২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত সরকারের মদতে অন্তত ৫৪টি উগ্রবাদী সংগঠন এবং ইসলামি এনজিওর আড়ালে বিদেশি জঙ্গি-মৌলবাদী সংগঠন দেশব্যাপী সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক তৈরি করে। সেসময় এমপি-মন্ত্রীদের নির্দেশে ও পুলিশ র্যাবের সহযোগিতায় সারাদেশে ভয়ংকর সব অপারেশন সম্পন্ন করে শত শত মানুষকে হত্যা করে। সরকার প্রথমে জঙ্গীদের অস্তিত্ব স্বীকার না করলেও পরে কয়েকটি দলকে নিষিদ্ধ করতে বাধ্য হয়।
English version: History of Jamaat-linked JMB’s bloody jihad
সাবেক জামায়াত নেতা শায়খ আব্দুর রহমান তার জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) গঠন করেন ১৯৯৮ সালের এপ্রিলে। ১৯৫৯ সালের জন্ম নেয়া আব্দুর রহমানের বাবা আব্দুল্লাহ ইবনে ফজল মুক্তিযুদ্ধের সময় আল-বদর বাহিনীর সদস্য ছিলেন এবং আহলে হাদিস নেতা হিসেবে বেশি পরিচিত। আব্দুর রহমান মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেন এবং পরে মদিনা বিশ্ববিদ্যালয় হতে উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করেন। সৌদি আরবে থাকাকালীন তিনি মিসরভিত্তিক মুসলিম ব্রাদারহুড (এখ্ওয়ানুল মুসলিমিন) সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতেন।
জামায়াত ছেড়ে জেএমবি প্রতিষ্ঠার আগে তিনি ১৯৯৫ সাল থেকে ১৯৯৮ পর্যন্ত হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী (হুজি-বি), আহলে হাদিস ও লস্কর-ই-তৈয়বার সাথে কাজ করেন। জেএমবি’র প্রথম শুরা কমিটির সদস্যরা ছিল খালেদ সাইফুল্লাহ, হাফেজ মাহমুদ, সালাউদ্দিন, নাসরুল্লাহ, শাহেদ বিন হাফিজ ও রানা। বাংলাদেশকে মোট ছয়টি প্রশাসনিক বিভাগে ভাগ করে দাওয়াত, ই’দাদ (প্রশিক্ষণ) ও ক্বিতালের (সশস্ত্র যুদ্ধ) জন্য আলাদা আলাদা ইউনিট করা হয়। এরপর ২০০০ সাল থেকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) ক্যাম্পে কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
তার অনুসারী সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাই ২০০৪ সালে জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ (জেএমজেবি) প্রতিষ্ঠা করে রাজশাহী ও নাটোর এলাকায় অপারেশন চালায়। প্রথমে বিএনপি-জামায়াত সরকার এদের অস্তিত্ব ও কর্মকান্ড অস্বীকার করলেও ২০০৫ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারি জেএমবি ও জেএমজেবিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।
এরপর শরীয়াহ প্রতিষ্ঠার দাবিতে ২০০৫ সালের ১৭ই আগস্ট ৬৩টি জেলায় সিরিজ বোমা হামলা করে জেএমবি। তিনি ২০০৬ সালের ২রা মার্চ গ্রেপ্তার হন এবং পরের বছর ৩০শে মার্চ একটি মামলায় তার ফাঁসি হয়। এরপর প্রকাশ্য জঙ্গী কার্যক্রমে বড় একটি ছেদ পড়ে। জেএমবি’র পরবর্তী আমির মাওলানা সাইদুর রহমান, তার স্ত্রী ও আরও ৩ জন সহ নারায়নগনঞ্জে গ্রেপ্তার হন ২০১০ সালের ২৫শে মে।
২০০২ সালে ৩০শে মে দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুরে ৮ জন জঙ্গি ২৫টি বোমা ও জিহাদি পুস্তকসহ পুলিশের হাতে ধরা পড়লে জেএমবি’র অস্তিত্ব নজরে পড়ে। থানা থেকে নথিপত্র গায়েব হয়ে যাওয়ায় বিচার সম্ভব করতে পারেনি তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। ২০০৩ সালের ১৩ই ফেব্রুয়ারিতে দিনাজপুর শহরে ৭টি বোমা বিস্ফোরণে ৩ জন আহত হয়। তখন তারা নিজেদের জেএমজেবি বলে পরিচয় দিতো।
২০০৫ সালের চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর ও গাজীপুরের আদালতে জেএমবি’র জঙ্গিরা বোমা হামলা চালায়। এসব ঘটনায় বিচারক ও পুলিশসহ বহু সাধারণ মানুষ হতাহত হয়।
একই সময় সারাদেশে গ্রেনেড দিয়ে অপারেশন চালাচ্ছিল হুজির জঙ্গীরা। আর হিজবুত তাহরীরের সদস্যরা দাওয়াতি কার্যক্রমের মাধ্যমে কিশোর ও যুবকদের জঙ্গীবাদে আকৃষ্ট করতে কাজ করতো। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর হিজবুত তাহরীরকে নিষিদ্ধ করে, কেননা তারা ক্ষমতার পট পরিবর্তনের জন্য সেনাবাহিনীকে উস্কে দিচ্ছিল। এছাড়া অন্যান্য দেশী-বিদেশী জঙ্গী গোষ্ঠীর সাথে যোগাযোগ, পরিকল্পনা ও কারিগরি সহায়তা দিতে সমন্বয়ক হিসেবে তারা কাজ করছে।
মুফতী হান্নানের হুজি-বি, একিউআউইএস এবং ২০১৬ সালে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে হামলায় অংশ নেয়া ইসলামিক স্টেটের নেতাকর্মীরা শায়খ আব্দুর রহমানকে বাংলাদেশে জিহাদের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে গণ্য করে।
২০১৬ সালে এসে জেএমবি’র মূল অংশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন মিডিয়ার কাছে পাঠানো এক বার্তায় সংগঠনটির সাম্প্রতিক টার্গেট, অপারেশনের ধরণ ও সক্ষমতা সম্পর্কে একটি ধারণা পাওয়া যায়। জেএমবি জানায়, ২০০০ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত তারা সারা দেশে প্রায় ১,১০০ জিহাদি অপারেশনে অংশ নেয়। এর মধ্যে কয়েকটি আত্মঘাতি হামলা ছিল। এসব হামলায় অন্তত ৭১ জন প্রাণ হারান এবং কয়েক হাজার মানুষ আহত হন। তাদের হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল শিয়া ও আহমদীয়া অনুসারী ও তাদের মসজিদ, হিন্দু পুরোহিত, খ্রিস্টান, পুলিশ, আদালত, এনজিও অফিস, সিনেমা হল, যাত্রাপালা, এবং মাজার ও খানকাহ শরীফ। অবশ্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দাবি, ২০০০-০৫ সালের মধ্যে জেএমবি’র অপারেশনে অন্তন্ত ৬৪ জনের মৃত্যু হয়।
একই ধরণের লক্ষ্যবস্তু ছিল ২০১৫ সালে অপারেশন শুরু করা ইসলামিক স্টেটের। এই দলটি তৈরি হয়েছিল জেএমবি, হুজি ও আল-কায়েদা ভারতীয় উপমহাদেশের সদস্যদের নিয়ে। উল্লেখ্য, আব্দুর রহমানের ফাঁসি ও মুফতি হান্নানের গ্রেপ্তারের পর জেএমবি দুইভাগে বিভক্ত হয়ে একটি অংশ আল-কায়েদা ভারতীয় উপমহাদেশ এবং অপরটি ইসলামিক স্টেটের সাথে যুক্ত হয়। এদের সাথে মিশে যায় হুজি-বি’র সদস্যরা। অনেকেই জিহাদি প্রশিক্ষণ নিয়ে আফগানিস্তান, সিরিয়া ও ইরাকে যুদ্ধ করতে গিয়েছে।
ইসলামিক স্টেটের অনুসারীরা দুই বছরের মধ্যে হলি আরর্টিজানসহ ২৯টি হামলার দায় স্বীকার করে। এসব হামলায় বিদেশী ও ইসকন মন্দিরের পুরোহিতসহ অন্তত ৫৫ জন মারা যান। এছাড়া দায় স্বীকার না করলেও সে সময় একই ধরণের আরও অন্তত ১৫টি হত্যাকান্ড এবং বোমা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা করা হয়, যার মধ্যে শোলাকিয়া ঈদগাহ, মাজার ও কয়েকটি ইসকন মন্দির ও অনুসারীরা উল্লেখযোগ্য।
অন্য দলটি রাজাকারদের বিচারের কাজ শেষের দিকে চলে আসার পর ২০১৩ সাল থেকে ২০১৬ সালের ২৫শে এপ্রিল পর্যন্ত যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবীতে গড়ে উঠা গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী-সমর্থক এবং সেক্যুলার লেখক-প্রকাশকদের টার্গেট করে ১৩টি হামলায় ১১ জনকে হত্যার দায় স্বীকার করে। এছাড়া ২০১৩-১৫ সালের মধ্যে আরও ৭ জনকে হত্যা করে একই মতাদর্শের জঙ্গীরা।
২০২০-২১ সালে গিয়ে সবগুলো জঙ্গী দল মিলে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শরক্বিয়া সংগঠনের মাধ্যমে বাংলাদেশ, ভারতের সেভেন সিস্টার্স ও মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সশস্ত্র জিহাদের জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়।
পুরাতন জেএমবি‘র হামলার তালিকা
# ১৯৯৮ সালের এপ্রিলে সাবেক জামায়াত নেতা শায়খ আব্দুর রহমানের নেতৃত্বে জেএমবি’র শুরা কমিটি গঠিত হয়। সদস্যরা ছিল খালেদ সাইফুল্লাহ, হাফেজ মাহমুদ, সালাউদ্দিন, নাসরুল্লাহ, শাহেদ বিন হাফিজ ও রানা।
# ২০০০-০৫ সালের মধ্যে ১০০-এর বেশি ইসলাম বিরোধী এনজিও অফিসে অপারেশন চালানো হয়।
# তহবিল সংগ্রহের জন্য জেএমবি’র সদস্যরা ২০০২-০৫ সালে বগুড়া, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও নারায়নগঞ্জে ব্র্যাক ও গ্রামীণ ব্যাংকসহ অন্তত ১২টি এনজিওতে ডাকাতি করে।
#২০০৩-০৫ সালের মধ্যে জেএমবি সারা দেশে ৫০টির বেশি যাত্রা ও সার্কাস প্যাভিলিয়নে বোমা বিস্ফোরণ ও সাউন্ড ব্লাস্ট ঘটায়।
# ২০০০ সালে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) ক্যাম্পে জেএমবি’র কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
# ২০০০ সালের শুরুর দিকে দিনাজপুরের পার্বতীপুরে পেট্রোল বোমাসহ ১০-১২ জন জেএমবি সদস্যকে আটক করে এলাকাবাসী। এহসার সদস্য শাহাবুল এই দলের নেতৃত্বে ছিল।
# ২০০১ সালের মাঝামাঝি রাঙামাটির একটি হোটেলে নিজেদের রাখা বোমা বিস্ফোরিত হলে নাসরুল্লাহ নিহত হয় এবং এহসার সদস্য শামীম হোসেন গালিব আহত হয়।
# ২০০১ সালে টাঙ্গাইলে বোমা তৈরির ওপরে আরেকটি প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
# ২০০১ সালেই জেএমবি’র শুরা কমিটি নতুন করে গঠিত হয়। শাহেদ বিন হাফিজ ও রানা জেএমবি ছেড়ে দেয়। ওই সময় শুরা সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় আব্দুর রহমানের ভাই আতাউর রহমান সানি ও ভাইঝি আব্দুল আউয়াল, আসাদুজ্জামান হাজারী ও সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাইকে।
# ২০০১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর শিবিরের সন্ত্রাসীরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পশ্চিমপাড়ায় অবস্থিত শিক্ষকদের আবাসিক এলাকায় ঢুকে অর্থনীতি বিভাগের প্রবীণ অধ্যাপক সনৎকুমার সাহাকে জবাই করে হত্যা চেষ্টা করে। এ ঘটনায় মতিহার থানায় মামলা হলেও পুলিশ কোন সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
# ২০০১ সালের ১লা অক্টোবর বাগেরহাটের ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতা তারাপদ পোদ্দারকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার বাড়িতে হামলা করে আব্দুর রহমান, বাংলা ভাই, হাফিজ মাহমুদ, জেলা শাখার প্রধান লিটন এবং এহসার সদস্য ইখতিয়ার, শরীফ ও আব্দুল মতিন। এক পর্যায়ে এলাকাবাসী বাংলা ভাইসহ ৫ জনকে আটক করলেও পাঁচ মাস পরে সবাই কারাগার থেকে জামিনে বের হয়ে আসে।
# ২০০২ সালের ২৮শে সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরার রক্সি সিনেমা হল ও পার্শ্ববর্তী গুড়পুকুর পাড় এলাকায় অনুষ্ঠিত সার্কাসের অনুষ্ঠানে টাইম বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় জেএমবি’র একটি দল। এতে ২ জন মারা যান ও প্রায় ২০০ মানুষ আহত হন। জেএমবি’র এহসার সদস্য জাহিদুল ইসলাম সুমন ও মিজান এবং জেলা শাখার প্রধান সাইফুল্লাহ এই হামলায় অংশ নেয়।
# ২০০২ সালে দিনাজপুরের ছোট গুরগুলা এলাকায় নিজেদের আস্তানায় বোমা বানাতে গিয়ে নিহত হয় জেএমবি সদস্য বাদল। এ ঘটনায় শুরা সদস্য খালেদ সাইফুল্লাহকে গ্রেপ্তার করা হলেও ২০০৫ সালের জুলাই মাসে সে জামিনে বের হয়ে আসে।
# একই বছর ৭ই ডিসেম্বর ময়মনসিংহ শহরের ৪টি সিনেমা হলে একযোগে শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণের ফলে অন্তত ১৯ জন নিহত হয় এবং শতাধিক মানুষ আহত হয়। শুরা সদস্য সালাউদ্দিন এই হামলায় নেতৃত্ব দেয়।
# ২০০৩ সালের ১৭ই জানুয়ারি টাঙ্গাইলের শফিপুরে ফাইল্যা পীরের মাজারে মেলা চলার সময় বোমা হামলা চালায় জেএমবি। এতে অন্তত ৭ জনের মৃত্যু হয়, আহত হয় শতাধিক মানুষ। শুরা সদস্য আতাউর রহমান সানির নেতৃত্বে এই অপারেশনে অন্যান্যদের মধ্যে ছিল বোমা প্রস্তুতকারী শাকিল ও মোল্লা ওমর এবং এহসার সদস্য শহীদ ও মারুফ ছাড়া আরও ৫ জন।
# এর তিনদিন পর ২০শে জানুয়ারি জয়পুরহাটের কালা উপজেলার বেগুনগ্রামে চিশতিয়া পীরের ৫ জন অনুসারীকে জবাই করে মাজারের মালামাল ও টাকাপয়সা লুট করে নিয়ে যায় জেএমবি’র সদস্যরা। এই হামলায় নেতৃত্ব দেয় বাংলা ভাই। তার সহযোগী হিসেবে ছিল শহীদ, শহিদুল্লাহ, মামুন, হাবিল ও এলাকার কিছু লোক।
# ২০০৩ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারি সাতক্ষীরার ইটাগাছায় পুলিশের একটি টহল দলের উপর হামলা করে জেএমবি’র সদস্যরা। এতে করে ২ জন পুলিশ সদস্য নিহত এবং আরেকজন আহত হয়।
# ২৪শে এপ্রিল জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ীর সানাকৈর এলাকায় হৃদয় রায় নামের এক খ্রিস্টান যুবককে জবাই করে হত্যা করে জেএমবি। সালাউদ্দিনের নেতৃত্বে ৬-৭ সদস্যের একটি দল এই অপারেশনে অংশ নেয়।
# ১৪ই আগস্ট জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল এলাকায় জেএমবি’র একটি প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে পুলিশ অভিযান চালালে জঙ্গীরা পুলিশের ২টি অস্ত্র ও ১টি ওয়্যারলেস সেট লুট করে। সেই রাতে পুলিশ আতাউর রহমান সানি, আব্দুল আউয়াল ও সালাউদ্দিনসহ ২১ জন জেএমবি সদস্যকে গ্রেপ্তার করলেও পাঁচ মাসের মধ্যে তারা জামিনে ছাড়া পেয়ে যায়।
# ২০০৪ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারি হত্যার উদ্দেশ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও লেখক হুমায়ুন আজাদকে বইমেলা থেকে ফেরার পথে টিএসসির কাছে ফুটপাতে চাপাতি দিয়ে কোপানো হয়। পরে জার্মানিতে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় ১২ই আগস্ট তিনি মারা যান। জেএমবি’র আতাউর রহমান সানি এবং এহসার সদস্য মিনহাজ, শামীম, শহিদ, মিনার ও সাইফুল্লাহ সাদ এই হামলায় অংশ নেয়।
# টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার এলাকার কবি ও হোমিও চিকিৎসক মনিরুজ্জামানকে জবাই করে হত্যা করে জেএমবি’র একটি দল। মূলত ইসলাম কিভাবে নারী নিগ্রহে প্ররোচনা ও সমর্থন দেয়, এ নিয়ে তিনি একটি বই লিখেছিলেন, যার নাম ছিল “নারী তুমি মানুষ ছিলে কবে?” তাতে ক্ষুব্ধ হয়ে জেএমবি এই অপারেশন চালায়। এতে অংশ নেয় শুরা সদস্য হাফিজ মাহমুদ, আতাউর রহমান সানি, মিনহাজ শাওন, শহীদ ও শামীম। হুমায়ুন আজাদের উপর হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া কুমিল্লা জেলা কমান্ডার মিনহাজ শাওন ২০০৬ সালে পুলিশী জিজ্ঞাসাবাদে লেখক মনিরুজ্জামানকে হত্যার কথা স্বীকার করে।
# ২০০৪ সালের এপ্রিল-মে মাসে বাংলা ভাইয়ের অধীনে রাজশাহীর বাগমারা ও নাটোরের রাণী নগর ও আত্রাই উপজেলায় তিনটি ক্যাম্প বসায় জেএমজেবি। এগুলোর মধ্যে হামিরকুৎসা ক্যাম্পের দায়িত্বে ছিল বাংলা ভাই, গুরবাড়িয়া ক্যাম্পে আব্দুল আউয়াল ও বাঁশবাড়িয়া ক্যাম্পে হাফেজ মাহমুদ। এ সময় অন্তত ৩৫০টি হামলায় কয়েক ডজন আওয়ামী লীগ ও বামপন্থী নেতাকর্মীকে গুলি ও জবাই করে হত্যা করা হয়। এছাড়া নানাভাবে নির্যাতিত হয় আরও অন্তত কয়েকশো মানুষ। সে সময়কার র্যাব, পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন জেএমবি’র নেতা ও সদস্যদের সর্বতোভাবে সহযোগিতা করেছিল।
# এপ্রিলে বগুড়ার আদমদীঘিতে পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য শহীদকে গলা কেটে হত্যা করে আব্দুল আউয়াল। তাকে সহযোগিতা করে বাংলা ভাই ও হাফেজ মাহমুদ।
# একই সময়ে নওগাঁয় দুইজন হিন্দু সর্বহারা পার্টি সদস্যকে জবাই করে আব্দুর রহমান। এছাড়া আব্দুল আউয়াল আরেকজনকে জবাই করে।
# ২০০৪ সালের ১৮ই সেপ্টেম্বর জামালপুরের হাজীপুর বাজারে খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের নেতা আব্দুল গনি ওরফে গনি গোমেজকে জবাই করে হত্যা করে সালাউদ্দিন, হাফেজ মাহমুদ, শহীদ ও বেলাল।
# একই বছর শেষের দিকে দৈনিক জনকন্ঠ পত্রিকার সম্পাদক এনায়েতউল্লাহ খান মাসুদের উপর হামলার পরিকল্পনা ছিল আতাউর রহমান সানির। কিন্তু পরে সে অপারেশন করেনি জেএমবি।
# ২৪শে ডিসেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ইউনূস আলীকে জবাই করে হত্যা করে জেএমবি’র সদস্যরা।
# ২০০৫ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবসের কনসার্টে সাউন্ড বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় জেএমবি।
# ২৩শে ফেব্রুয়ারি নিষিদ্ধ হয় জেএমবি ও জেএমজেবি।
# মার্চে গাজীপুরে অবস্থানরত আমেরিকার পিস কর্পের সদস্যদের উপর হামলার পরিকল্পনা ছিল জেএমবি’র। কিন্তু তারা স্থান ত্যাগ করায় অপারেশন বাতিল করা হয়।
# ২০০৫ সালের মে মাসে সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের এক বিচারকের উপর বোমা নিক্ষেপ করে জেএমবি আত্মঘাতী দলের সদস্য জামালপুরের আখতার। তবে বোমাটি বিস্ফোরিত না হওয়ায় কেউ হতাহত হয়নি।
# ১৭ই আগস্টের সিরিজ বোমা হামলায় ৬৩টি জেলায় অন্তত ২ জন মারা যায় এবং শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়।
# ৩রা অক্টোবর চট্টগ্রাম, লক্ষ্মীপুর ও চাঁদপুর জেলা আদালতে আত্মঘাতী বোমা হামলায় ১ জন নিহত ও অনেকেই আহত হয়।
# ১৪ই নভেম্বর জেএমবি সদস্যের আত্মঘাতী বোমা হামলায় ঝালকাঠি আদালতের বিচারক সোহেল আহমেদ চৌধুরী ও জগন্নাথ পাঁড়ে নিহত হন।
# এরপর ২৯শে নভেম্বর গাজীপুরের জেলা আইনজীবী সমিতির কার্যালয়ে আত্মঘাতী বোমা হামলায় ৪ জন আইনজীবী ও ৪ জন সেবাগ্রহীতা মারা যায়। একই দিন চট্টগ্রাম আদালতে আত্মঘাতী বোমা হামলায় একজন নিহত ও অনেকেই আহত হয়।
# ১লা ডিসেম্বর গাজীপুর জেলা প্রশাসনের অফিসে আত্মঘাতী বোমা হামলায় একজন নিহত ও অন্তত ৩৫ জন আহত হয়।
# ৮ই ডিসেম্বর নেত্রকোনায় উদীচী ও শতদল শিল্পী গোষ্ঠীর অফিসে আত্মঘাতী বোমা হামলায় অন্তত ৮ জন নিহত হয়।
# ২০০৫ সালের ২রা মার্চ জেএমবি’র প্রতিষ্ঠাতা আব্দুর রহমান এবং ৬ই মার্চ বাংলা ভাই গ্রেপ্তার হয়।
# এরপর ২০০৬ সালের অক্টোবর থেকে ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঢাকার টঙ্গী, উত্তরা, গুলশান ও গাবতলী এলাকায় টহল পুলিশের উপর গ্রেনেড হামলা চালায় জেএমবি।
# ২০০৭ সালের ৩০শে মার্চ ঝালকাঠির বিচারক হত্যা মামলায় আব্দুর রহমান, বাংলা ভাই, আতাউর রহমান সানি, আব্দুল আউয়াল, খালেদ সাইফুল্লাহ ও আত্মঘাতী দলের সদস্য ইফতেখার হাসান মামুনকে ফাঁসি দেয়া হয়।
# এর প্রতিশোধ হিসেবে ১১ই এপ্রিল ঝালকাঠি আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর হায়দার হোসেনকে গুলি করে হত্যা করে জেএমবি’র সদস্যরা।
# ২০০৯ সালের মে মাসে ঢাকার উত্তরায় পুলিশের একটি টহল গাড়িতে গ্রেনেড হামলা চালায় জেএমবি’র সদস্যরা।
# ২০১০ সালের ২৫শে মে জেএমবি’র আমির মাওলানা সাইদুর রহমান ও তার তৃতীয় স্ত্রী নাঈমা আখতারসহ সামরিক শাখার সমন্বয়ক আমির হোসেন ওরফে শরীফ এবং এহসার সদস্য নুর হোসেন সবুজ ও আব্দুল্লাহেল কাফিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। হবিগঞ্জ জামায়াতের সাবেক আমির সাইদুর রহমানের মেয়ের জামাই ছিল জেএমবি’র সুরা সদস্য আতাউর রহমান সানি। তার ছেলে এ এইচ এম শামীম ও বাশার মাহফুজও দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিল।
# ২০১৩ সালে একিউআইএস অপারেশন শুরু করার পর জেএমবি’র মূল শাখাটি আবার সক্রিয় হয় এবং অপারেশনের জন্য ব্রিগেড তৈরি করে। ২১শে ডিসেম্বর ঢাকার গোপীবাগে পীর লুৎফর রহমান ফারুক, তার বড় ছেলে সারোয়ার ইসলাম ফারুক ও চারজন মুরিদকে হাত-পা বেঁধে জবাই করে হত্যা করে জেএমবি’র ইমাম ইবনে তাইমিয়া ব্রিগেড।
# ২০১৪ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারি সালাউদ্দিনসহ তিনজন জেএমবি নেতাকে প্রিজন ভ্যানে হামলা করে ছিনিয়ে নেয় শায়খ নাসরুল্লাহ ব্রিগেডের সদস্যরা। ময়মনসিংহের ত্রিশালের কাছে সংঘটিত এই ঘটনায় একজন পুলিশ নিহত হয়।
# ২৭শে আগস্ট আহলে সুন্নাত জামাতের নেতা ও সুপ্রিম কোর্ট মসজিদের ইমাম নুরুল ইসলাম ফারুকীকে তার বাসায় জবাই করে হত্যা করে আতাউর রহমান সানি ব্রিগেড।
# ২০১৫ সালের ৫ই অক্টোবর হাফেজ মাহমুদ ব্রিগেড ঢাকায় পীর খিজির খানকে জবাই করে হত্যা করে।
# ২০১৬ সালের ২৫শে এপ্রিল খালেদ সাইফুল্লাহ ব্রিগেডের সদস্যরা কাশিমপুর কারাগারের সার্জেন্ট ইন্সট্রাক্টর ও স্বঘোষিত পীর রুস্তম হাওলাদারকে গুলি করে হত্যা করে।
# ৭ই মে রাজশাহীর পবা এলাকার মুদি দোকানী পীর শহিদুল্লাহকে জবাই করে হত্যা করে জেএমবি’র আব্দুল আউয়াল ব্রিগেড।
# সর্বশেষ ২০১৮ সালের ১১শে জুন মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে বিশাখা প্রকাশনীর প্রকাশক ও কমিউনিস্ট নেতা শাহজাহান বাচ্চুকে হত্যার কথা জেএমবি স্বীকার করেছিল।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.