সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া একটা কঠিন প্রশ্ন তুলেছেন, যা এই সময়ের অস্থিরতা ও স্বেচ্ছাচারী আচরণকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
২০শে জানুয়ারি এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন: “অন্য অনেক প্রশ্নের মাঝে মাথায় ঘুরপাক খায় বাধ্যতামুলক অবসরে পাঠানো ডিজিএফআই প্রধানকে গ্রেফতার করা হল না কেন? এক উপদেষ্টার সাথে বোঝাপড়ার গুজব শুনি। এসব কি বের হবে কোনোদিন? এক সিনিয়র সাংবাদিককে শুনলাম সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে সেই অফিসারের দুই ঘন্টা গ্রেফতার হওয়ার বিষয়ে রিপোর্ট করার কারণে। তা আগের নিয়মেই কি সব চলছে নাকি আমাদের সত্য জানিয়ে একটু জ্ঞান আহরণের সুযোগ করে দেবেন কর্তারা?”
৫ই আগস্টে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর প্রতিষ্ঠিত অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সেনাবাহিনীতেও ব্যাপক রদবদল আনে। ফলে ২০০৯ সাল থেকে বিভিন্ন সময় নানা অজুহাতে চাকরি হারানো বা বাধ্যতামূলক অবসরে যাওয়া সেনা সদস্যরা দাবি জানায় যে তাদেরকে সকল সুযোগ সুবিধাসহ সসম্মানে বিদায় দিতে হবে।
বঞ্চিত অনেক অফিসার ও সৈনিক তাদের দাবি জানাতে রাস্তায় নামে, কেউবা ফেসবুক ও ইউটিউব ব্যবহার করে তাদের দাবি তুলে ধরছে।
এসব ব্যক্তিরা মূলত ২০০৯ সালের পিলখানা হত্যাকাণ্ড ও ২০১১ সালের ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানে জড়িত থাকার অভিযোগে বরখাস্ত হয়েছেন। এছাড়া সেনাবাহিনীর শৃঙ্খলা ভঙ্গ, চুরি, নারী কেলেংকারি, উগ্রবাদী ইসলামী দলের সাথে সম্পৃক্ততা এবং আমেরিকার গ্রীণ কার্ড গ্রহণের মতো কারন উল্লেখ করে প্রায় তিন শতাধিক ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন বলে জানা যায়।
সম্প্রতি বরখাস্তকৃত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক আল-জাজিরার সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের সামির সাথে এক লম্বা অডিও সাক্ষাৎকারে সেনাবাহিনীর ভেতরে ঘটে যাওয়া নানা বিষয় উল্লেখ করে বলেন তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ অন্যায়ভাবে পদক্ষেপ নিয়েছিল, তাই তাকে সসম্মানে চাকরিতে ফিরিয়ে এনে দেশপ্রেমিক হিসেবে বীরউত্তম খেতাব দিতে হবে৷ এছাড়া সেনাবাহিনীতে ইসলামিক ধারায় জীবনযাপনের জন্য শাস্তিপ্রাপ্ত অন্যদের পক্ষেও তিনি কথা বলেন।
এছাড়া তিনি বলেন, জঙ্গীসংশ্লিষ্টতার অভিযোগে আমেরিকা ও বাংলাদেশ সরকার তাকে ধরিয়ে দেয়ার জন্য যে পুরস্কার ঘোষণা করেছিল সেটি প্রত্যাহার করতে হবে। অন্যদিকে আমেরিকা প্রবাসী বিজ্ঞানী ও লেখক অভিজিৎ রায় হত্যা মামলায় তার বিরুদ্ধে দেয়া মৃত্যুদন্ডের আদেশও বাতিল করতে হবে।
অত:পর ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে তিনি পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে ১৩ বছর পর দেশে ঢোকেন বলে পত্রিকা মারফত জানা যায়। আইনজীবী ব্যারিস্টার সারোয়ারের সহযোগিতায় মামলা প্রত্যাহারের জন্য তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন।
এমতাবস্থায় আল-জাজিরার সাংবাদিক এবং সাবেক সেনা কর্মকর্তা সামি নিয়মিতভাবে সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরীণ অনেক স্পর্শকাতর তথ্য ফেসবুকে প্রকাশ করা অব্যাহত রাখে এবং কয়েকজন সিনিয়র কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিষোদগার করে, যা বর্তমান ও অবসরপ্রাপ্ত অনেকেই মেনে নিতে পারেননি।

সামি ছাড়াও ফ্রান্স প্রবাসী ইউটিউবার পিনাকী ভট্টাচার্য ও আমেরিকা প্রবাসী ইলিয়াছ হোসেন সেনাবাহিনী নিয়ে নিয়মিত বক্তব্য দিচ্ছে। এরা তিনজনই আবার জামায়াতে ইসলামী এবং আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের আস্থাভাজন হিসেবে সুপরিচিত।
তাদের এই পরিকল্পিত কর্মসূচির কারনে জুলাই অভ্যুত্থানের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা জেনারেল ইকবালুর রহিম চৌধুরী ও জেনারেল হাসান নাসিরসহ অনেকের সম্মানহানি হচ্ছে বলে দাবি করা হচ্ছে। লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুস্তাফিজুর রহমানের সর্বশেষ ভিডিও থেকে এসব জানা যাচ্ছে।
এছাড়া বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকারকে বিতর্কিত করে তাকে পদচ্যুত করার দাবি সামনে আনার চেষ্টা করছে। তারা দাবি করছে, জেনারেল ওয়াকার এবং সেনাবাহিনীতে থাকা আওয়ামী লীগের দোসররা ৫ই আগস্ট থেকে অনেক রাজনৈতিক নেতা ও সুবিধাভোগী অন্য পেশার ব্যক্তিদের নানা অন্যায় সুবিধা দিয়েছে, যেমন নিরাপত্তা হেফাজতে রাখা ও সীমান্ত পার হয়ে ভারতে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়া ইত্যাদি।
উল্লেখ্য, ইউনূস সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও সরকারের কূটনৈতিক ও সামরিক সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় চলে গেছে। বাংলাদেশের সামরিক কর্মকর্তারা পাকিস্তান ভ্রমণ করেছে আবার অন্যদিকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ইকরাম সেহগালকে ঢাকায় ফুলেল শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস।

এই কর্মকর্তা ২৬শে মার্চ কালরাত্রির গণহত্যাকে বলেছিলো ব্রিলিয়ান্ট স্টেপ এবং জন্মগতভাবে বাংলাদেশী হয়েও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অংশ হিসেবে গণহত্যায় অংশ নিয়েছিল। ঢাকায় এসে সেহগাল গর্বের সাথে বলেছে যে, ড. ইউনুসের সাথে তার সম্পর্ক অনেক পুরোনো।
উল্লেখ্য, অধ্যাপক ইউনূসের বাবা দুলা মিয়া সওদাগর পাকিস্তান আন্দোলনের অন্যতম সমর্থক ছিলেন এবং তিনি মুসলিম লীগ ন্যাশনাল গার্ডের সদস্য ছিলেন।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.