প্রায় সাত মাস ধরে আমি মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্যাখ্যার জন্য অপেক্ষা করছি কারণ তারা ২০২৪ সালের ১৫ই জুলাই তারিখে ঢাকায় কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে দুজনের মৃত্যুর মিথ্যা খবর দিয়েছিল। ঢাকার মার্কিন দূতাবাসও একই দিনে বিক্ষোভ সংক্রান্ত একটি সতর্কতা জারি করেছিল।
দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশে হলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সাথে মিছিল নিয়ে আসা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক ও অনুসারীদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা, ইট-পাটকেল নিক্ষেপের প্রেক্ষিতে সন্ধ্যা পর্যন্ত ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের লাঠি দিয়ে পেটানোর ঘটনা আমরা টিভিতে দেখেছি। সেদিন প্রায় ২০০ জন আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নেয়ার খবর আমি পত্রিকায় দিয়েছি। এর প্রতিবাদে আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেয়।
মাঝরাতে তৎকালীন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারের একটি সংবাদ সম্মেলন সম্পর্কে জানতে পারি। তিনি বলেছিলেন: “তাই আমরা ঢাকা এবং বাংলাদেশের আশেপাশে ব্যাপক ছাত্র বিক্ষোভের খবর সম্পর্কে অবগত এবং পর্যবেক্ষণ করছি যেখানে দুজন নিহত এবং শত শত আহত হয়েছে…”
১৫ই জুলাইয়ের ঘটনায় কোনও মৃত্যুর খবর না থাকলেও, বাংলাদেশী সাংবাদিক এবং রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা মিঃ মিলারের গুজব ছড়ানোর নিন্দা জানিয়েছিলেন।
উল্লেখ্য, সেদিন সংঘর্ষের পর এবং মিঃ মিলারের বক্তব্যের আগে সরকারবিরোধী ফেসবুক পেইজ ও প্রোফাইল থেকে ঢাকায় ২-৪ জন এবং চট্টগ্রামে ১জন ছাত্রের মৃত্যুর গুজবে ভরে গিয়েছিল। এছাড়া এই দুটি বিশ্ববিদ্যালয় সহ বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা গণহত্যা চালাচ্ছে বলেও অনেকে গুজব রটাচ্ছিল।
এই গুজবগুলো সুপরিকল্পিতভাবে ছাত্র বিক্ষোভকারী এবং আন্দোলনকে সমর্থনকারী রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মীদের দ্বারা সংগঠিত হয়েছিল বলে মনে করা হচ্ছে।
মি. মিলারের গুজব সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের ভারপ্রাপ্ত মুখপাত্র লিওনার্ড হিল ১৬ জুলাই ইউএনবিকে বলেন যে, তারা আহত ও মৃত্যুর খবর “পর্যবেক্ষণ” করছেন। “আমরা সর্বদা সবচেয়ে সঠিক তথ্য খুঁজছি এবং সত্য উদঘাটনে সাংবাদিকদের কাজকে স্বাগত জানাই।”
এর পর প্রায় সাত মাস কেটে গেছে, এবং আমরা মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বা দূতাবাসের কাছ থেকে ১৫ই জুলাই দু’জনের মৃত্যুর দাবির ব্যাখ্যা পাইনি।
আমিসহ অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন এই গুজব ছাত্র আন্দোলনকে আরও বাড়িয়ে তুলেছিল, যার ফলে পরের দিন দেশব্যাপী বিক্ষোভ মারমুখী আকার ধারণ করে এবং আন্দোলনকারীরা ছাত্রলীগ ও পুলিশকে টার্গেট করে বিভিন্ন জেলায় হামলা করে। ফলশ্রুতিতে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রংপুরে ছয়জন নিহত এবং বহু আহত হন এবং কোটাবিরোধী আন্দোলন সরকার পতন আন্দোলনে রূপ নেয়।
এরপর আর মার্কিন সরকারের পক্ষ থেকে গুজব ছড়ানো না হলেও জামাত-শিবির ও বিএনপির বিভিন্ন ফেসবুক পেইজ, গ্রুপ ও প্রোফাইল থেকে আরও জোরেশোরে গুজব ছড়ানো হয়, যা এই ফেব্রুয়ারি মাসেও চলমান।
আমি মনে করি ভুল স্বীকার বা ব্যাখ্যা দেয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশ উভয় সরকার এবং সাংবাদিক ও গবেষকদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.