হাটহাজারিভিত্তিক সুবিধাবাদী সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের দুঃসাহসিকতা দেখে গনমানুষের মধ্যে চরম আতংক তৈরি হলেও, জনগনের অভিভাবক সরকার তা আমলে নেয়নি। উনারা সরকার-বিরোধীদল করে, চুরি-মারামারি করে অভ্যস্ত। বড়(!) কিছু না ঘটলে তো উনারা পাত্তাই দেন না কোনকিছু। আবার ছোট ঘটনা মিডিয়াতে না আসলে সেটা আসবেই না, সে বিষয়ে সরকার নিশ্চুপ থেকে ভেতরে ভেতরে কাজ করে যেখানে জবাবদিহিতার কোন বালাই নেই।
আমরা দেখেছি হেফাজত ১৩দফা দাবীনামা ও লংমার্চ ঘোষনা করে ৫ই মার্চ এবং তারপর সেই দাবী নিয়ে পুরো একটা মাস তারা প্রচারনা চালালো; সেই কাজে সাহায্য করলো জামায়াত-শিবির-ইসলামী দল এবং বিএনপিসহ সকল সরকারবিরোধীরা [ও শাহবাগের জাগরনবিরোধী]।
ধর্মীয় উগ্রতা বাংলাদেশে, কিন্তু এখনি কেন?
এই সময়টাতে আমরা অনেক কাজে ব্যস্ত ছিলাম, মিডিয়া ও সরকারও।
তাই এসব দাবী নিয়ে কেউ উচ্চবাচ্য করেনি যতক্ষন না হেফাজতীরা হুংকার দিয়ে লংমার্চ সফল করার কথা বলে আস্ফালন দেখালো। তখন শাহবাগের সাথে সংশিষ্ট নেতা ও সাধারন অরাজনৈতিক স্বাধীনতাপ্রেমী, সুশীল সমাজের পরিচিত মুখ, মিডিয়া ও সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা ছুটোছুটি শুরু করলেন।
আস্তে আস্তে বের হতে লাগলো হেফাজতীদের নানা কানেকশন। আর দাবীগুলোর মধ্যে কয়েকটি নিয়ে বেদম প্রতিবাদ হতে লাগলো।
প্রতিবাদকে আমি স্বাগত জানাই, কিন্তু খামখেয়ালীপনাকে আমি তিরস্কার করি; বিশেষ করে, দায়িত্বপ্রাপ্ত ও দায়িত্ববান হিসেবে বাহাদুরী করা ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানদের।
নানা অনাকাংখিত ঘটনার মধ্য দিয়ে লংমার্চ হলো, কিন্তু সরকার ও জনগনের আশংকা ভুল প্রমানিত হলো–হেফাজতীরা খুনাখুনি করেনি, মাত্র দুইজন মানুষ মরেছেন, কয়েকজন মাত্র সাংবাদিক লাঞ্ছিত-নিগৃহীত ও ন্যাক্কারজনক হামলার শিকার হলেন, শাহবাগের গনজাগরনমঞ্চে হামলা হলো। আর হুংকার-গালিগালাজের কথা আর কি বলবো!
এইগুলা তো কোন ব্যাপারই না, যার প্রমান দিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, ধন্যবাদের মাধ্যমে।
আজকে ফেসবুকের Amra-আমরা পেইজে দেখলাম সরকারের ব্যাখ্যা ছাপা হলো; আবার প্রথম আলো–ডেইলি স্টারেও দেখলাম সেই খবর।
আমার কাছে সবচেয়ে বড় লজ্জার হলোঃ হেফাজতীরা কি কর্মসূচী দিলো সেটা নয়, বরং এরা যে এই ২০১৩ সালে এসে বাংলাদেশ এরকম ১৩টা দাবী তুলতে পারলো সেই দুঃসাহস দেখে।
শতকরা ৯০ভাগ মুসলিমের দেশে নাকি ইসলাম ধ্বংস হচ্ছে কয়েকজন তথাকথিত নাস্তিকের(!) কারনে!!!
এটা কি জামায়াত-শিবির-ইসলামী দল আর বিএনপি’র সমর্থকদের দ্বারা পরিকল্পিতভাবে পরিচালিত চলমান অমুসলিমদের উপর নির্লজ্জ হামলাকে পাশ কাটানোর একটা চেষ্টা? জানিনা, তবে এটা বুঝি এদেশে অমুসলিমদের স্বাধীনতা(!)-নাগরিক অধিকার ও ধর্মীয় ধিকার দিতে ইচ্ছে নেই বেশিরভাগ মুসলিমের।
আফসোসের কারন ২০১২ সালের জানুয়ারি থেকে ঘটা কয়েকটি হামলা ও সেসবের প্রেক্ষিতে সরকার ও অমুসলিমদের গা-ছাড়া ভাব [এমন তো হতেই পারে, সেই ১৯৪৭ থেকে এদেশ থেকে অমুসলিমরা দিনের পর দিন নির্যাতিত-বঞ্চিত হতে হতে অনেকেই ছেড়েছে এইদেশ, প্রান দিয়েছে হায়েনাদের হাতে বা হামলায় সর্বস্ব হারিয়ে সর্বশান্ত হয়েছে।
হাটহাজারি-সাতক্ষীরা-দিনাজপুর-বাগেরহাটের [অনৈসলামিক] হামলার কোন কিনারা হয়নি, এমনকি হাটহাজারির ঘটনার প্রায় ১৫দিন পর হাইকোর্ট সরকারকে নির্দেশনা না দিলে সরকার কিছু করতো বলেও মনে হয়না। আর ৩১শে মার্চ ও ১লা এপ্রিল সাতক্ষীরার ঘটনার খবর দেশের জনগন জানতোই না, যদি না ঢাবি’র জগন্নাথ হলের শ’পাঁচেক হিন্দু শিক্ষার্থীরা শাহবাগে এসে কয়েক ঘন্টার জন্য রাস্তা অবরোধ না করতেন।
রামুর মন্দির আর নির্ঝঞ্ঝাট বৌদ্ধদের উপর হামলার ঘটনায় অনেক কমিটি হয়েছে, তদন্ত হয়েছে, কিছু আক্রমনকারীকে নাকি চিহ্নিতও করা হয়েছে, কয়েকজন চ্যালা নাকি গ্রেপ্তারও হয়েছে; মন্ত্রী-এমপি-বিশিষ্ট নাগরিকেরা সফর করেছেন, সেমিনার সিম্পোজিয়াম হয়েছে… কিন্তু কই, তদন্ত রিপোর্টটা কই? সেটা কি দেখতে পারি কি খুঁজে পেলেন আপনারা? কারা এসব করেছিল? কার বুদ্ধি ছিলো এই আক্রমন, এই জামায়াত-শিবিরপ্রবন এলাকায়?
২০১২ সালে মায়ানমারে জাতিগত দাঙ্গার সময় সেদেশের সরকার বাংলাদেশী দূতাবাসকে জানিয়েছিল কক্সবাজার এলাকায় জামায়াতীরা অস্ত্র ও প্রশিক্ষন দিয়ে রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করছে–খবরটি জেনেছিলাম সংসদে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাষনে। কিন্তু এখন পর্যন্ত শুনিনি সরকার সে বিষয়ে দ্রুত কি ব্যবস্থা নিয়েছিল। আর সে কারনেই বোধকরি রামুর হামলা করার সাহস পেয়েছিল আক্রমনকারীরা।
এমনকি ২৮শে ফেব্রুয়ারি থেকে সাঈদীর রায়ে ক্ষুব্ধ হয়ে জামায়াত-শিবির-ইসলামী দলগুলোর পাগলা কুত্তারা বিএনপি’র সমর্থনে সারাদেশের কমপক্কে ৩৫টি জেলায় ‘আওয়ামীলীগ সমর্থক’ হিন্দুদের মন্দির, বাড়িঘর আর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা করে, খুন-ধর্ষন করে। হামলার ধরন দেখে মনে হয় অনেকদিন ধরে সুযোগ খুঁজছিল হায়েনারা।
আমার হতাশা সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিচ্ছে কিনা জানিনা, তবে চেষ্টা করছি সেরকম যেন না হয়। বাংলাদেশের সকল মুসলিমদের উপর আমার রাগ নেই, কারন আমি গত ৩০বছরে যাদের সাথে মিশেছি-ঘুরেছি তাদের প্রায় সবাই মুসলিম। তবে তাদের মধ্যে বেশিরভাগই সুবিধাবাদী শ্রেনীর।
এই উদাহরনগুলো টেনে আনার কারনটা হলো একটা বিষয় বলাঃ সময়ের কাজ সময়ে না করলে জাতিকে তার চরম মূল্য দিতে হবে, এই পৃথিবীতেই, পরকালের কথা বলে আর ভয় দেখাতে চাই না।
ন্যায়বিচার চাই।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.