ধর্মীয় উগ্রতা বাংলাদেশে, কিন্তু এখনি কেন?

একাত্তরের চেতনায় ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রের কথা ছিল না। হঠাৎ কেন এদেশে ধর্ম একটা ফ্যাক্টর হয়ে গেলো? এটা তো ৯০ভাগ মুসলমানের দেশ, এখানে দুই-চারজন কি করে কোটি মানুষের ধর্মকে 'বিপদে ফেলতে পারে' যে হেফাজতে ইসলামকে দরকার হতে পারে?
একাত্তরের চেতনায় ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রের কথা ছিল না। হঠাৎ কেন এদেশে ধর্ম একটা ফ্যাক্টর হয়ে গেলো? এটা তো ৯০ভাগ মুসলমানের দেশ, এখানে দুই-চারজন কি করে কোটি মানুষের ধর্মকে ‘বিপদে ফেলতে পারে’ যে হেফাজতে ইসলামকে দরকার হতে পারে?

[আমার কাছে ধর্ম বিষয়টি সমাজের সবচেয়ে স্পর্শকাতর বিষয় ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিককালে এ নিয়ে অনেক বেশী আলোচনা-সমালোচনা-বিদ্রূপ চলছে। আমি ব্যাঙ্গাত্মক আচরনের ঘোরবিরোধী, আবার কাঠমোল্লাদেরও দেখতে পারিনা, যারা কিনা ভাল করে না জেনে শুধুমাত্র কতিপয় ধর্মগুরু বা গুরুজনের কথামত অন্ধমোষের মত আচরন করে। আবার ধর্মীয় বিষয়কে যারা রাজনীতিতে টেনে এনে ফায়দা নিতে চান তাদেরকেও আমি ঘৃনা করি। জামায়াত-শিবিরকে ঘৃনা করি সবচেয়ে বেশি — কারন এরা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সহযোগী হিসেবে মুক্তিযোদ্ধা ও নিরস্ত্র বাঙ্গালী পুরুষদের হত্যা, নারীদের নির্যাতন এবং লুট-অগ্নিসংযোগ করেছে। ইসলাম বাঁচানর কথা বলে, মুক্তিযোদ্ধাদের নাস্তিক-মুরতাদ আখ্যা দিয়ে, ভারতের দালাল বলে আর হিন্দুদের গনিমতের মাল মনে করে অকথ্য নির্যাতন-নিপীড়ন আর ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। আবার বাংলাদেশের বিজয় হলেও এসব মীরজাফর এদেশ থেকে পাকিস্তানে চলে যায়নি, এমনকি ১৯৭৪ সালে যখন সিমলা চুক্তির মাধ্যমে ১৯৪জন পাকিস্তানী সেনা ফিরে গেলো পাকিস্তানে আর দেশে ফেরত আসল প্রায় ২লক্ষাধিক বাঙ্গালী তখনও শান্তি কমিটির সদস্য, রাজাকার-আলবদর-আলশামসরা এদেশ ছাড়েনি, কূটপরিকল্পনার অনহসগ হিসেবে। ১৯৭৫ সালে জাতির জনকের মৃত্যুর পর ১১,০০০ রাজাকারের চলমান বিচার বন্ধ হয়ে যায়, মুক্তি পায় এরা, সমাজে ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠা লাভ করে নানা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে, ধর্ম নিয়ে রাজনীতির উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়, গোলাম আযমকে দেশে ফিরিয়ে এনে জামায়াতের বাংলাদেশ শাখা খোলার ব্যবস্থা করে দেয়া হয়–যার আদেশে হয় তিনি মুক্তিযুদ্ধের মহান সেনা অফিসার, স্বাধীনতার ঘোষনা পাঠক ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান। ধর্মকে টেনে এনেছিলেন সংবিধানে-রাজনীতিতে, বিসমিল্লাহ যোগ করলেন সংবিধানের শুরুতে, আরো যোগ করলেন ‘আল্লাহর উপর অগাধ আস্থা ও বিশ্বাস’, রাষ্ট্রের একটা ধর্ম দেয়ার কথা তিনি হয়তো ভেবেছিলেন, যা বাস্তবে রূপ দেয় আরেক সেনাশাসক এরশাদ। স্বাধীন বাংলাদেশে সেই থেকে শুরু হয় ধর্মগুরুদের ঝনঝনানি, উগ্রতা আর অপব্যাখ্যার মাধ্যমে সাধারন মুসলমানদের ধর্মভিত্তিক রাজনীতিতে টেনে নেয়া, যার নোংরা ফসল আমরা দেখতে পাচ্ছি এখন। এরশাদের পর খালেদা জিয়া আর শেখ হাসিনা জামায়াত-শিবির ও ধর্মান্ধ ইসলামী দল ও সংগঠনগুলোর বিষয়ে কখনোই বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেননি, বরং উল্টোটা করেছেন। ফলে ধর্ম নিয়ে অপপ্রচার বন্ধ হয়নি, অসহিষ্ণুতা বেড়েছে আর অমুসলিমদের বিশ্বাসকে হেয় করা এবং তাদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে-সম্পদে হামলা ও এলাকাছাড়া করা একটা স্বাভাবিক বিষয়ে পরিনত হয়েছে।]

[এক্ষেত্রে বলে নেয়া ভালো যে, এদেশে কোন অমুসলিম গোষ্ঠী সংখ্যাগুরু হলেও আমি একই মন্তব্য করতাম। লেখাটিতে কোন ভুল বা ভালো মানুষের প্রতি আক্রমনাত্মক কিছু লিখে থাকলে ধরিয়ে দেবেন দয়া করে। কাউকে আহত করা আমার ইচ্ছা নয়, বরং নিজের চিন্তাগুলোকে পরিষ্কার করাই মূল লক্ষ্য।]

ইসলাম ও মহানবীকে অবমাননার প্রতিবাদে, “নাস্তিক ব্লগারদের” মৃত্যুদন্ড আর শাহবাগ গনজাগরনমঞ্চ বন্ধের দাবীতে ২২শে ফেব্রুয়ারি সকাল থেকে বায়তুল মোকাররম মসজিদ থেকে শুরু করে সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে শহীদ মিনার আর জাতীয় পতাকার অবমাননা করে “মুসুল্লিরা” [যাদের আচরন দেখেই পরিচয় বুঝা যায়]; হামলা চালায় সাংবাদিক, পুলিশ ও শাহবাগের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে তৈরি করা জাগরনমঞ্চ।

সেই থেকে শুরু, এসব উগ্র-সাম্প্রদায়িক শক্তির সরাসরি রাজনৈতিক আত্মপ্রকাশ, যেই চেহারাটা ‘শান্তিকামী’ নয়, বরং ভয়ংকর।

এই মারমুখী আচরনের শুরুটা আবার ১৫তারিখ থেকে, যেদিন রাতে ব্লগার-স্থপতি আহমেদ রাজীব হায়দারকে খুন করলো সেই একই উগ্র-সাম্প্রদায়িক শক্তির কোন না কোন একটি অংগ, যারা নিজেরাই আবার কিছুক্ষনের মধ্যেই অনলাইনে খুনের খবরটি প্রচার করতে লাগলো। তাকে পরিচয় করে দিল একজন নাস্তিক হিসেবে, দাবী করা হলো রাজীব গনজাগরনমঞ্চের নেতৃত্ব নিয়ে কোন্দলে খুন হয়েছেন। ধোপে টিকলো না। নতুন গল্প হলো রাজীবের ব্যক্তিগত সম্পর্কের দ্বন্দ্বে খুন হয়েছেন।

পরদিন বোমা ফাটালো জামায়াত-শিবির-অন্ধ ধর্মব্যবসায়িরা। “নাস্তিক ব্লগার রাজীব” নাকি “তার ওয়ার্ডপ্রেস সাইট নূরানী চাপাসমগ্র-তে মহানবী ও ইসলামকে কটাক্ষ করে অনেক কিছু লিখেছে” — মানে এদের মেরে ফেলাটা “জায়েজ”! খবরটা হলো পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর কিছু প্রাক্তন-বর্তমানদের পরিচালনায় চলা একটা সাইট থেকে, যারা সাধারনত ভারতীয় উপমহাদেশের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রচারিত খবর নিজেদের সাইটে দেয়।

কিন্তু বেশী সময় লাগলো না, দুই-তিনদিনের মধ্যেই সব চক্রান্ত ফাঁস হয়ে গেলো। অনলাইনে বিশ্লেষনসহ খবর ছড়িয়ে পড়লো যে, সেই সাইটটি পাবলিশ করা হয়েছে রাজীব খুন হবার পরের দিন। এই ফ্রী-ব্লগে তারিখ ইচ্ছেমত বদলে পোস্ট দেয়া যায়। আর একটা ইমেইল আইডি থাকলেই একাউন্ট খুলে অজস্র সাইট বানিয়ে যায়, যে কোন নামে। এরাও তাই করেছিল।

“নাস্তিক/ধর্মহীন/অধার্মিক/বিধর্মী/বকধার্মিক” নানা শব্দে “ধার্মিকের” বিপরীত শব্দ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। তবে এই বিষয়টা সারা বছর চাঙ্গা থাকেনা, আমাদের দেশে এটা ব্যবহার করা হয় “রাজনৈতিক কারনে”, সময়মতো। এবারও তাই হলো।

ধর্মের আচার হয়তো অনেকেই মানেননা, কেউ কেউ আবার পদ্ধতি নিয়ে ভাবেন না, কেউ আবার পদ্ধতি ও আচাররকেই বেশী গুরুত্ব দেন ইত্যাদি নানান মানুষের মিলনেই আমাদের সমাজ ব্যবস্থা। এখানে “কেউ কেউ” তার নিজের ও অন্য কোন ধর্ম নিয়ে পড়াশোনা করে যেটা সাধারন “আচারকেন্দ্রীক ধার্মিকদের” মধ্যে দেখা যায় না। আর কয়েকজন সেসব তুলনামূলক গবেষনা করে পারিপার্শ্বিকতা বিচারের পর সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে।

উদারপন্থীদের মধ্যে কয়েকটি ধারা চোখে পড়ে। [ধর্ম বিষয়ের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ে তাদের সংযুক্তি থাকে, কেননা মহাকাশ থেকে শুরু করে সবচেয়ে ক্ষুদ্র এককটির বিষয়ে ধারনা না থাকলে ধর্মের ব্যাপকতা বুঝতে পারেনা কেউ।]  নিজের ধর্ম পরিচয়টাকে বড় করে না দেখে “মানুষ” পরিচয়টাকে সামনে রেখে সৎ-সাহসী জীবনযাপন করে। কারন এরা জানে, প্রেম-ভালোবাসা না থাকলে পৃথিবীতে শান্তি আসবে না। সবার মধ্যে সামাজিকতা আর ন্যায়বিচার থাকলে কোন বিভেদ তৈরির সুযোগ থাকে না।

নির্বিবাদী উদারপন্থীরা নিজের ধর্মের শিকড় খুঁজতে গিয়ে অনেক নতুন কিছু আবিষ্কার করে যা তাদের ধর্মগুরু বা অভিভাবক বা বন্ধুদের কাছে তারা জানতে পারেনি। এরা অন্য ধর্ম গবেষনা ও অনুধাবনের মাধ্যমে “মানুষ-প্রকৃতি-মহাবিশ্ব-সৃষ্টিকর্তার” বিষয়ে বিশদ জ্ঞান লাভ করে, যার উন্নতি সাধিত হয় আলোচনা ও তর্কের মাধ্যমে। এরা নিজেদের বিশদ বিস্তৃত চিন্তার জগৎ, আচরন ও কর্মের দ্বারা আরো বেশী একাত্ম হয় ধর্মের নানা জটিল সূত্রের সাথে। তাই এরা নিজেদের ভাবনা-আবিষ্কার-প্রশ্নগুলো অন্যান্য সমমনা ব্যক্তিদের জানায়, মতামত যাচাই করে — নিজের জ্ঞানকে সিদ্ধ করতে। কিন্তু কখনো বিবাদে জড়ায় না। কারন এরা জানে ধর্ম-বিষয়ে আমাদের বাংলাদেশে এবং বিশ্বের বেশীরভাগ দেশেই উন্মাদনা আছে, যারা উস্কানিতে খুব সহজেই নির্মমরূপে আবির্ভূত হয়। চরম স্পর্শকাতর/বিতর্কিত বিষয়গুলো বাদ দিয়ে সরল অর্থে বা আকারে-ইঙ্গিতে নিজের কথাটা হয়তো লিখেন কোন ব্লগে বা পত্রিকায়। সেই ভাষায় থাকেনা আক্রমনাত্মক কিছু। সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলেও সেটা নিয়ে ঢাকঢোল পিটিয়ে ‘আজই বদলে দেবো সব’ বলেন না। ধীরে ধীরে নানা মানুষের মধ্যে প্রশ্ন ছড়িয়ে দিতে পারাটাই বেশী জরুরি, যেন তারা ভাবতে শুরু করে।

আরেক ধরনের উদারপন্থীরা “চেপে যায়”। প্রকাশ্যে কারো সাথে ধর্ম নিয়ে কোন কথাই বলে না। খুব বেশী হলে দুই-একজনের সাথে; সেই আলোচনায় থাকে হতাশা। ধর্ম নিয়ে গোঁড়ামি এরা মানতে পারে না।

শেষ টাইপের উদারপন্থীরা ধর্মবিদ্বেষী, যারা দুর্নিবার সাহসী কিন্তু ধীরস্থির নন, ধর্মানুভূতির বিষয়টি তাদের প্রকাশ্য কর্মের মাধ্যমে প্রকাশ করে, বাহাস আহবান করে [মাইকিং বা পত্রিকা বা টিভির খবর হয়ে নয়, বরং সাম্প্রতিক ইন্টারনেট যুগের কল্যানে সামাজিক মাধ্যমে], যেখানে ৫০ থেকে ১০০০জন পর্যন্ত নিজেদের মতামত দেয় আর কয়েক হাজার মানুষ সেসব লেখা ফেসবুক-টুইটারের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। এসব উদারপন্থীরা সমালোচনা করার সময় ন্যূনতম ভদ্রতার ধার ধারেন না, ফলে ব্যবহার করেন কড়া শব্দ আর ব্যাঙ্গাত্মক যুক্তি বা কার্টুন। সমর্থক ও বিরোধীরা দুইটি উদ্দেশ্যে—পরিবর্তনের বার্তা পৌঁছাতে ও সহিংসতা উস্কে দিতে—সেগুলো বড় পরিসরে ছড়িয়ে দেয়। কোন কোন প্ল্যাটফর্ম সেগুলো সহজভাবে নেয় আর বাকীরা ফুঁসে উঠে ক্ষোভে-ঘৃনায়।

“ধর্মানুভূতিতে আঘাতের” বিচার ধার্মিকরা নিজেরাই করে থাকেন, কোন আইন-আদালত মানেন না, ক্রোধের প্রাথমিক বহিঃপ্রকাশ খুব স্বাভাবিকভাবেই ভয়ংকর হয়, কেননা তাদের কাছে সৃষ্টিকর্তা, ধর্ম ও সেই ধর্মে বলা সকল বিষয় সর্বোচ্চ পবিত্র। কিন্তু ধর্মবিদ্বেষীদের এক অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে তারা নিজেরাও যে অধর্ম করছেন সেটা তাদের উত্তপ্তমাথায় তখন আর থাকেনা। ফলে শান্তি আরো দূরে সরে যায়।

কারো ধর্মবিশ্বাস বা জীবনদর্শন হঠাৎ বদলে দেয়া যায় না, নষ্টও করা যায় না; আর তাই বিদ্রুপ করাও ঠিক না। ধর্ম নিয়ে বিতর্ক-হানাহানি হয় শুধুমাত্র রাজনীতিবদদের কারনে।

আর তাই ধর্ম নিয়ে কোন বিতর্ক হলে সর্বজনগ্রাহ্য ধর্মগুরু-আদালত ও রাষ্ট্রপরিচালনাকারীরা মিলে প্রকাশ্যে আলোচনা করে ব্যবস্থা নিবেন। কেননা ধর্ম কোটি কোটি মানুষ ও তাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের চিন্তা ও কাজের জগৎ নির্ধারন করে। একজন জ্ঞানী ব্যক্তি মাত্রই ধীরস্থির-সহিষ্ণু ও বিচক্ষন, তিনি তার অর্জিত জ্ঞানের বলে সেইসব “ধর্মহীন/নাস্তিক/বিধর্মীদের” সাথে আলোচনায় গিয়ে সহজেই তার মতামত দিয়ে ধর্মবিদ্বেষীদের শান্তির পথে আনতে পারেন।

সত্যিকারের ধার্মিকরা সহিষ্ণু, আর বকধার্মিকরা উগ্র—এই কথাটি মানতেই হবে।

হাজার বছর ধরে চলে আসা ধর্মীয় বিধিবিধান সেই ধর্মের অনুসারীরা বা অন্য ধর্মের উদারপন্থীরা হুটহাট পাল্টে দিতে চাইতে পারেন না। তাদেরকে সেই বিষয়টি আগে যথেষ্ট অনুধাবন করতে হবে, যেন তারা যে কারো সাথে আলোচনায় বসে তাদের মত প্রতিষ্ঠা করতে পারেন। “সনাতনী ধর্মভীরু” ব্যক্তিদের সাথে আলোচনার ক্ষেত্রে অবশ্যই বেশী সচেতন থাকতে হবে। কেননা “পরিবর্তন” আনতে চাইলে সহনশীল ও বিচক্ষনতার সাথে পরিস্থিতি না সামলালে হিতে-বিপরীত হবেই। বিরোধীরা [আচারকেন্দ্রীক-সনাতনী ধার্মিকরা] যাচ্ছেতাই ভাষায় গালিগালাজ-হুমকি দিবে; “অসহিষ্ণু” আচরনের চরম অপ্রত্যাশিত প্রকাশও দেখা যায় বিভিন্ন সমাজে — খুন বা সমাজ থেকে বহিষ্কার/এক ঘরে করে দেয়া।

বিগত পাঁচ বছরে কিছু তরুন ব্লগার এধরনের লেখার জন্য “বিরোধীপক্ষের” তোপের মুখে পড়েছেন, শারীরিক-মানসিক আক্রমনের লক্ষ্যবস্তু হয়েছেন। কিছু উদারপন্থী কলামিস্ট-সাহিত্যিক-সাংবাদিকও নানা বাধায় পড়ছেন। কয়েকজন খুন হয়েছেন। মামলা-সালিশও হয়েছে কয়েকটি। কিন্তু বিষয়টির একটা স্থায়ী সমাধান এখনো হলো না বাংলাদেশে।

বলছিলাম রাজীবের খুন হবার কথাটা

রাজীব খুন হবার পর জানতে পারলাম সে মাঝে মাঝে শাহবাগে যেত, মিছিল করতো-শ্লোগান দিতো, আড্ডা দিতো বন্ধুদের সাথে — বুয়েট থেকে চারুকলা পর্যন্ত, অনলাইনে জামায়াত-শিবিরের নাটের গুরুদের সর্বোচ্চ শাস্তিসহ, জামায়াত নিষিদ্ধ করা ও এর অর্থায়নের উৎসগুলো বন্ধের জন্য তার বিশেষ প্রচেষ্টা ছিল। এটুকুও বুঝা গেলো যে গনজাগরনমঞ্চের কোন নেতৃস্থানীয় অবস্থানে সে ছিল না। এমনকি তার বান্ধবীর সাথে এমন কোন সমস্যা ছিল না যে সে খুন হতে পারে।

শিবিরের ফেসবুক পেজগুলোতে পোস্ট আর কমেন্ট দেখে আর ওদের ব্লগগুলোর আলোচনার বিষয়বস্তু দেখে স্পষ্ট হলো খুনের রহস্য এবং এর সমর্থকদেরও চেনা গেলো। এসব জামায়াতী ধর্মব্যবসায়িরা বুঝাতে চাইলো ইসলাম ধর্মকে নিয়ে কেউ কটাক্ষ করলে তাকে রেহাই দেয়া হবে না।

যদিও লেখাগুলো ব্যঙ্গাত্মক, সেগুলো যে রাজীবের লেখা নয় সেটা স্বাভাবিক, কেননা সেই সাইটের ১৯টি লেখা পোস্ট করা হয়েছিল ২০১২ সালের জুন থেকে নভেম্বরের মধ্যে। কয়েকটি লেখা ছিল একই দিনে পোস্ট করা। রাজীব ব্লগিং করতেন আমারব্লগ ও সামহোয়্যারইনব্লগে, কিন্তু সেখানে তিনি কোনদিন তার “ইসলাম ধর্ম ও মহানবীবিরোধী” এমন কিছু ছাপা হয়নি যা নিয়ে সারা দেশে তোলপাড় হয়েছে। আর তার যদি একটা ওয়ার্ডপ্রেস সাইট থাকে তবে সেটা তো তার বন্ধুদেরও জানার কথা, শুধু তার শত্রুরা জানলো কি করে! এসব নাটক ধোপে টিকেনি। জনগন বুঝে গেছে সাইটটি রাজীবের নিজের নয় এবং চরম অবমাননাকর লেখা দিয়ে ধর্মভীরু ও ধর্মব্যবসায়িদের উস্কে দেয়া হয়েছিল, যার বহিঃপ্রকাশ আমরা দেখেছি ঠিক পরের শুক্রবার।

তবে সরকার আজ প্রায় দুইমাস পরেও যখন এই বিষয়ে কোন স্পষ্ট বক্তব্য দেয়নি এবং গনজাগরনমঞ্চ থেকে যেহেতু বলা হয়েছে ‘দুই-একজনের জন্য সকল রাজাকারের সর্বোচ্চ বিচার ও জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের দাবীতে আন্দোলনকারী সবাইকে [নাস্তিক বলে] দোষারূপ করবেন না’, তখুন বুঝা যায় রাজীব ধর্মবিদ্বেষী বা ধর্ম সংস্কার নিয়ে তার মনোভাব প্রকাশ করেছিলেন — হয়তো আমারব্লগ বা সামহোয়্যারইনব্লগে।

কোন পক্ষই বিষয়টি স্পষ্ট করলো না, না সরকার, না রাজীবের বন্ধুরা।

সে যাই হোক, আমার চিন্তা হলো কেন রাজীবকে মেরে ফেলা হলো? ধর্মগুরুরা উগ্র ধর্মান্ধদেরকে খুন করতে না পাঠিয়ে কেন আলোচনা করতে পাঠালেন না? কেন রাজীবের বাবা-মা বা কোন কাছের কারো মাধ্যমে রাজীবকে বোঝানর চেষ্টা করেন নি এসব “ধর্মভীরুরা”? রাজীবের বাসায় বা এলাকার মসজিদে কেন সালিশ বসানো হলো না? সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিরা কেন মামলা করলো না?

খুন করে ভয় দেখিয়ে অন্য উদারপন্থীদের কি ইঙ্গিত দিতে চায় ধর্মব্যবসায়ি ও উগ্র ধর্মান্ধরা?

শাহবাগকে ভয় দেখানোর জন্য এটা একটা বড় অস্ত্র ছিল। তবে মাঠ খালি করতে পারেনি কুচক্রী জামায়াত-বিএনপি, যারা এখন সরকারপতন আন্দোলন করছে।

ধর্ম নিয়ে কেউ যদি কটুক্তি করে বা ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন বা কোলাজ করে, তা আমি সমর্থন করিনা; এবং আমার পর্যবেক্ষন অনুযায়ি এসব কাজ আসলে করে ধর্ম ব্যবসায়িরা — রাজনৈতিক ইস্যু তৈরি করার জন্য।

হ্যা, বলতে চাইছিলাম যে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে সারাদেশে ও বিশ্বের অনেক দেশেও যে জাগরন উঠেছে তাতে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের স্বার্থহানী হয়েছে, বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামি ও তার চেলা ইসলামি ছাত্র শিবির এবং প্রধান বিরোধীদল বিএনপির। তার প্রমান “আমারদেশ, সংগ্রাম, নয়া দিগন্ত আর দিগন্ত টিভি”। ফেব্রুয়ারির ৫তারিখে শাহবাগে কাদের মোল্লার বিচারের রায়ে অসন্তুষ্ট তরুনেরা ফাঁসির দাবী নিয়ে প্রতিবাদ শুরু করলে এরা শুরু করে পাল্টা আক্রমন। আন্দোলনকে “সরকারের পোষা বা পরিকল্পিত” দাবি করে প্রোপাগান্ডা চালায়, মঞ্চের বক্তাদের মধ্যে কিছু সরকারদলীয় ও সমর্থক থাকায় সেই প্রোপাগান্ডা আরো সফল হয়। অরাজনৈতিক-সাধারন জনতা ধীরে ধীরে আগ্রহ হারায়। আর অপরাধ প্রমানের পরেও কাদের মোল্লার ফাঁসি না হওয়ায়, গোপন আঁতাতের কথা বিশ্বাস করেন অনেকেই।

আইন সংশোধন করে আপীলের বিধান যুক্ত করায় আন্দোলনকারীরা খুশি হলেও আর অনেকদিন পরেও কোন দাবী পূরণ না হওয়ায় শাহবাগে আগত ও একাত্মতা জানানো মানুষের মাঝে সন্দেহ ঢুকে যায়। যুদ্ধপরাধী দলেরও বিচার করা যাবে মর্মে আইন সংশোধিত হয় আরো দেড় মাস আগে, কিন্তু এখনো এ নিয়ে সরকারের কোন মাথাব্যাথা নেই। সেই নভেম্বর মাস থেকে শুরু করে ফেব্রুয়ারি-মার্চ-এপ্রিল পুরোটাই সহিংসতার মধ্য দিয়ে অতিক্রম করছে জামায়াত-শিবির, তাদের লক্ষ্য চলমান বিচার বন্ধ করা, কেননা এই বিচার সম্পন্ন হলে দলের প্রধান ১০-১২জন নেতার ফাঁসি হয়ে যাবে।

আজ ৮ই এপ্রিল, এখনো জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ হয়নি [সহিংসতার জন্য মামলা হয়েছে, কয়েকজন গ্রেপ্তার হয়েছে] এবং ট্রাইব্যুনালের বিচারও বন্ধ হয়নি।

ও হ্যা, বলছিলাম যে রাজীব হত্যা আর পরদিন ব্লগটার কথা প্রকাশ হওয়া, দুদিন পর ইনকিলাবে কিছুটা এবং তার পরদিন থেকে আমার দেশে সেইসব নোংরা ভাষার ব্লগগুলো প্রকাশ করা, তার দুই-তিনদিন পর অর্থ্যাৎ ২২শে ফেব্রুয়ারি ঢাকাসহ সারাদেশে জামায়াত-শিবিরের নেতৃত্বে বিরোধী জোটের ইসলামী দল ও সমমনা সংগঠনগুলোর তান্ডব দেখে মনে হচ্ছিল যেন একটা রাজনীতি করে বড় একটা জমায়েতের চেষ্টা চলছে—শাহবাগের আন্দোলনকারী ও সরকারের বিরুদ্ধে যারা কথা বলবে।

চেষ্টা হবারই কথা, প্রথমদিকে শাহবাগের গনজাগরনকে সাধুবাদ জানালেও কয়েকদিনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর উদাত্ত সহমত প্রকাশ করার কারনেই বোধ করি বিএনপি সেই অবস্থান থেকে সরে আসে। তাছাড়া জামায়াতের সাথী বিএনপি ভেবেছিল শাহবাগ থেকে সরকারের সীমাহীন দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি-সন্ত্রাস-দমননীতির বিরুদ্ধে শ্লোগান উঠবে। কিন্তু নাহ। তাই চলতে থাকে নানা কথা-গালমন্দ আর বিচ্ছিরি সব প্রোপাগান্ডা, বিশেষ করে শিবিরের পেজের কাজ-কর্ম দেখে মনে হচ্ছিল এদের কর্মীরা ঘরের ভেতর ঘাপটি মেরে থাকে এবং এদের গুরুরা যা বলে তার বাইরে কিছুই বিশ্বাস করে না, ঘেটেঁও দেখে না [নাকি পারে না!]। দু-একজন নেতা তো ঘোষনাই দিলেন সরকারবিরোধী মঞ্চ করার, কিন্তু এখনো পারেন নি।

ধর্মীয় নোংরামী ও রাজনৈতিক সহিংসতা উস্কে দিলেও আমারদেশ, সংগ্রাম, নয়াদিগন্ত, ইনকিলাব ও দিগন্ত টিভির বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এখনও চলছে অমুসলিম ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির ধর্মানুভূতিতে আঘাত, বাসা-ব্যবসায় হামলা, লুট, আগুন দেয়া; পুলিশ ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের উপর আক্রমন; এবং পাশাপাশি টাকা দিয়ে কিছু মাথা কিনে তাদের দিয়ে লিখিয়ে-বলিয়ে শাহবাগ-ট্রাইব্যুনাল ও সরকারের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি। নতুনরূপে যুক্ত হলো হেফাজতে ইসলাম যারা আমারদেশের ব্লগ ছাপানোর পর মাঠে নেমেছিল সবার সাথে। যুদ্ধাপরাধ ও জামায়াত-বিরোধী অবস্থানের কথা বললেও, তাদের দাবীনামা বা কোন সাম্প্রতিক বক্তব্যে সেসবের ছিটেঁফোঁটা নেই। আবার ৬ই এপ্রিল মতিঝিলে সংগঠনটির [সামনে থেকে] নাস্তিকবিরোধী সমাবেশে জামায়াতও একাত্মতা প্রকাশ করেছে। বিএনপি আর পল্টিবাজ-স্বৈরাচার এরশাদ তো ছিলই “নারায়ে তাকবীর” শ্লোগানসহ।

অনেক লিখেছি। লেখার বিস্তার ঘটানোর বিস্তর সুযোগ থাকা সত্বেও আর এগুচ্ছিনা। যা বলতে চাইছিলাম এতক্ষন তা হলোঃ

  • কেউ যদি কোন ধর্মের বিষয়ে ব্যঙ্গাত্মক কিছু করে তার বিচার করা উচিত।
  • ব্লগার রাজীব ও আটককৃত ৪ব্লগারের কি কি দোষ তার স্পষ্ট ব্যাখ্যা চাই।
  • কোন ধর্মগুরু বা গুরুতেপূর্ণ ব্যক্তি যদি ধর্মের অপব্যাখ্যা করে তার বিচার চাই।
  • কেউ যদি ধর্মীয় সন্ত্রাস উস্কে দেয় তার কঠোর শাস্তি চাই।
  • ধর্ম পালনে কাউকে বাধ্য করা যাবে না।
  • অন্য ধর্মের সব বিষয়কে শ্রদ্ধা করতে হবে, আক্রমন করা তো দূরে থাক।
  • সামাজিক-রাজনৈতিক-ধর্মীয় সকল অন্যায়ের বিচার করতে হবে, কাউকে ক্ষমা করা যাবে না।
  • ধর্মকে যার যার মনের মধ্যে থাকতে দিতে হবে, আচার পালন করার পাশাপাশি ধর্মের আদর্শ নিজের জীবনে সদ্বব্যবহার নিশ্চিত করার শিক্ষা দিতে হবে।
  • সৎ ব্যক্তির সাথে ভাল আচরন এবং ভন্ডদের শাস্তি দিতে হবে বা সম্ভব না হলে বর্জন করতে হবে।

Comments

  1. probirbidhan Avatar

    হেফাজতের হাটহাজারি মাদ্রাসার শিক্ষকদের ও সমর্থক নেতাদের জঙ্গী-আফগান কানেকশন, ডেইলি স্টারের জুলফিকার আলী মানিক বলেছেন কিছু পুরোনো কথা। [ভিডিওঃ https://www.facebook.com/photo.php?v=10200928771081308%5D

    বিস্তারিত পড়ুনঃ http://www.thedailystar.net/beta2/news/target-taliban-rule/

    Bangla Leaks Page-এর সৌজন্যে আরো কিছু দরকারি তথ্য 😉

    সাউন্ডক্লাউডঃ http://soundcloud.com/bristi-balika/sets/hib

    ইউটিউব প্লেলিষ্টঃ https://www.youtube.com/playlist?list=PLeNaffQ6SDM_A1PHY9kb9kZ57Nsjpy_k8&feature=view_all

    ফেইসবুক ভিডিওঃ
    হেফাজতে ইসলামীর কর্মপন্থাঃ
    http://www.facebook.com/photo.php?v=113474495516469

    হেফাজতে ইসলামীর সাথে জামায়াতের সম্পর্ক-০১ঃ
    http://www.facebook.com/photo.php?v=113513432179242

    হেফাজতে ইসলামীর সাথে জামায়াতের সম্পর্ক-০২ঃ
    http://www.facebook.com/photo.php?v=113441355519783

    হেফাজতে ইসলাম-এর সাথে BNP-র সম্পর্ক-০১ঃ
    http://www.facebook.com/photo.php?v=112989755564943

    হেফাজতে ইসলাম-এর সাথে BNP-র সম্পর্ক-০২ঃ
    http://www.facebook.com/photo.php?v=112999402230645

  2. probirbidhan Avatar

    Mahbub Rashid-এর ফেসবুক স্টেটাসঃ

    কতিপয় ব্লগার নাস্তিক।
    বাস্তব জগতেও কতিপয় মানুষ নাস্তিক বটে। বাস্তব জগতে যত লোক নাস্তিক ব্লগস্ফিয়ারেও একই হারে মানুষ নাস্তিক। জগতে নাস্তিক থাকলে ব্লগেও আছে- ব্লগ দুনিয়ার বাইর কিছু না।

    নাস্তিকতা সমস্যা না- সমস্যা ধর্ম বিরোধিতা -এইটা ফ্যাসিস্ট আচরণ। অন্যকে আক্রান্ত করা শুধু এ কারণে যে সে একটা ধর্মে বিশ্বাসী এইটা ভয়ংকর বিষয়।

    কেন কেউ কেউ এমন ভাবে যে ধর্মকে আঘাতই করতে হবে? কি তার ইনফেরিওরিটি?

    আমেরিকা গত ২০ বছরে ইসলামকে একটা দানব একটা বর্বর শক্তি হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ইসলামকে দানব বানালে ইরাক-আফগানিস্তান-পাকিস্তান দখলে সুবিধা হয়।

    ২০ বছরে দুনিয়াদারির খবর রাখেন এমন সব মধ্যবিত্তের ধারণা জন্মেছে, ইসলাম একটা দানবই বটে। তাই দাড়ি টুপি লুঙ্গি পরা দেখলেই আপনার মনে হয় এইটা একটা রাজাকার বা হরকতুল জিহাদ। কেউ নামাজ পরলেও আপনার একই ধারণা হয়। তাদের আপনারা বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন নিজেদের সমাজ থেকে।

    তাই নিজেরা যেন বিচ্ছিন্ন হয়ে না পড়েন, নিজেদের আচার আচরণ কথা বার্তা থেকে সবটুকু মুসলমানিত্ব দূর করে ফেলেন। ভয়ে থাকেন কখন আপনাকে কেউ মৌলবাদী বলে।
    মুসলমান ঘরে জন্মেছেন বলে খুব শরম বোধ করেন।

    এই শরমটাই অতিরিক্ত হয়ে গেলে নাস্তিক হয়ে পরে কিছু লোক। আর আরো বেড়ে গেলে হয়ে পরে ইসলাম বিরোধী।

    আমার শরম নাই।
    আমি জানি ও বুঝি, চার পাঁচ পুরুষ আগে আমার পূর্বপুরুষ শিডিউল ক্লাস-নমঃশূদ্র হিন্দু ছিল। তার আগে বৌদ্ধ। বা ধীবর বা কোল মুন্ডা ওঁরাও।

    ফলে আমি মুসলমান হতে পারি, কিন্তু সনাতন রক্ত আমার দেহে আছে। আমি সে রক্ত অস্বীকার করি না।

    সাম্প্রদায়িক মুসলমান আবার নিজের সনাতন রক্ত নিয়ে শরমে থাকে। সে চায় ঐ রক্তকে অস্বীকার করতে। তাই বেশি করে মুসলমান হয়ে উঠে।

    আমি চাইলেও তো আরব হতে পারব না -সাহেব হতে পারব না।
    আমার শরম নাই সত্য স্বীকারে।

    ধর্মবিরোধিতা ও সাম্প্রদায়িকতা উভয়েই পরিত্যাজ্য।

    হেট স্পিচ আর ব্লাসফেমি ল’ উভয়কেই প্রত্যাখ্যান করতে হবে।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

en_USEnglish
Powered by TranslatePress