
ব্লগার-স্থপতি-আলোকচিত্রী রাজীবের খুন হওয়া মানতে পারছেনা কেউ — শুধু জামায়াত-শিবির-বিএনপি ছাড়া। গত কয়েকদিনে সোনার বাংলা ব্লগের কর্মকান্ড থেকে বুঝা গেলো রাজীবকে খুন করার একটা পরিকল্পনার বীজ বোনা হয়েছিল। এর মধ্যেও রাজীবের অনবরত শাহবাগ আন্দোলন-যুদ্ধাপরাধের বিচার-সহিংসতা নিয়ে লিখে চলা থামেনি। ব্লগে আর ফেসবুক স্ট্যাটাসে বিরুদ্ধ মনোভাবের মন্তব্যগুলো সামলেছেন তিনি। জীবন যেকোন মুহুর্তে বিপদাপন্ন হতে পারে জেনেও তিনি থেমে যাননি, চাকরি-বাকরি নিয়ে পড়ে থাকেননি; ছুটে গেছেন শাহবাগে, আবার অফিস আর অনলাইনে যুদ্ধ।
খুনের ঘটনার পর প্রজন্ম চত্তরের আয়োজকেরা (!) আন্দোলনের সময়সূচী বদলানোর সিদ্ধান্তটি বাতিল করে। অবশ্য রাজীব বা অন্য কোন আন্দোলনকর্মী খুন না হলেও শুক্রবার রাতেই সেই সিদ্ধান্ত পাল্টাতে হতো, কেননা ঘোষনার পর থেকেই কেউ তা মেনে নেয়নি। এটা আশার কথা যে, আয়োজকেরা বুঝেছেন আন্দোলনকর্মীরা শাহবাগের অবরোধ তুলে নিলে জামায়াত-শিবিরের তান্ডব আরো বাড়বে। যাই হোক। কিন্তু কেউ কেউ আবার রাজীবের ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গীর দিকটা জেনে পিছিয়ে গেছেন।
তবে আমার ধারনা, বেশিরভাগ মানুষই থাবা বাবা’র ওয়ার্ডপ্রেস সাইটটি থেকে পোস্ট পড়েছেন কিন্তু কিছু বিষয় খেয়াল করেননি। উনিশটি ব্লগ আছে যেগুলো পোস্ট করা হয়েছে জুন ২০১২ থেকে অক্টোবরের মধ্যে!!! এলেক্সা র্যাংকিং-এও এর কোন তথ্য নেই। আবার এতগুলো পোস্টের মধ্যে মন্তব্য আছে মাত্র একটি, তাও আবার পিংব্যাক! বুঝাই যাচ্ছে, শিবিরের পরিকল্পনা ছিল অনেকটাই বিশদ। আর তাই খুনের খবর প্রচার হবার সাথে সাথেই শিবিরের পেইজ ও একাউন্টগুলোতে দেখা গেলো অন্য সুরঃ এই খুন নাকি আন্দোলনের নেতৃত্ব নিয়ে! এর সাথে নাকি ছাত্রলীগ জড়িত!! জানোয়ার শিবিরগুলো বোকার মত নিজেদের জালে নিজেরাই ধরা পড়ে গেল!!!

সোনারবাংলা ব্লগে ১১ তারিখের আলোচনা
পরদিনের অর্থ্যাৎ শনিবারের সবচেয়ে বড় চমক ছিল প্রধানমন্ত্রীর মিরপুরে রাজীবদের বাসায় যাওয়া। <a href=”http://bangla.bdnews24.com/bangladesh/article591439.bdnews”>তার চেয়ে বড় চমক হলো জামায়াতের রাজনীতি করা নিয়ে তিনি যা বললেন</a>। আমার মনে হচ্ছিল তিনি যেহেতু কাগজ দেখে বলেননি তাই সেইসব কথার গুরুত্ব না দিলেও চলে। আমি নিশ্চিত না তিনি পরে আবার টিভিতে দেখে নিবেন কিনা কি বলেছিলেন তিনি। কারন তার এসব বক্তব্য আমি পরিপূর্ণভাবে সমর্থন করি এবং মনে করি এসব কথার একটা “ওজন” থাকবে, মানে তিনি তার কথা রাখবেন [যদিও প্রতিশ্রুতি ভাঙ্গায় তিনি ইতিমধ্যেই শান্তিতে নোবেল জিতে নিয়েছেন।]
রাজীবকে শাহবাগ আন্দোলনের প্রথম ‘শহীদ’ বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু এটা তার বলা একদম ঠিক হয়নিঃ “আমি অনেকদিন ধরেই এরকম একটা খারাপ খবরের আশঙ্কা করছিলাম। তা-ই ঘটে গেল।” কেননা এসব কথায় নিজের ব্যর্থতাই ফুটে উঠে।
হাততালি পাওয়ার মত করে দারুন বলেছেনঃ “জামাত-শিবিরের রাজনীতি হচ্ছে সন্ত্রাসের রাজনীতি। এ সন্ত্রাসীদের যা করার আমরা তা করব। স্বাধীন বাংলাদেশে এদের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই।”
জামায়াতে ইসলামীর বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “এদেরকে অনেকে গণতান্ত্রিক শক্তি, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল বলার চেষ্টা করে। আজকে এটা প্রমাণ হয়ে যাচ্ছে এরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, এরা সন্ত্রাসে বিশ্বাস করে। জামাত-শিবিরের রাজনীতি হচ্ছে সন্ত্রাসের রাজনীতি। এ সন্ত্রাসীদের যা করার আমরা তা করব। স্বাধীন বাংলাদেশে এদের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই, কোনো অধিকার নেই।”
“পরাজিত শক্তি রাজাকার, আল বদর, জামায়াত, শিবিরের হাত থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করতে হবে। এ জন্য দেশবাসীর সহযোগিতা চাই। এ জন্য তরুণদের পাশে সবাইকে আমি দাঁড়াতে বলব।”
তাকে অশেষ ধন্যবাদ জানাই তারুন্যের আন্দোলনে দেশবাসীকে তিনি শরিক হতে বলেছেন।
এতে করে উনার সরকারের জন্য একটা বড় সুবিধা হবে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে। কিন্তু এখনও কি সময় হয়নি? গত ১২দিন ধরে শাহবাগ যা দেখিয়ে যাচ্ছে, সারা দেশ যেভাবে সাড়া দিয়েছে সেটা কি প্রধানমন্ত্রীর জন্য যথেষ্ঠ নয়? আর কি কি ঘটলে পরে আপনি জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে সাহস দেখাবেন?
রবিবারের আপডেটঃ
ব্লগারদের নিয়ে জামাতের সেক্স মিশন!
ঢাকা : এবার এক অদ্ভুত ভয়াবহ খেলায় মেতে উঠেছে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি জামাত-শিবির চক্র। শাহবাগকে কেন্দ্র করে যে উত্তাল গণজাগরণের সৃষ্টি হয়েছে তা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য তারা জঘন্য সেক্স মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছে তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যে সব নেতৃবৃন্দ শাহবাগ গণ আন্দোলনকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের বেশির ভাগই তরুণ ব্লগার। এদের মধ্যে থেকে জামাত শিবির চক্র কমপক্ষে ৫০ জনকে টার্গেট করে সেক্স মিশন বাস্তবায়নের দিয়ে এগুচ্ছে। তাদের মুল উদ্দেশ্য তরুণ ব্লগারদেরকে সেক্স স্ক্যান্ডালে জড়িয়ে আন্দোলনকে বিভ্রান্ত এবং ক্ষতিগ্রস্ত করা। অন্যদিকে সেক্সের মতো স্পর্শকাতর একটি বিষয় নিয়ে ব্লগারদেরকে জড়ানো গেলে দেশবাসী ঘৃণাভরে তাদেরকে প্রত্যাখান করবে। এছাড়া যেসব ভদ্র পরিবারের মেয়েরা এখন নির্ভয়ে রাত বিরাতে শাহবাগ যাচ্ছেন, তারা ভবিষ্যতে আন্দোলন কেন্দ্রে যাবেন না।
গোয়েন্দাদের একটি সূত্র জানিয়েছে, এই চক্রটি ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশান ও বারিধারাতে খন্ডকালীন যেসব সুন্দরী তরুণী বিভিন্ন হোটেল ও গেষ্টহাউজে গিয়ে দেহ ব্যবসা করে তাদের মধ্যে থেকে চৌকুস ৫০ জনকে আগামী এক মাসের জন্য উচ্চ বেতনে ভাড়া করেছে। এসব আর্কষণীয়া তরুণীরা দেখতে অভিজাত পরিবারের সন্তানদের মতো এবং তারা প্রায় সবাই বেসরকারীবিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। এরই মধ্যে তাদেরকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়ে মাঠে নামানো হয়েছে।
রোববার এ ব্যাপারে গুলশান, উত্তরা ও বাড়িধারার বিভিন্ন সূত্রের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানাগেছে।
চক্রান্ত মতে, সুন্দরীরা শাহবাগ চত্ত্বরে এসে আগত আন্দোনকারীদের সঙ্গে মিশে যাবে এবং সুযোগ বুঝে আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলবে।
প্রয়োজনে আন্দোলনকারীদেরকে তাৎক্ষনিক আর্থিক সহযোগীতা প্রাদানের জন্য কিছু নগদ অর্থও তাদের দেয়া হয়েছে। কিছু কিছু সুন্দরীর নিকট ফেনসিডিল, গাঁজা এবং ইয়াবাও সরবরাহ করা হয়েছে। তাদেরকে এমনভাবে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে যাতে করে নৈতিকভাবে দুর্বল যে কোন লোক তাদের ফাঁদে আটকা পড়ে ঘটনাস্থলেই অনৈতিককাজে জড়িয়ে পড়ে।
শাহবাগ আন্দোলনের প্রতি সহানুভুতিশীল একাধিক অভিজ্ঞমহল এরই মধ্যে বিষয়টি ব্লগার নেতৃবৃন্দকে মৌখিকভাবে জানেয়েছেন। যেভাবে ব্লগাররা নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন এবং জামাতী চক্রান্ত প্রতিহত করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছেন বলে সংশ্লিষ্ট সুত্র জানিয়েছে।
নূরানি চাপা সাইট চালু হয় রাজীব হত্যাকাণ্ডের পর
সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার ওরফে থাবা বাবাকে নিয়ে জামায়াত-শিবির সমর্থক একদল অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছে। দৃশ্যত ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে সক্রিয় এমন একটি ওয়েবসাইটকে থাবা বাবার সাইট বলে তারা তাঁকে নাস্তিক সাব্যস্ত করার চেষ্টা করছে। রাজীব ফেসবুকেও ধর্মবিরোধী কথা লিখেছেন প্রমাণ করার জন্য ভুয়া স্ট্যাটাস তৈরি করে সেগুলোর স্ক্রিনশট এখন ছড়ানো হচ্ছে ফেসবুকে। এমনকি আনাড়ির মতো রাজীবের ফেসবুক অ্যাকাউন্টের অ্যাডমিন এরিয়ার স্ক্রিনশটও একজন গতকাল রবিবার ফেসবুকে পোস্ট করেছে, যা শতভাগ ভুয়া।
অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, সামাজিক নেটওয়ার্ক ফেসবুক, টুইটারসহ বিভিন্ন অনলাইন গণমাধ্যমে অতি উৎসাহে nuranichapa.wodpress.com সাইটটির লিংক শেয়ার করা হয়েছে। বিভিন্ন আইডি থেকে কালের কণ্ঠের ওয়েবসাইটের অনেক খবরের নিচেও এই লিংকটি স্পাম আকারে ছড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে। তবে ওয়েবসাইট বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান কোয়ান্টাকাস্টের দেওয়া তথ্যে দেখা যায়, নূরানি চাপা নামের সাইটটি প্রথম ভিজিট হয় গত ১৫ ফেব্রুয়ারি রাজীব হত্যাকাণ্ডের দিন এবং লিংক ছড়িয়ে দেওয়ার ফলে ওই দিন মোট ভিজিটর সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৭ হাজার ৭৮৩। ১৫ ফেব্রুয়ারির আগে সাইটটি কেউ ভিজিট করেছেন এমন কোনো তথ্য কোয়ান্টাকাস্ট পায়নি।
এ ধরনের অপপ্রচারের নিন্দা জানিয়ে পাল্টা পোস্টও দেওয়া হচ্ছে সামাজিক নেটওয়ার্ক সাইটগুলোতে। শাহবাগ আন্দোলনের একজন লেখেন, ‘মূলত খুনের দায়কে এড়াতে জামায়াত-শিবির মেতেছে অপপ্রচারে। ফেসবুক-ব্লগে থাবা বাবার নামে একাধিক অ্যাকাউন্ট খোলা হচ্ছে। এরপর থাবা বাবাকে নাস্তিক প্রমাণ করতে ইচ্ছেমতো যা-তা লেখা হচ্ছে।’ তিনি আরো লেখেন, ‘রাজীব খুন হওয়ার nuranichapa.wodpress.com নামে একটা পেজের আগমন ঘটে। এরপর ‘নূরানি চাপা সমগ্র’ নামে একগাদা লেখা পোস্ট করা হয়। যা থাবা বাবার লেখা বলে ওই সাইটে দেখানো হয়। কিন্তু থাবা বাবা খুন হওয়ার আগে এই সাইটে কোনো ভিজিটরকে সাইটটি প্রদর্শন করতে দেখা যায়নি।
‘নূরানি চাপা সমগ্র’ ভিজিটকারী এক ব্লগার জানান, ইন্টারনেটে নূরানি চাপার পেজটির source code ঘেঁটে দেখি www.quantcast.com-এর একটি লিংক দেওয়া আছে। সাইটটি বানানোর সময় কোয়ান্টাকাস্টের কোড ব্যবহার করা হয় কতজন ভিজিট করছে তা বোঝার জন্য। এতে দেখা যায়, ১৫ ফেব্রুয়ারির আগে সাইটটি কেউ ভিজিট করেনি। ট্রাফিক বিশ্লেষণ প্রতিষ্ঠান কোয়ান্টাকাস্টে নূরানি চাপার লিংকটি হচ্ছে : www.quantcast.com/nuranichapa.wordpress.com রাজীবই নূরানি চাপা ব্লগটি চালাতেন- এ কথা প্রমাণ করার জন্য গতকাল রাজীবের ফেসবুকের অ্যাডমিন এরিয়ার একটি স্ক্রিনশট একজন শেয়ার করেন। স্ক্রিনশটে দেখানো হয়, রাজীব ‘নূরানি চাপা’ নামের একটি পেজ পরিচালনা করে থাকেন। দীর্ঘদিন ধরে ফেসবুক ব্যবহার করছেন এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পেজের মালিক ছাড়া আর কারোর পক্ষে অ্যাডমিন এরিয়ার স্ক্রিনশট দেওয়া সম্ভব নয়। তাঁদের মত হচ্ছে, কেউ হয় রাজীবের নামে ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলেছেন, অথবা তাঁর পাসওয়ার্ড হ্যাক করে বিভ্রান্তিকর তথ্য জুড়ে দিয়েছেন।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.