স্বাধীনতার ৪২বছরে বাংলাদেশ; কিন্তু এখনও পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর কর্তাব্যক্তি ও বাংলাদেশে তাদের দোসরেরা বহাল তবিয়তে বিচারের বাইরে আছে বা চলমান বিচার বানচাল করার চেষ্টা করছে।
পাকিস্তান এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চায়নি, দুই-একবার সো-কলড “দুঃখ প্রকাশ” করেছে শুধু। আর কিছুদিন আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রাব্বানী তো বলে গেলেন “ওসব ভুলে যান”।
গনহত্যা-ধর্ষন-লুট-অগ্নিসংযোগের কথা ভুলে যাবো? দুই কোটির বেশী মানুষের ভিটেমাটি ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেবার করুন কাহিনী ভুলে যাবো? জানোয়ারের বাচ্চারা!
আজ স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে পাকিস্তান সরকার একটি বার্তা দিলেও তাতে নেই কোন নতুনত্ব। রাষ্ট্রপতি আসিফ আলী জারদারি তার শুভেচ্ছা বাণীতে বলেন, ‘‘পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের সম্পর্ক অভিন্ন ধর্ম, ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের ভিত্তিতে রচিত। উভয় দেশের জনগণ ভ্রাতৃত্বময় সম্পর্ক উপভোগ করে। দেশ দু’টি আঞ্চলিক এবং বিশ্বের শান্তি স্থিতিশীলতা এবং উন্নতির জন্য একই রকম দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে।”
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী মির হাজার খান খোসো তার বাণীতে বলেন, ‘‘পাকিস্তান বাংলাদেশের সঙ্গে নিজের সম্পর্ককে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে মূল্যায়ণ করে থাকে, যা পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে রচিত। আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক ফোরামে মানুষের শান্তি স্থিতিশীলতা, উন্নতি ও কল্যাণের জন্য দুই দেশ একে অপরকে ঘনিষ্ঠভাবে সহায়তা করে থাকে।’’
আর এদেশের মীরজাফরেরা ক্ষমা চাওয়া তো দূরে থাক, উল্টো আবার দম্ভ করে বলছে তারা পাকিস্তানের পক্ষে ছিল কিন্তু মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের সাথে নাকি তারা জড়িত ছিল না!!! সুতরাং আটক নেতাদের মুক্তির দাবিতে সারা দেশে তারা আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে, যুদ্ধ ঘোষণা করেছে রাষ্ট্র ও স্বাধীনতাপন্থীদের বিরুদ্ধে। সাথে আছে স্বাধীনতার ঘোষনাপত্র পাঠক জিয়াউর রহমানের দল বিএনপি।
স্বাধীনতার পর বিচার শুরু হয়েছিল রাজাকারদের আর আটক ১৯৫ পাকিস্তানী অফিসারের হস্তান্তর ও বিচারের জন্য ত্রিপক্ষীয় চুক্তি হয়েছিল, বিনিময়ে দেশে ফিরে এসেছিল প্রায় ২লাখ বাংলাদেশী। কথা ছিল পাকিস্তান সরকার সেইসব অফিসারদের বিচার করবে, কিন্তু এখনও করেনি। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল কয়েকটি রায়ে বলেছেন যেহেতু এখনও এদের বিচার হয়নি এবং সেই চুক্তিটি ছিল নির্বাহী আদেশে, সুতরাং এদের বিচার করতে কোন বাধা নেই।
রাজাকারদের মধ্যে ৩৭,০০০ ধরা পড়েছিল যাদের মধ্যে ২৬হাজারকে ছেড়ে দেয়া হয়েছিল সাধারন ক্ষমার আওতায়। বাকিদের বিচার চলছিল বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু পর্যন্ত। পরে ৩১শে ডিসেম্বর ১৯৭৫ সালে এদের ছেড়ে দেয়া হয়, দালাল আইন বাতিল হয় এবং ক্রমে গোলাম আযমকে দেশে ফেরার সুযোগ করে দিয়ে জামায়াতকে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করা হয়। ফলে ব্যবসা আর মাদ্রাসা খাতে খুঁটি গেড়ে বসতে এদের কোন বেগ পেতে হয়নি। এরশাদ তো রাষ্ট্রের একটা ধর্ম নির্ধারন করে দিয়ে সবচেয়ে বড় অন্যায়টি করলো।
আর স্বাধীনতার মূল নায়ক ও তার সহচরদের দল আওয়ামীলীগ কি করছে ১৯৭৫ সালের পর থেকে??? ১৯৯২ সালে জাহানার ইমামের আন্দোলনে প্রথমে সমর্থন দিলেও পরে তা প্রত্যাহার করে নেন বঙ্গবন্ধুকন্যা; ১৯৯৫ সালে বিরোধীদলের পক্ষ থেকে তত্ত্বাবধায়কের আন্দোলনে জামায়াতের পাশে বসতে হাসিনার এক্তটুকু লজ্জা হয়নি। ১৯৯৬-এ ক্ষমতায় এসেও তিনি কেন শুধু তার বাবার হত্যার বিচারে মনযোগ দিলেন সেটাও চিন্তার বিষয়। আমার মতে রাজাকারদের বিচারটা আগে করলে তার সাথে বন্দগবন্ধু হত্যার অনেক যোগসূত্র পাওয়া যেত।
আর এখন দেশ-বিদেশে জামায়াতকে নিষিদ্ধের দাবিতে সমর্থন থাকলেও সেই আওয়ামীলীগই তা করছে না, সময় নিচ্ছে আদালতের কাঁধে বন্দুক রেখে দলটির নিবন্ধন বাতিল করতে; শুধু মামলা করে সাম্প্রতিক সহিংসতায় জড়িত জামায়াত নেতাদের বিচারের আওতায় আনছে। ট্রাইব্যুনালের বিচার কাজ চললেও সেখানে রয়েছে অনেক দূর্বলতা।
দেশে যদি বড় বড় অন্যায়ের বিচার না হয়, ক্ষমতাবানরা যদি সমঝোতা করে বা ভয় পেয়ে এদের ছাড় দেয়, এমনকি বিপুল জনসমর্থনের পরেও — তখন আমার মত অহিংস জনতার কি করার আছে সেটা নিয়ে ভাবতে ভাবতে মাথার খুলি খালি হয়ে যাচ্ছে।
তবুও প্রতিবাদ চলবে যতদিন না পূর্ন স্বাধীনতা পাচ্ছি।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.