গত কয়েকদিনে যে কয়টা ধর্ষন ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটে চলেছে আর সারাদেশে যেভাবে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ হচ্ছে, তাতে মনে হয় এসবকে জানোয়ারগুলা একটুও পাত্তা দেয়নি, লজ্জা পায়নি ভেবে যে ঘটনা প্রকাশ পেয়ে যেতে পারে এলাকাবাসীর মধ্যে, সংবাদমাধ্যমে। এদের লজ্জা নেই। ভয় পায়নি যে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারে, কেননা গ্রেপ্তার করলেও তদন্তকালে পুলিশ ও পরে আদালত থেকে বিচারপ্রক্রিয়া নানাভাবে প্রভাবিত সম্ভব জেনে জানোয়ারগুলা তাদের কুৎসিত চিন্তা ও আচরন চালিয়ে যায়।
এসব নির্যাতনের ঘটনার সবগুলোই খুব মর্মস্পর্শী, বিশেষ করে যেসব ঘটনা ঘটে দুই-তিন বছরের শিশু, বিধবা/ছিন্নমূল/মানসিক ভারসাম্যহীন নারী, স্কুল/কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। আর যৌনকর্মীদের উপর পুলিশ ও বখাটেদের নির্যাতন ও হয়রানি তো নিত্যদিনের বিষয়।
প্রতিটা ঘটনাকে আলাদা করে দেখেনা দেশের নারী সরকারপ্রধান বা যথাযথ কর্তৃপক্ষ, কারন এসব তাদের গা-সওয়া হয়ে গেছে। তারা পরিবারে বা রাস্তায় নির্যাতনের শিকার হয়নি বলেই কি খুব একটা গায়ে লাগেনা দূর্বল-অভাগার আর্তনাদ? তারা যদি ভাএন যে, কিছুতেই কিছু হবেনা, রাতারাতি এসব বন্ধ হবেনা–তাহলে ভুল করছেন।
এটা একটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত যা নিতে রাজনৈতিক সরকার, প্রশাসন (বিশেষত পুলিশ), আদালত, সংবাদমাধ্যম ও সাধারন জনগনের সহযোগিতা প্রয়োজন; এটা অনেকটা জাতীয় আন্দোলনের মত। আমরা আমাদের পেশা ও নিয়মিত পড়াশুনার পাশাপাশি শুধু একটা বিষয়ে আগামী কিছুদিনের জন্য জোর দিতে হবে — “নারীদের জন্য একটি সরল-সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে প্রতিটি এলাকায়-কর্মক্ষেত্রে-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন নিপীড়নকারীদের চিহ্নিত করে অভিযোগ লিপিবদ্ধ করে তাদের দ্রুত বিচার আইনের আওতায় আনতে হবে। যেখানেই পুলিশ, জনপ্রতিনিধি বা কোন প্রভাবশালী ব্যক্তি গড়িমসি করবে সেখানে ধর্ষক, তাদের সহযোগী ও আশ্রয়দাতাদের খুঁজে বের করে গনপিটুনি দিতে হবে। আতংক সৃষ্টি করতে হবে।”
এটা একটা মাথাগরম-টাইপ বক্তব্য হলেও আতংক সৃষ্টি করার আর কোন উপায় পাচ্ছিনা। এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি করাটা একধরনের জঙ্গীপনা। না হলে এই আন্দোলন স্বল্পতম সময়ে সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব না। এক্ষেত্রে মিডিয়া সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারে সরাসরি সম্প্রচার করে। তার মানে একটা গনজমায়েত হতে হবে, ঢাকায়, যেখানে দেশের পরিচিত-অপরিচিত সৎ ও সাহসী মানুষের সম্মিলন ঘটবে আর যুদ্ধে যাবার মত একটা অনুভূতি কাজ করবে সবার মধ্যে। আমাদের মা-বোন-বান্ধবীদের মান-সম্মান বাঁচাতে আমরা কোন একদিন হয়তো এভাবেই বেড়িয়ে আসবো পথে। ক্রমে তা একটি নিয়মিত সামাজিক কার্যক্রমের অংশ হয়ে যাবে। সেটা এমন একটা সময় যখন পুরুষরা যৌনতা ছাড়া অন্যান্য বিষয়েও মনোযোগ দিবে, অন্তত একজন ভালো-সফল মানুষ হতে গেলে যা যা গুনাবলী থাকা অত্যাবশ্যক সেসব অর্জনে সচেষ্ট হবে।
পৃথিবীতে খারাপ মানুষের সংখ্যা আসলে মোট জনসংখ্যার কাছাকাছি। তবে কোন কোন সময়ে মানুষ “ভয়” পেয়ে কুকর্ম থেকে বিরত থাকে — সৃষ্টিকর্তা, আইন বা বিশেষ কোন ব্যক্তি।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.