অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দিনকে দিন অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে। ব্যক্তি বা গোষ্ঠী বা সংগঠন থেকে সরকারের কাছে দাবী জানালে সেটিকে গুরুত্ব সহকারে না দেখে সরকার বিরোধী বা ফ্যাসিবাদের দোসর ট্যাগ দেয়া এবং পুলিশ বা সরকার সমর্থক সংগঠনের সদস্যদের লেলিয়ে দিয়ে নির্মমভাবে দমন করা হচ্ছে।
আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে সরকার আশা করে তাদের পরিকল্পিত সংস্কার কাজ চলাকালে জনগণ ও বিভিন্ন গোষ্ঠীকে মুখ বন্ধ রাখতে হবে এবং তাদেরকে নি:শর্ত সমর্থন দিতে হবে। এরপর সরকার সময়-সুযোগ বুঝে যে সমাধান দেবে সেটিকে মাথা পেতে নিতে হবে। নাহলে…
৮ই আগস্ট শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ও সুশীল সমাজের অন্যতম নেতা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সরকার ক্ষমতা নেয়ার পর শতাধিক রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন পেশাজীবি গোষ্ঠী ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা নানা দাবীতে পথে নেমেছে। তাদের কেউ কেউ সচিবালয়, কেউবা প্রধান উপদেষ্টার অফিস আর কেউবা শাহবাগ বা প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ করে মিডিয়ার মাধ্যমে সরকারের কাছে দাবী পেশ করেছে। এর বিপরীতে সুচিন্তিত সমাধানের চেষ্টা না করে সরকার পুলিশ বাহিনীকে ব্যবহার করে অস্থিরতা দমন করেছে।
অন্যদিকে গার্মেন্টস শ্রমিকরা বকেয়া বেতনের দাবীতে বিভিন্ন শিল্প এলাকায় বিক্ষোভ করেছিল এবং সেনাবাহিনীর গুলিতে এক শ্রমিক নিহত ও অনেকেই আহত হওয়ার পর সেই আন্দোলন থেমে যায়। প্রায় সবক্ষেত্রেই পুলিশী একশনের আগে-পরে দাবীনামা পেশকারীদের আওয়ামী লীগের দোসর ও জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনাবিরোধী তকমা দেয়া হয়েছে।
এছাড়া সচিবালয়ে নিজেরা আগুন লাগিয়ে আমলাদের আন্দোলন মাঠে মারা যায়। কেননা কয়েকজন উপদেষ্টা সাথে সাথে আওয়ামী লীগের দোসরদের প্রতি দোষারোপ করতে থাকে। তার মানে মামলা করে আমলাদের শ্রীঘরে পাঠানোর অজুহাত তৈরি করা হয়। এই ঘটনার আকস্মিকতা ও ব্যাপকতার কারনে জনগণ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ভুলে যায়। যেমন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীর মৃত্যু, তাবলীগের দুই গ্রুপের সহিংসতায় মৃত্যু, আশুলিয়ায় শ্রমিক অসন্তোষ এবং যাত্রাবাড়ীতে তিন কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মারামারি ও লুটপাট ইত্যাদি।
সর্বশেষ রবিবার এবতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষকরা জাতীয়করণের দাবীতে স্মারকলিপি দিতে প্রেসক্লাব থেকে প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয় অভিমুখে পদযাত্রা শুরু করলে শাহবাগ থানার সামনে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। বাধা এড়িয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে, কাঁদুনে গ্যাস ও জলকামান ব্যবহার করে তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। অথচ এই শিক্ষকরা গত ১৯শে জানুয়ারি থেকে নিয়মিতভাবে তাদের দাবী বাস্তবায়ন করতে সরকারকে অনুরোধ করেছেন।
শত শত পত্রিকা, টিভি ও অনলাইন সংবাদ মাধ্যমের উপস্থিতিতে পুলিশের এই অপমানজনক ও বর্বর আচরণে স্তব্ধ সারাদেশ। অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। আহত ৬-৭ জনকে হাসপাতালে নেয়া হয়।
গণঅভ্যুত্থানের চেতনার সরকারের প্রায় ৬ মাস পার হলেও এখনও পুলিশের আচরণ ও পরিচালনার নীতিতে সংস্কারের কোন ছাপ না পড়ার ফলে গণতন্ত্র ও নতুন রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রতিশ্রুতি প্রশ্নের মুখে পড়েছে।
রবিবার পুলিশের এহেন বর্বরোচিত হামলার পর শিক্ষকরা শাহবাগে তাদের অবস্থান জারি রাখেন।





রবিবার মাদ্রাসা শিক্ষকদের উপর পুলিশের বর্বরতার বিরুদ্ধে অনেকেই মুখ খুলতে সাহস না পেলেও ইসলামী ব্যক্তিত্বরা ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। এদের একজন শায়েখ আহমাদুল্লাহ।
তিনি ফেসবুকে লেখেন, “ভাত দেবার মুরোদ নেই, কিল দেবার গোসাই⸺ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসার ক্ষেত্রে এই জিনিসটাই ঘটছে বিগত ৪০ বছর ধরে। সিলেবাস, কারিকুলাম, নীতিমালা⸺সরকার সবই চাপিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু ন্যূনতম জীবন ধারণের মতো বেতনটুকুও দিচ্ছে না। সম্মানীয় শিক্ষকরা যখন অভাব-অনটনের কাছে হার মানেন, একান্ত মানবিক ও যৌক্তিক দাবি আদায়ের জন্যও রাস্তায় নামতে বাধ্য হন⸺এটা জাতি হিসেবে আমাদের জন্য লজ্জার। সরকারের উচিত, এই শিক্ষকদের প্রতি সুবিচার করা, জাতির ৪০ বছরের ভুল শুধরে নেয়া। আশা করি, সরকার সুবেবচনার পরিচয় দেবে।”

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.