সরকারি ও বেসরকারি হিসাবমতে খুনের সংখ্যা বছরওয়ারী কমলেও সাম্প্রতিককালে তথাকথিত চোরাকারবারিদের ধরে নির্যাতন ও গুমের সংখ্যা বেড়ে গেছে।
কিন্তু কয়টা লাশ পড়লো সেটা তো বিবেচ্য বিষয় নয়, কেননা এইগুলো হচ্ছে “বিচারবহির্ভূত হত্যা”। আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন অনুযায়ি, আইন-শৃংখলারক্ষাকারী বাহিনী প্রথমে সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করবে ও পার্শ্ববর্তী থানায় সোপর্দ করবে। থানার পুলিশ মামলা করে তদন্ত করবে এবং স্থানিয় আদালত সে অনুযায়ি রায় দেবে। মজার ব্যাপার হলো, আমাদের বিজিবির হাতে কখনো কোন ভারতীয় চোরাকারবারি খুন হয়েছে কিনা সে হিসাব জানা যায়না।
অথচ আমাদের দেশে যে সরকারই থাকুক এই ইস্যুতে তারা ভারতের উপর চেপে বসতে লজ্জা পায়, যেমন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক তো (মাতাল অবস্থায়!) বলেই ফেলেছিলেন এরা গরু চোরাকারবারি, এরা আগেও মরেছে, ভবিষ্যতেও মরবে। আমাদের দেশের ক্ষমতাকেন্দ্রীক রাজনীতিবিদদের নীতি-আদর্শ-মানবিকতা থাকবে এটা আশা করা বোকামী।
আর সেকারনেই খুনের সংখ্যা নিয়ে বরাবর দুই দেশের সরকারই মিথ্যার আশ্রয় নেয়।
বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর সংসদে বলেন, “বিএসএফ-এর হাতে বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যার কারণ হলো রাতের অন্ধকারে অনুপ্রবেশ, চোরাকারবারিদের অন্তঃকলহ, সীমান্তরক্ষীদের ওপর চোরাকারবারিদের আক্রমণ।”
যাই হোক, অন্য সব বিষয় বাদ। যেহেতু ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রতিদিনই গরু পাচার হয়, প্রতি সপ্তাহেই যেহেতু একটা-দুইটা লাশ পড়ে, কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়, সেহেতু ব্যবসাটা খুলে দিলেই ভালো। শুল্ক দিতে হবে বলে দুই দেশের অর্থনীতিতে এটা একটা ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং খুনাখুনি কমবে।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.